NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsCultureBusinessTourismBreaking News
কুশিয়ারার জলবণ্টনের আগে ২৯ অক্টোবর থেকে তিনদিনের শিলচর-সিলেট উৎসব
ওয়েটুবরাক, ২৪ সেপ্টেম্বর : কুশিয়ারার জলবণ্টন নিয়ে মৃদু আপত্তি উঠতেই বরাকবাসীর সামনে নতুন উৎসবের বার্তা দিলেন শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়। জানালেন, “দুই দেশের যৌথ ইতিহাস রয়েছে। ভৌগোলিক সীমারেখায় আমাদের খণ্ডিত করা যায় না। ফলে সীমারেখা উপেক্ষা করেই অন্যান্য বিষয় নিয়ে চর্চা করতে হবে।”
শনিবার শিলচরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামসুল আরেফিনও শোনালেন, “এ বার ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি, আর বাংলাদেশ জন্মের ৫০ বছর। গত বছরও আমরা একযোগে বাপুজির দেড়শো বছর এবং বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ পালন করেছি।” তাঁর কথায়, “দুই দেশের এই আত্মিক সম্পর্ক একদিনে গড়ে ওঠেনি, হাজার বছরের। সীমারেখা দিয়ে একে ভাগ করা যায় না। বরাকের সঙ্গে সিলেটের আত্মার সম্পর্ক।”
এই প্রেক্ষাপটেই আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে তিনদিনের শিলচর-সিলেট উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই দেশের প্রতিনিধিদ্বয়। এই ভাবনার উৎস জানাতে গিয়ে আয়োজকদের পক্ষে দীপঙ্কর ঘোষ বললেন, শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সফরসঙ্গী হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন৷ তখন সেখানকার মানুষের ভারতপ্রীতি দেখে এই ধরনের এক উৎসবের কথা তাঁর মাথায় আসে। রাজদীপ জানান, ভারত সরকারের কাছে প্রস্তাবটা রাখতেই সাদরে গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকারও মুহূর্তে সায় দেয়। দুই তরফের আলোচনায় স্থির হয়, সাংগঠনিক দায়দায়িত্ব পালন করবে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্ত ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ এবং বাংলাদেশ সরকারের ‘বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিয়নাল স্টাডিজ’। আসাম সরকারের শিল্প, বাণিজ্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী বিমল বরাকে সভাপতি করে সাংগঠনিক কমিটি তৈরি করা হয়েছে। পরিবহন, আবগারি ও মৎস্য দফতরের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা রয়েছেন সদস্য হিসেবে।
ডা. রাজদীপের কথায়, দুর্গাপূজা, লক্ষীপুজা, কালীপূজা, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া একের পর একের উৎসবের আবহেই অনুষ্ঠিত হবে শিলচর-সিলেট উৎসব। তাতে অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মুমিন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনসি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, শিক্ষা দফতরের উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং অসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মেহবুব আলি। তিনদিনের উৎসবে ভারতীয় অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন আসামের রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, মিজোরামের রাজ্যপাল হরিবাবু কাম্বমপতি, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি, পর্যটন ও ডোনার মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি, বন্দর, জাহাজ, জলপথ ও আয়ুষ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, সামাজিক ন্যায় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। এ ছাড়াও, দুই দেশের শিল্পপতি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদরাও উৎসবে আসবেন, নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। তিনদিনের উৎসবে থাকবে আলোচনা, সাহিত্য সভা, ফুড ফেস্টিভ্যাল, কুটির শিল্প প্রদর্শনী ইত্যাদি। আলোচনায় শিল্প, বাণিজ্যের সঙ্গে নদী এবং জলবণ্টন ইস্যু নিয়েও চর্চা হবে, জানিয়ে দেন সাংসদ রায়। গুরুত্ব পাবে যোগাযোগের বিষয়টিও। রাজদীপ বলেন, জলপথে বাংলাদেশ হয়ে পণ্য বরাকে পৌঁছানোর পরিকল্পনায় মেঘনা নদীতে ৩৯০ কোটি টাকা খরচ করে ভারত সরকার ড্রেজিং করাচ্ছে। মহীশাসন-শাহবাজপুর রেললাইনে পণ্য পরিবহনের জন্যও বাংলাদেশে রেললাইন আপগ্রেড করা হচ্ছে। আরেফিনের বক্তব্য, এ বার যদি বিমানেও শিলচরকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তবে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
কিন্তু শিলচর-সিলেট উৎসব নিয়ে আগেভাগে সব জানানোর ব্যবস্থা হলো, কুশিয়ারা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কি এমন কিছু করা যেত না? নিদেনপক্ষে এই চুক্তির কী প্রভাব বরাকে পড়বে, সে সমীক্ষা কি হয়েছে? সাংসদ রাজদীপ রায় খোলামেলাই বললেন, “সমীক্ষার ব্যাপারটা আমি জানি না।” তবে আশ্বস্ত করেন, “কুশিয়ারার জলবণ্টন নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ে। নানা দিক থেকে এতদিন চর্চা হয়েছে। ফলে ভারত সরকার এমন কিছু করবে না, যাতে বরাক উপত্যকায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।”