Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News
চির-বসন্তে রঙিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাঙ্গণ
//প্রিয়াস্মিতা ভট্টাচার্য//
প্রকৃতির দখিন দুয়ার, ফাগুন হাওয়া, মধুর অমৃত বাণী, কোকিলের কন্ঠ জানান দেয় ঋতুরাজ বসন্তের। আর এই বসন্ত ঋতুকে কেন্দ্র করে সাড়ম্বরে আয়োজিত হলো আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ‘বসন্ত উৎসব’।
প্রতি বছরের মতো এ বারও দারুন উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় বসন্ত উৎসব।
গত ২ মার্চ, বেলা বারোটা নাগাদ বিভাগের প্রাঙ্গণে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক প্রিয়কান্ত নাথ প্রদীপ প্রজ্জ্বল করে বসন্ত উৎসবের সূচনা করেন। সঙ্গে ছিলেন ড. রমাকান্ত দাস, অধ্যাপক তৃপ্তি পাল চৌধুরী, ড. বরুণজ্যোতি চৌধুরী, অধ্যাপক রিন্টু দাস, অধ্যাপক বিশ্বতোষ চৌধুরী, ড. রামী চক্রবর্তী, ড. দুর্বা দেব, ড. হেমলতা কেরকেটা প্রমুখ। প্রথমেই প্রথম পাঠক্রমের কল্পিতা দেব, অঙ্কিতা শর্মা চৌধুরী, অনন্যা শর্মা চৌধুরী, স্নেহা বণিক, ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্যরা জানান দেন ‘বসন্ত এসে গেছে’। সঙ্গীতের মাধুর্য শীতের রুক্ষতাকে পেছনে ফেলে যেন প্রকৃতিতে রং ছড়িয়ে দেয় গোটা চত্বরে।
বাংলা বিভাগের তৃতীয় পাঠক্রমের শুভব্রতা দাস নৃত্যের কোলাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দখিন দুয়ার খুলে আহ্বান জানান ঋতুরাজ বসন্তকে। বিভাগের তৃতীয় পাঠক্রমের দেবারতি মালাকারের নৃত্যের ছন্দে তখন বাংলা বিভাগের প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে আবিরের রং ছুঁয়েছে ‘নীল দিগন্তে’। প্রথম পাঠক্রমের অনুপম পাল পরিবেশন করেন ‘বসন্ত বাতাসে সই গো….’। ‘রঙ্গিলা রে মন’ পরিবেশন করেন তৃতীয় পাঠক্রমের ঝুলন দেবনাথ ও পূর্বালি দেব। রিহা পালের নৃত্যে তখন চত্বরে ‘বসন্ত এসে গেছে’। প্রজ্ঞাদীপ্তা ভট্টাচার্যের কোলাজ নৃত্য ‘ওরে গৃহবাসী’, ‘ফাল্গুন এসেছে’, ‘দ্বার খুলে’ দেয় ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মনের রঙিন আঙিনার। ততক্ষণে গোটা চত্বরের প্রকৃতিও যেন বসন্তের রং গায়ে মেখে আনন্দে মেতে উঠেছে। আবিরের রং আর নৃত্যগীতের হিন্দোলে আনন্দে মাতোয়ারা তখন গোটা বাংলা বিভাগের প্রাঙ্গণ।
তৃতীয় পাঠক্রমের ছাত্রী হিসাবে এই প্রতিবেদকের গ্রন্থনা এবং সহযোগী কবির মান্না চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রথম পর্বের সমাপ্তি হয়৷ এর আগে বিভাগীয় প্রধান প্রিয়কান্ত নাথ পড়ুয়াদের উদ্দেশে এই বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা বার্তা ব্যক্ত করেন। তাঁর বক্তব্য, ক্লাস রুমে ছাত্রছাত্রীদের দেখা চেনা ও অভ্যস্ত ছবি। কিন্তু অচেনা এ ধরনের পরিবেশ আনন্দ জাগায় মনে। বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু সরকারও।
দ্বিতীয় পর্বে প্রথম পাঠক্রমের ঈশিতা চৌধুরী এবং অনুপম পালের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় শুরুতে ছিল চুমকি রানী মন্ডলের পরিবেশনা। ‘ফাগুন হাওয়ায়’ বাঁধন ছেড়ে প্রাণ যেন প্রকৃতির রং মেখে যায় প্রত্যেক নবীন-নবীনার মনে । ‘ফাগুন লেগেছে শাখে শাখে ‘ পরিবেশন করেন তৃতীয় পাঠক্রমের অঙ্কিতা দেব। প্রথম পাঠক্রমের ছাত্রী অঙ্কিতা শর্মা চৌধুরী এবং অনন্যা শর্মা চৌধুরী কোলাজ নৃত্যে মন ছুঁয়ে যায়। ছাত্র – ছাত্রীদের অনুরোধে অধ্যাপিকা হেমলতা কেরকেটা – র ‘ফাগুন হাওয়ায় ‘ সঙ্গীত পরিবেশন অনুষ্ঠানকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। ‘আজ ফাগুনে’ এবং ‘খেলবো হোলি রং দেবো না’ গানের সঙ্গে প্রথম পাঠক্রমের দেবলীনা দে, অঙ্কিতা দাস এবং প্রজ্ঞাদীপ্ত ভট্টাচার্যের নৃত্যের ছন্দে রং না দেবার কথা বললেও বাংলা বিভাগের প্রাঙ্গনে উপস্থিত পড়ুয়ারা একে অন্যের গায়ে আবির ছড়িয়ে বসন্তকে একাত্ম করে নিয়েছেন। ‘ফাগুনি পূর্ণিমা রাতে’ সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন তৃতীয় পাঠক্রমের ছাত্রীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন প্রথম পাঠক্রমের মধুমিতা দেব। যাপিত জীবনে আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় প্রাপ্তি থেকে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা। সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসা এই যন্ত্রণা নিয়ে বরাকের পল্লী কবিরা বেঁধেছেন শত শত গান, গ্রামীণ লোকসংস্কৃতিতে ধামাইলের মাধ্যমে জড়িয়েছে ব্যবহারিক জীবনেও, প্রতিফলিত হয়েছে তার স্বরূপ। তারও প্রতিফলন ঘটেছে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের আয়োজিত এই বসন্ত উৎসবে। তাইতো তৃতীয় পাঠক্রমের ছাত্রীদের রাধারমন দত্তের ‘এমনও যন্ত্রণার মাঝে’ নৃত্য পরিবেশনায় প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থ রূপ এবং আশার হাতছানি ফুটে ওঠে । তবে গানের সঙ্গে সমবেত অংশগ্রহণে যেন এই বসন্ত উৎসব আবারও আশার রং ছড়িয়ে দেয় মনে-প্রাণে।