Barak UpdatesHappeningsBreaking News
চরম অব্যবস্থায় গোলদীঘি মল, বন্ধেরই আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা
ওয়েটুবরাক, ১০ জুলাইঃ পুর বোর্ড থাকুক কি অফিসার কর্তৃক পরিচালিত হোক শিলচর পুরসভা, গোলদীঘি মলের অবস্থার কোনও পরিবর্তন নেই। একের পর এক সমস্যা বেড়ে চলেছে। এসি নিয়মিত চালানো হয় না, চালালেও ঠাণ্ডাবোধ হয় না। চলমান সিড়ি অধিকাংশ সময় চলে না। বোরিং থেকে সংগ্রহ করে যে জল সরবরাহ করা হয়, তা মুখে তোলা দূরে থাক, হাতে নিতে ঘেন্না হয়। কিন্তু ক্যাম্প চার্জ, বিদ্যুতের বিল নিয়মিত নিচ্ছে পুরসভা। বরং কোনও কারণে সামান্য দেরি হলে ফাইনও আদায় করা হয়।
এই অবস্থায় ব্র্যান্ডেড কোম্পানির যে সব স্টল ছিল, অনেকগুলিই চলে গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এলেনসুলি, রিভাইজ, টার্টল, পেপে, সাব-ওয়ে, এডিডাস, ইউসিবি। এখনও যে কয়টি কোম্পানির স্টল রয়ে গিয়েছে, তারাও যাব-যাব করছে। ব্র্যান্ডেড কোম্পানির অধিকাংশ স্টল চলে যাওয়ায় গোলদীঘি মলে অন্যান্য দোকানেও বিক্রি কমে গিয়েছে। এসি, পানীয় জল, শৌচাগার, চলমান সিড়ি ইত্যাদি সুবিধা ঠিকঠাক না পেয়ে মানুষ ক্রমে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ভিসা অফিস গোলদীঘি মলে স্টল নেওয়ায় দেশ-বিদেশের মানুষ আসেন, কিন্তু তাদেরও এসি সমস্যায় হাপিত্যেশ করেই বিদায় নিতে হয়। এইভাবে চলতে থাকলে মলটি বন্ধ হতে বেশিদিন লাগবে না বলেই আশঙ্কা করছে গোলদীঘি মল মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা মল পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও একটি অশুভ চক্র পুরকর্তাদের মাথায় চেপে বসেছে। সে জন্য কিছু দোকান মাসের পর মাস বিল না মেটালেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। কিয়স্কগুলির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরোলেও তাদের সরানো হচ্ছে না, ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে না। অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা দীপন দেওয়ানজি, সভাপতি অমৃত পাল, সাধারণ সম্পাদক অভীক ধর ও সহসভাপতি বিজন দত্ত তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দশ বছর ধরে তারা সুষ্ঠুভাবে মল পরিচালনার দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু কোনও কালেই সে সব কর্মকর্তারা কানে তুলছেন না। ক্যাপসুল লিফটে একটি ফ্যান লাগানোর কথা বলছেন দুই বছর ধরে। বাহাত্তরটি সিসিটিভি থাকলেও কাজ করে না একটিও।
এ সবের চেয়েও ভয়াবহ বিপদের ব্যাপারে তাঁরা প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে সতর্ক করে দেন যে, কোনও কারণে আগুন লেগে গেলে ক্রেতা-বিক্রেতা কতজনের কী বিপদ হবে বলা মুশকিল। কারণ অগ্নি নির্বাপনের কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেই প্রেমতলার এই মলে।
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য-কর্মকর্তা গোবিন্দ কংসবণিক জানান, বাতায়নের সামনের জায়গায় আগে বিনা মাশুলে অনুষ্ঠান হতো। পরে সামান্য একটা অর্থ নেওয়া হতো। এখন তিন ঘণ্টায় আয়োজকদের কাছ থেকে ৪৪০০ টাকা নেওয়া হয়। এর পরও মল উন্নয়নের ব্যাপারে কথা বললেই জবাব মেলে, টাকা নেই। এমনকী জল তোলার মোটর, ফিল্টার নষ্ট হয়ে পড়েছে, টাকার অভাবে মেরামত করতে পারছে না মলের অভিভাবকরা। এমনই করুণ অবস্থা যে, শৌচাগারের দরজায় ছিটকিনি নেই।
ব্যবসায়ীরা একযোগে অভিযোগ করেন, অত্যন্ত বাজে হাউসকিপিং। পুরসভার তরফে যিনি মল দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁর যে কোনও ক্ষমতা নেই, তা স্পষ্ট। তাই তিনি কোনও কথা শোনার আগেই অন্যদের দিকে ঠেলে দেন। মন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বরুয়া, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, জেলাশাসক রোহনকুমার ঝাও কোনও রহস্যজনক কারণে তাদের সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। বলেন, মন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বরুয়া আশ্বাস দিয়েই দায় সেরেছেন, দীপায়ন চক্রবর্তী ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথা বলেও ডাকেননি, জেলাশাসক ভাড়াবৃদ্ধির সুপারিশ করে তাঁদের আরও সমস্যার দিকে ঠেলে দেন।
দীপনবাবুর কথায়, প্রতিষ্ঠালগ্নে এটি ছিল উত্তরপূর্বের সর্ববৃহত মল। এমন অবস্থানে যে, এর বিরাট সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু গত দশ বছরে ঘটেছে উল্টোটা। এখন সব মিলিয়ে এই মলে পরিষেবা তলানিতে ঠেকেছে। পিপিপি মডেলে দেওয়া হলে তাঁরা কিছুটা আশ্বস্তবোধ করবেন বলে মনে করলেও এই প্রস্তাবে সাড়া মিলছে না।
এ সবের মূল কারণ মলকে কুক্ষিগত করে রেখেছে যে চক্র, এরা নানা ভাবে একে লুটেপুটে খাচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসকরা পুরপ্রশাসকেের দায়িত্বে থাকলেও তাঁরা ওই চক্রের হাতের পুতুলে পরিণত বলেও মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের গুরুতর অভিযোগ।