Barak UpdatesHappenings

কেমন কাজ করছে কান্নানের হাসপাতাল, দেখতে এলেন আরেক ম্যাগসাইসাই জয়ী

ওয়েটুবরাক, ১৬ জুলাইঃ বাইশ বছর আগে তিনি রমন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হয়েছিলেন। দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটে যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ ফিরেছে, তাতে তাঁর বিরাট অবদান। তাই শান্তির জন্য ২০০২ সালে এশিয়াশ্রেষ্ঠ ওই পুরস্কার লাভ করেন ভেনারেবল পমনিয়ম সুনিম। এ বারের ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেই সদ্য ম্যাগসাইসাই জয়ী এক চিকিৎসকের কথা জেনে বিস্মিত হন, যাঁর মূল লক্ষ্য, অর্থের জন্য কোনও ক্যানসার রোগী যাতে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ না হারান। সুনিম  নিজে এগিয়ে গিয়ে কখা বলেন ডা. রবি কান্নানের সঙ্গে। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি গত শুক্রবার চলে এলেন শিলচরে, কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে।

 

কেমন দেখলেন কান্নানের ক্যানসার হাসপাতাল? কোরিয়ার হাসপাতালের তুলনা টেনে সুনিম বললেন, আমাদের দেশে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে বাড়ির মানুষদের দেখতে দেওয়া হয় না। সপ্তাহে মাত্র একদিন একটু সময়ের জন্য পরিবারের সদস্যরা ভেতরে ঢুকতে পারেন। তাই অসুস্থ হলেও কেউ ভয়ে হাসপাতালে যেতে চান না।  এখন অবশ্য অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবারের একজনকে রোগীর সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়। কিন্তু কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে এসে তিনি থ বনে যান। এখানে যে শুধু দেখতে বা থাকতে দেওয়াই নয়, রোগীর সঙ্গে যিনি থাকছেন, তাঁরও থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে হাসপাতাল! এমনকী, রোগীর সঙ্গে থাকার দিনগুলিতে হাসপাতালেই তাঁর কর্মসংস্থান করা হয় ! সুনিম জানান, তাঁর বিস্ময় মাত্রা ছাড়ায়, যখন জানতে পারেন, এলাকার মানুষ চাঁদা তুলে এমন একটা ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করে ফেলেছেন।

তাঁর কথায়, এর একটা ‘সাইকোলজিক্যাল অ্যাফেক্ট’ রয়েছে। কম্যুনিটি হাসপাতালের কথা ভেবেছে, হাসপাতাল কম্যুনিটির কথা ভাবছে। তাই রোগীরা এখানে ভর্তি হয়েও বাড়িতে থাকার মতো পরিবেশ পান, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই পরিবেশ, এই বোধই রোগীকে অনেকটা সুস্থ করে তোলে।

বৌদ্ধভিক্ষু সুনিম ওরফে সুখো চইয়ের কাজের জায়গাও কম বিচিত্র নয়। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া দুই দেশ যখন তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত, তিনি বুদ্ধের বাণী নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটেছেন। উভয় পক্ষকে বলেছেন, যুদ্ধ করো না, যুদ্ধ কোনও সমাধান নয়। সে জন্য একসময় তাঁকে কারাবন্দি থাকতে হয়, সইতে হয় চরম শারীরিক নির্যাতন। মুক্তির পরেও ওই একই কথা তাঁর মুখে। শেষে ওই পথেই শান্তি ফিরেছে দুই কোরিয়ায়।

সুনিম কোরিয়া ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন, শান্তির বাণী প্রচার করছেন। শিলচরে এসেও বললেন, সমস্যা কোথাও নিজে থেকে আসে না। মানুষই সমস্যাকে ডেকে আনে। ফলে মানুষের কাছেই সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। পৃথিবীতে কোনও মানুষ একটু বেশি সুখী, কেউ একটু কম, তা নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যে কোনও পরিস্থিতিকে মানিয়ে চলাটাই হচ্ছে আসল সুখ-সূত্র। আর সুখ আসে কেউ সঙ্কটে পড়লে মনেপ্রাণে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারলে। অন্যের পাশে দাঁড়ানোকে তিনি মানুষের কর্তব্য বলে উল্লেখ করেন।  তাই বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি।

মানুষকে চাপমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে সুনিম বলেন, অতিরিক্ত চাপ থেকেও ক্যানসার হতে পারে। চাপমুক্ত থাকার উপায় কী? ৭১ বছরের সুনিমের নিদান, কোনও পরিস্থিতিতেই ঘাবড়ে যেতে নেই। বরং তা থেকে কী করে বেরিয়ে আসা যায়, সেকথা ভাবতে হবে।  অজ্ঞতা থেকেও ভয়ভীতি বেড়ে যায়, অহেতুক চাপবোধ হয়। তাই নানা বিষয়ে জানতে হবে, অজ্ঞতা দূর করতে হবে।

শনিবার কাছাড় ক্যানসার হাসপাতাল সোসাইটি আয়োজিত বিশেষ বক্তৃতানুষ্ঠানে ২০০২ সালের ম্যাগসাইসাই জয়ী ভেনারেবল পমনিয়ম সুনিম যখন ধীর-স্থির কণ্ঠে দোভাষীর সাহায্যে তাঁর মনোভাব প্রকাশ করছিলেন, তখন গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে একপাশে দাঁড়িয়ে থেকে বিস্ময়ভরে তাঁর কথা শুনে গেলেন ২০২৩ সালের ম্যাগসাইসাই জয়ী ডা. রবি কান্নান। আর শিলচর শহরের মানুষ দেখলেন এক সভাকক্ষে দুই-দুই ম্যাগসাইসাই জয়ীকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker