Barak UpdatesHappeningsBreaking News

কোভিড আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকারেও অর্থ দাবি শিলচর শ্মশানে!

রশিদ চাইতেই শেষমেষ ফিরিয়ে দেওয়া হল টাকা

৪ সেপ্টেম্বর: কোভিড পজিটিভ মৃতদেহের সৎকার করতেও কি এবার শুরু হয়েছে টাকা নেওয়া? সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে এবং খরচে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকার করা হলেও শিলচর শ্মশানে গোপনে এর বিনিময়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে মৃতের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। এমনকি এভাবে কোভিড পজিটিভ মৃতদেহ সৎকার কে ঘিরে শ্মশানে শুরু হয়েছে জনা কয়েক মুনাফালোভী লোকের অশুভ আঁতাত ! বৃহস্পতিবার রাতে শিলচর শ্মশানে এক কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকারের পর তার পরিবারের কাছে অর্থ দাবি করা হয়। চাওয়া হয় ২ হাজার টাকা। শিলচর শ্মশান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত পদ্মনগর বিলপারের অস্থায়ী বাসিন্দা গোপিকা দে এর জামাতা গোপাল পাল।

বিলপারের স্থায়ী বাসিন্দা গোপাল পাল জানিয়েছেন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে তার শশুর গোপিকা দে গত ৩১ আগস্ট মারা যান শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এরপর যথারীতি করোনা বিধি মেনে কাছাড় জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী গোপিকা দে এর মৃতদেহ সৎকারের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে মেডিক্যাল এর মর্গ থেকে শিলচর পুরসভার স্বর্গ রথে করে নিয়ে আসা হয় শিলচর শ্মশানে। যথারীতি শ্মশানে উপস্থিত এনজিওর আপদ মিত্ররা সরকারি ২ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মৃতের দাহ প্রক্রিয়া শুরু করেন।

সৎকার কাজ যখন প্রায় শেষের পথে তখন শিলচর শ্মশানের কর্মী রাজু আচার্যের সঙ্গে দেখা করে মৃত গোপিকা দে এর জামাতা গোপাল পাল তাকে কিছুটা বকশিশ দিতে চান। তখন রাজু আচার্য জানিয়ে দেন মৃতদেহ সৎকারে যে কাঠ, বাঁশ এবং’লেবার চার্জ’ লেগেছে ওইসব কিছু বাবদ ২ হাজার টাকা দিতে হবে। গোপাল পাল আরও জানান, এভাবে কোভিড মৃতদেহ সৎকারে টাকা চাওয়ায় প্রথমেই তারা অবাক হন। কিন্তু দর কষাকষি করে শেষমেষ রাজু আচার্যের হাতে ১ হাজার ৯৫০ টাকা দিয়ে দেন তিনি। কিন্তু তার মনে লেগে যায় খটকা। সরকারি উদ্যোগে যেখানে মৃতদেহ পোড়ানো হচ্ছে, সেখানে শ্মশানের কর্মী এর বিনিময়ে কেন টাকা চাইবেন। সরকারি নিয়মে তো সৎকারের পুরো খরচ বহন করছে সরকার অর্থাৎ জেলা প্রশাসন।

শিলচর শ্মশানের কর্মী রাজু আচার্য টাকা চেয়ে নিয়ে নেওয়ায় হতভম্ব গোপাল পাল বিষয়টি জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করেন তাদের ৯ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কমিশনার রঞ্জন রায়ের সঙ্গে। ঘটনাটা শোনামাত্রই রঞ্জন রায় ফোন করে রাজু আচার্যের কাছে জানতে চান মৃতদেহ সৎকারের খরচ হিসেবে গোপাল পাল এর কাছে তিনি কেন ২ হাজার টাকা চাইলেন। রঞ্জন রায় সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকারে মৃতের পরিবার কে যে খরচ দিতে হয় এ সংক্রান্ত জেলা প্রশাসনের কিংবা জেলাশাসকের দেওয়া কোনও নির্দেশ কি তার কাছে রয়েছে। এর জবাবে রাজু আচার্য কোনও রা কাড়েন নি। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় অবৈধভাবে মৃত ব্যক্তির পরিবারের মানসিকতার ফায়দা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে ওই অর্থ।

প্রাক্তন কমিশনার রঞ্জন রায় তখন শ্মশান কর্মী রাজু আচার্য কে বলেন, মৃতের পরিবারের লোকের কাছ থেকে যে ১৯৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে এর রশিদ দিতে হবে। রশিদে লেখা থাকতে হবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত গোপিকা দে-র সৎকারের জন্য নেওয়া হয়েছে ১৯৫০ টাকা। সঙ্গে লেখা থাকতে হবে মৃত্যুর কারণ। তিনিও সাফ বলেন, রশিদ না দিলে শ্মশান ছেড়ে যাবেন না মৃতের আত্মীয়রা। এ নিয়ে রাজু আচার্যের সঙ্গে মোবাইলে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় রঞ্জন রায়ের। রঞ্জন বাবুর এই কৌশলে চাপে পড়ে ডিসি পর্যন্ত জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে শেষমেষ টাকা ফিরিয়ে দিতে হয় রাজু আচার্যকে।

তবে অর্থ ফিরিয়ে দিলেও কোভিড মৃতদেহ সৎকারকে ঘিরে শ্মশানে যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার রাতে। রঞ্জন রায় বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সাত্তাওয়ানের সঙ্গে দেখা করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন। রঞ্জন বাবুর সন্দেহ, ওই অশুভ আতাতে যুক্ত ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই এর আগে আরও অন্যান্য কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকারের সময় শ্মশানের ওই কর্মী কে বাধ্য হয়ে চাপে পড়ে টাকা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজু আচার্য সংবাদমাধ্যমের কাছে টাকা নেওয়ার ঘটনাটি স্বীকার করেছেন। এবং বলেছেন পরে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও। তবে রাজু একা নয়, এই আঁতাতে শ্মশান এর ভেতরের তথা সরবরাহকারী থেকে শুরু করে বাইরের আরও অনেকেই যুক্ত রয়েছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রঞ্জন। তিনি বলেছেন বিষয়টি খোলাসা করে তবেই ছাড়বেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker