Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ক্যানসারে ভুগলেও করোনার চিন্তাতেই মারা গেলেন মা, বললেন মঙ্গলি দাসের ছেলে ঝিন্টু
৷৷ঝিন্টু দাস৷৷
সকালে আইসিইউ-র সামনে দাঁড়িয়ে মা (মঙ্গলিরানি দাস)-এর মুখটা একবার দেখতে পেয়েছিলাম৷ পরে প্যাকেটে ঢুকিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাবে বলে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ এমনই দুর্ভাগা আমি যে, মায়ের শেষযাত্রায় যেতে পারছি না৷ নিজেও করোনা আক্রান্ত বলে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন৷ কোনও লক্ষণ নেই আমার শরীরে৷ ডাক্তারদের বলি, মায়ের অন্ত্যেষ্টির জন্য আমাকে যেতে দেওয়া হোক৷ রাজি হলেন না৷
মায়ের শারীরিক সমস্যার শুরু বছর দেড়েক আগে৷ পেটের ব্যথা৷ প্রচণ্ড যন্ত্রণা৷ অনেক চিকিৎসা হল এখানে-ওখানে৷ পরে আমরা দিল্লি চলে যাই৷ এইমসে৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা হল, গলব্লাডারে পাথর৷ অপারেশন করাতে হবে৷ ৫ এপ্রিল অপারেশন৷ ফিরে আসি তখন৷ কিন্তু মায়ের পেটের ব্যথা এত বেড়ে গেল যে, ওই তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা গেল না৷ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮ মার্চ গিয়ে দিল্লি পৌঁছাই৷ আবার শুরু হয় পরীক্ষানিরীক্ষা৷ ডাক্তাররা জানালেন, তাঁর ক্যানসার৷ ফলে অপারেশনের দরকার নেই৷ ওষুধপত্র লিখে দিয়ে বললেন, বাড়ি নিয়ে যাও৷ সবার সঙ্গে থাকলে ভালই থাকবেন৷
কিন্তু আসব কী করে! তখন যে লকডাউন৷ বিমান চলাচল শুরু হলে ২ জুনের টিকিট পাই৷ শিলচরে এসে নামলে যার যার জেলার গাড়িতে উঠতে বলা হল৷ ওই গাড়িতে ধলেশ্বরী এলে আমাদের লালারস সংগ্রহ করা হয়৷ সেখানে আমাকে বলা হল সরকারি কোয়রান্টাইনে যেতে, মা হোম কোয়রান্টাইনে৷ আমি আপত্তি করি৷ আমাদের একসঙ্গে থাকার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলি৷ দিল্লির কাগজপত্র দেখাই৷ পরে দুইজনকেই হোম কোয়রন্টাইনে থাকতে বলা হয়৷ ৬ জুন দুপুরে আচমকা অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে দাঁড়ায় বক্রিহাওর প্রথম খণ্ডে, আমাদের বাড়ির গেটে৷ কোভিড পজিটিভ বলে দুজনকেই তুলে আনা হয় শিলচর মেডিক্যাল কলেজে৷
এ বার মাকে ভেঙে পড়তে দেখলাম৷ ক্যানসারের কথা জেনেও এতটা চিন্তা করেননি৷ করোনার দুশ্চিন্তায় তিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলেন৷ রাতে ঘুমোতে পারতেন না৷ ৮ জুন রাতে ফের পেটের ব্যথা৷ ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাইনি৷ সারা রাত কাতরালেন৷ ৯ জুন তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডেরই আইসিইউতে ভর্তি করা হয়৷ আজ সেখানেই ১০টা ৪৭ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মাত্র ৫৩ বছর বয়সে সকল মায়ামমতা ছেড়ে চলে গেলেন মা৷
আমার বাবা রেলে চাকরি করতেন৷ বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত৷ আমরা চার ভাই, এক বোন৷ সবাই এখানেই৷ এর পরও জানি না, তারা অন্ত্যেষ্টিতে অংশ নিতে পারবে কিনা৷ আমি তো পারছি না! হায়রে কপাল আমার!
(ঝিন্টু দাসের সঙ্গে টেলিফোনে কথাবার্তা হুবহু এখানে তুলে ধরা হল৷)