Barak UpdatesHappeningsBreaking News
চা বাগানের জমিতে নতুন বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনায় আপত্তি তমাল বণিকের
ওয়েটুবরাক, ৪ জানুয়ারি : চা শ্রমিকদের জীবিকা ধ্বংস করে চা বাগানের জমিতে কেন হবে নতুন বিমান বন্দর, প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস নেতা, শিলচরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক৷ তাঁর জিজ্ঞাস্য, বরাকের তিনটি জেলার মধ্যবর্তী কোনও স্থানের অব্যবহৃত জমি কেন অধিগ্রহণ করছে না সরকার ?
তমালবাবুর বক্তব্য, “বরাক উপত্যকায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপিত হবে জেনে আনন্দ হচ্ছিল, কিন্তু এখন দেখছি বর্তমান বিজেপি সরকার, শুধু ভাঙতেই জানে৷ বরাক উপত্যকায় বিমানবন্দর গড়ে তোলার নামেও চলছে সেই ভাঙারই খেলা।”
পরিবহন বিভাগের যুগ্ম সচিব জে শইকিয়া টিএমভি. ২৯৮/২০১৯(ভিওএল-২)/১১১৪ রেফারেন্স নম্বরের চিঠিতে কাছাড়ের জেলাশাসককে নতুন বিমানবন্দরের জন্য ডলু চা বাগানের জমির অবস্থান খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন ৷ ওই চিঠিতে বাগান মালিককে ৫০ কোটি টাকা দেওয়ার সরকারি অর্থ বরাদ্দের কথারও উল্লেখ রয়েছে। তমালবাবু বলেন, ডলু হলো বরাক উপত্যকার সর্ববৃহৎ চা উৎপাদনকারী বাগান। আর এই চা বাগানের জমিতেই ঐতিহ্যশালী ডলু চা বাগানের অস্তিত্বকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে বিমানবন্দর বানানোর নীল নকশা তৈরি করছে রাজ্য সরকার।
একটি বড় চা বাগানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন হাজার হাজার চা শ্রমিক৷ তাঁরা মূলত চা বাগান সংক্রান্ত কাজেরই দক্ষ শ্রমিক৷ অন্য কোনও কাজে তাঁরা সেভাবে পারদর্শী নন৷ সরকার চা বাগান বন্ধ করে দিয়ে ওই হাজার হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তমালবাবুর বক্তব্য, চা শ্রমিকরা চার-পাঁচ পুরুষ ধরে খুবই কম মজুরিতে কাজ করে চলেছেন৷ সেখানে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করে, উল্টে তাঁদের কর্মভূমিটুকু কেড়ে নিয়ে অসহায় করে তোলার সরকারি অভিসন্ধিকে ধিক্কার জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী সহ স্থানীয় বিজেপি নেতাদের এ ব্যাপারে সমালোচনায় বিদ্ধ করেন তমালকান্তি বণিক৷ বলেন, “পঞ্চাশ কোটি টাকায় লিজের জমিতে লাগানো চা গাছ বিক্রি করে বাগান মালিক চলে যাবেন দূর দেশে, আর চা শ্রমিক ও বাগান কর্মচারীরা বিনা কাজে বিনা চিকিৎসায় অনাহারে, অর্ধাহারে তিলে তিলে মারা যাবেন৷ ঠিক যেভাবে মৃত্যু হয়েছে পাঁচগ্রাম কাগজকলের শতাধিক কর্মীর। মুখ্যমন্ত্রীর আরাম কেদারায় বসে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা না হয় ভুলেই গেলেন ওইসব গরিব চা মজুরদের কথা, কিন্তু স্থানীয় সাংসদ সহ বিধায়করা যারা ভোট চাইতে বার বার ছুটে যান সেই সব বাগান কর্মীদের দুয়ারে, তাঁরা কী করে ভুলে গেলেন ?” নিজের ও দলীয় স্বার্থ বজায় রাখার জন্য স্পিকটি- নট হয়ে থাকার কৌশল নিয়েছেন বরাক উপত্যকার শাসক দলের বিধায়করা, এই অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান তিনি।
তাঁর স্পষ্ট কথা, ডলু চা বাগানে বিমানবন্দর স্থাপনের ভাবনা একটি অদূরদর্শী ভাবনা। প্রস্তাবিত বিমান বন্দর স্থাপিত হলে তা হবে উপত্যকার তিনটি জেলার জন্য একটি মাত্র বিমানবন্দর। আর সেটা যদি ডলু চাবাগানে হয়, তবে সেখানে পৌঁছুতে হলে হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জের প্রত্যেক যাত্রীকে শিলচর শহর হয়ে যেতে হবে। শিলচর শহর একটি আন-প্ল্যানড শহর, রাস্তার পরিসর সরু, এবং শহরে প্রতিদিন যান-বাহনের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে বিমান বন্দরে যাওয়া ও আসার হিসেবে প্রতিদিন যদি আরও পাঁচ-ছশো গাড়ি ভিড় করে তবে শহরের নাগরিক জীবনের যে দুর্বিসহ অবস্থা হবে, তার দায় কে নেবে? বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের যে শহরের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয়ে ন্যূনতম ভাবনাও নেই, ডলু বিমানবন্দর স্থাপনের প্রস্তাবে মাথা নাড়ানোতে সেটাই প্রমাণিত হয়, বক্রোক্তি প্রাক্তন পুর সভাপতির।
তাঁর পরামর্শ, যেহেতু কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি— বরাক উপত্যকার তিন জেলায় বসবাস করা মানুষের কৃষ্টি সংস্কৃতি ভাষার ইতিহাস অভিন্ন৷ সার্বিক জীবনযাপন একই ধরনের৷ তাই এই প্রস্তাবিত বিমানবন্দর তিনটি জেলার মানুষদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা উচিত৷ সে ক্ষেত্রে তিনটি জেলার মধ্যবর্তী কোনওস্থানে করাই শ্রেয়৷ যদি কাছাড় জেলায় হয় তবে শালচাপড়া অঞ্চলের অব্যবহৃত জমি বাছাই করে, সেখানেই বিমানবন্দর স্থাপনের প্রস্তাব দেন তমাল বণিক৷