India & World UpdatesHappeningsBreaking News
চাঁদের মাটিতে আট মিটার এগোল ভারতের প্রজ্ঞান
ওয়েটুবরাক, 25 আগস্টঃ চন্দ্রযান-তিনের অগ্রগতির গতিপ্রকৃতি জানিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কোথাও কোনও বিচ্যুতি নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরো জানাল, পরিকল্পনামাফিকই এগোচ্ছে ভারতের তৃতীয় মনুষ্যবিহীন চন্দ্র অভিযান।
নিঁখুত ভাবে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে প্রথম বার পা রাখে ‘বিক্রম’। তার পর চাঁদের পিঠে বসে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম। তার পর বিক্রমের পেটের কাছে খুলে যায় একটি জানালা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই জানালা দিয়ে গড়গড়িয়ে নেমে আসে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। তার গড়িয়ে নামার ভিডিয়ো তোলে ‘বিক্রম’। ওই ভিডিয়োই শুক্রবার সকালে প্রকাশ করে ইসরো। বিকেলে জানা গেল, চাঁদের মাটিতে নামাই শুধু নয়, গড়গড়িয়ে এগোতেও শুরু করে দিয়েছে রোভার। ইসরো জানিয়ে দিল, ৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে ‘প্রজ্ঞান’। এ বার কেবলই এগোনোর পালা।
শুক্রবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিটে ইসরো সাবেক টুইটার হ্যান্ডেলে জানায়, পরিকল্পনামাফিক রোভার ‘প্রজ্ঞান’ চলাফেরা করতে শুরু করে দিয়েছে। রোভারটি সফল ভাবে ৮ মিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। হাঁটার পাশাপাশি খুঁটিয়ে দেখছে চাঁদের মাটির বৈশিষ্ট্য। খতিয়ে দেখছে পৃথিবীর উপগ্রহের ভূপ্রকৃতিও। প্রজ্ঞানের পে-লোড ‘এলআইবিএস’ এবং ‘এপিএক্সএস’ চালু করে দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ‘এপিএক্সএস’ বা ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’-র কাজ হল চাঁদের মাটির রাসায়নিক গঠন এবং মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা খনিজ ভান্ডার গঠনের বিজ্ঞানসম্মত অনুমান। আপাতত সেই কাজ করতে শুরু দিয়েছে এপিএক্সএস। আরও একটি পে-লোড হল, ‘এলআইবিএস’ বা ‘লেসার-ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’। এই পে-লোডটি চাঁদের মাটি এবং শিলার মৌলিক গঠন অর্থাৎ ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, টাইটেনিয়াম প্রভূতি রাসায়নিক কী রূপে মিশে রয়েছে, তা নিরুপণ করবে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃথিবীবাসীর কাছে এত দিন অনাবিষ্কৃত ছিল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম মহাকাশযান অবতরণ করাল ভারতই। সেই সঙ্গে চাঁদে ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’ করানোর ক্ষেত্রে সফল দেশগুলির ‘এলিট’ তালিকায় জুড়ে গিয়েছে ভারতের নাম। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল কেবল আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের।
চাঁদে যে সময় বিক্রম পা রেখেছিল, তখন সেখানে সবে ভোরের আলো ফুটেছে। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী আগামী ১৪ দিন সেখানে দিনের আলো থাকবে। এই সময়ের মধ্যে চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে রোভার তথ্য সংগ্রহ করবে। ‘বিক্রম’ সেই তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে। সৌরশক্তিতে কাজ করবে ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান’। আপাতত বিক্রম অবতরণস্থলেই দাঁড়িয়ে থাকবে। ভারত থেকে যাবতীয় বার্তা সরাসরি পৌঁছবে বিক্রমে। তার পর ‘বিক্রম’ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সেই বার্তা বেছে প্রয়োজন অনুসারে পাঠাতে থাকবে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানো রোভার প্রজ্ঞানে। অর্থাৎ, ভারতের মাটিতে বসে বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রণ করবেন চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়ানো রোভারটিকে। এ ছাড়াও আরও একটি কাজ করে যাবে ‘বিক্রম’— তা হল গোটা পরিস্থিতির প্রতি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা। ঠিক যে ভাবে বিক্রমের পেট থেকে ‘প্রজ্ঞান’ গড়িয়ে নেমে চলতে শুরু করে চাঁদের মাটিতে, সে ভাবেই রোভারের প্রতি মুহূর্তের নড়াচড়ার স্থির এবং চলচ্চিত্রও ধরে রাখবে সে। ইসরো আরও জানিয়েছে, প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার মডিউল এবং রোভারের সমস্ত পে-লোডই কাজে নেমে পড়েছে। অর্থাৎ, ইসরোর বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা মতোই চাঁদের মাটিতে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে চন্দ্রযান-৩।