Barak UpdatesHappeningsBreaking News

কালাইনে বন্দিমৃত্যু, এসআই নারায়ণ তামুলির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ওয়েটুবরাক, ২ সেপ্টেম্বর : কালাইন পুলিশ ফাঁড়িতে ২০০৭ সালে পুলিশের হেফাজতে মতাহির আলি তাপাদারের মৃত্যুতে দায়ের হওয়া মামলায়  তৎকালীন ফাঁড়ি ইনচার্জ নারায়ণ তামুলির সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল শিলচরের জেলা ও দায়রা আদালত৷ সঙ্গে দশ হাজার টাকা জরিমানা৷ পাশাপাশি মৃত মতাহির আলির পরিবার ক্ষতিপূরণের জন্য হাই কোর্টে আবেদন জানাতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে৷

আজ সোমবার অতিরিক্ত জেলা বিচারক নারায়ণ উপাধ্যায় এই রায় ঘোষণা করেন৷ তিনি সাব-ইন্সপেক্টর তামুলিকে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েও গ্রেফতার-পরবর্তী কারাবাসের দিনগুলিকেও হিসাবে ধরতে বলেন৷

গত ২৭ আগস্ট বিচারক উপাধ্যায় এই মামলায় তামুলিকে দোষী বলে ঘোষণা করেন৷ আর এক অভিযুক্ত কনস্টেবল রমজান হোসেন চৌধুরীকে বেকসুর খালাশ করে দেন৷

ঘটনার সূত্রপাত দুই প্রতিবেশী শিশুর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে৷ পরে দুই অভিভাবক মতাহির আলি তাপাদার ও সাহাবুদ্দিনের মধ্যে মারপিট বেঁধে যায়৷ সাহাবুদ্দিনের এজাহারের ভিত্তিতে পুলিশ ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ৩৮ বছরের যুবক মতাহিরকে গ্রেফতার করে৷
তাঁর স্ত্রী আলিমুন্নেসা জানান, তখন রোজা চলছিল৷ সন্ধ্যায় তিনি লকআপেই তাঁকে ইফতার করান৷ পরে ফাঁড়ি ইনচার্জ নারায়ণ তামুলির কাছে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন৷ ইনচার্জ তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন৷ নইলে মেরে ফেলারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন আলিমুন্নেসা৷ কিন্তু দিনমজুরের স্ত্রীর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি৷ তবু ধারদেনা করে কিছু টাকা নিয়ে পরদিন সকালে ফাঁড়িতে গিয়ে দেখেন, মতাহিরের অবস্থা সঙ্কটজনক৷ তিনি নড়তে পারছেন না, কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে৷ সারারাত তাকে তামুলি ও দুই কনস্টেবল মারপিট করেছে বলে জানান৷ পেটে খুব কষ্ট হচ্ছিল৷ আলিমুন্নেসার কান্নাকাটিতে পুলিশ মতাহিরকে কালাইন হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সেখানেও প্রকাশ্যে তাকে লাঠিপেটা করা হয়৷ পেটে ক্রমাগত লাঠির খোঁচা দেওয়া হয়৷ চিকিৎসক তাঁকে দেখে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন৷ কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছার আগেই প্রাণ হারান মতাহির৷
এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল৷ ক্ষুব্ধ জনতা ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়৷ পুড়ে যায় সংলগ্ন পঞ্চায়েত কার্যালয়৷ জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ অতিরিক্ত জেলাশাসক এইচএ লস্কর তদন্ত করে তাঁর রিপোর্টে পুলিশি আতিশয্যের কথা বলেছিলেন৷
এর মধ্যেই চাকরি থেকে অবসর নেন নারায়ণ তামুলি৷ কিন্তু মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এখন শিলচর সেন্ট্রাল জেলেই কাটাতে হবে জীবনের বাকি দিনগুলি৷
এই রায়ে কালাইনের মানুষ খুব খুশি৷ তাঁদের বক্তব্য, দোষীদের এমন শাস্তিই হতে হয়৷ পুলিশ হলেই যে যা-খুশি করার অধিকার নেই, এই রায় ফের তা জানিয়ে দিল৷
এই মামলার সরকারি আইনজীবী প্রদীপকুমার পাটোয়া জানান, অতি দুস্থ মতাহির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিতে এখন তিনি হাই কোর্টে আবেদন জানাবেন৷ তিনি আইনজীবী ইমাদউদ্দিন বুলবুলকে এই মামলায় সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker