Barak UpdatesHappeningsBreaking News
কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ শিক্ষকদের, ডিরেক্টরকে চিঠি
ওয়েটুবরাক, ৩০ আগস্টঃ জেলাশাসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতারের পর থেকে কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ ড. সিদ্ধার্থ শঙ্কর নাথের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। অনেক দিন ধরে কলেজের শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের যে তাঁর ওপর ক্ষোভ পুঞ্জিভূত ছিল, তারই বিস্ফোরণ ঘটছে এক সপ্তাহ ধরে। অধ্যক্ষ গ্রেফতারের ঘটনায় গণক্ষোভ-প্রতিবাদ এখন উল্টোখাতে বইছে। সরকারকে লেখা জেলাশাসকের চিঠির জেরে মঙ্গলবার কাছাড় কলেজে তদন্তে আসেন উচ্চ শিক্ষা দফতরের সঞ্চালক ধর্মকান্ত মিলি।
এসিটিএ-র পক্ষ থেকে ড. নাথের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ জমা করা হয়েছে। চিঠি লিখে তাঁরা বলেন, কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ অর্থ নয়ছয়, স্বজনপোষণ, গোয়ার্তুমি, আইন লঙ্ঘন ইত্যাদি সব ধরনের ঘটনায় অভিযুক্ত। শিক্ষিকাদের সাধারণ হয়রানির সঙ্গে যৌন হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে তাদের ওই ‘মিসডিড’ সংক্রান্ত ‘ব্রিফ নোটে’। তাঁরা বলেন, কলেজের চারদিকে সিসিটিভি ক্যামেরায় ছয়লাপ৷ অধ্যক্ষ ড. নাথ তাঁর চেম্বারে বসে কিছু ‘আনঅথারাইজড পারসন’কে দিয়ে সে সবের ভিডিও ফুটেজ মনিটর করান৷ অনৈতিক ভাবে তাঁরা মূলত শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের ভিডিও ফুটেজই দেখেন এবং দেখান বলে এসিটিএ অভিযোগ করে৷ তাঁদের কথায়, এ সমস্ত ধরনের নীতি-নৈতিকতার লঙ্ঘন৷ যৌন হেনস্তা তো বটেই৷
এসিটিএ সঞ্চালককে জানায়, ড. নাথ 2019 সালের অক্টোবরে কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই হিসাব সংক্রান্ত কাজকর্ম আর সাধারণ নিয়মে চলছে না। তিনি মর্জিমত কলেজ তহবিলের টাকা তোলেন, খরচ করেন। সে জন্য যেমন কোনও বাজেটের ব্যাপার, তেমনি নেই অডিটও। ছয় মাস পরপর ইন্টারন্যাল অডিট করে গভর্নিং বডি এবং বিভাগীয় সঞ্চালকের পেশ করার কথা। কিন্তু কাছাড় কলেজে বছর তিনেক ধরে সে সব আর মানা হয় না। ছাত্রদের কাছ থেকে ভর্তির সময় দুইশো টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে, এর কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি বলে এসিটিএ জানায়। নিয়ম ভেঙেই অমঞ্জুরিকৃত কিছু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে তিনি মাসে মাসে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে চলেছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে ত্রিপুরা থেকে তুতো ভাইকে এনে অমঞ্জুরিকৃত অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিযুক্তিরও অভিযোগ রয়েছে। তাকে চাকরিটি দেওয়ার জন্য তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত পদটিকে ওবিসি, এমওবিসি বলে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল৷ রহস্যজনক ভাবে অ্যাকাউন্টেন্টের বদলে কাঞ্চন কুমার নাথ নামে ওই কর্মীই এখন বড় অঙ্কের সমস্ত বিল-ভাউচার পাশ করেন। কাঞ্চন এখন আসামের স্থায়ী নাগরিক পরিচয়ের জন্য করিমগঞ্জে দৌঁড়ঝাপ করছেন বলে এসিটিএ সঞ্চালককে জানিয়ে রেখেছে৷ চিঠিতে আরও রয়েছে, তিনি যদি সেখান থেকে এই ধরনের নথি সংগ্রহও করে থাকেন, তবে তা তদন্ত করলেই জাল বলে প্রমাণিত হবে৷
এসিটিএর অভিযোগ, শুধু কাঞ্চনকুমারই নন, এই ধরনের আরও অন্তত দশজনকে সিদ্ধার্থশঙ্কর অমঞ্জুরিকৃত পদে নিযুক্ত করেছেন৷ চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শুভব্রত দাসকে সোজা অধ্যক্ষের প্রাইভেট সেক্রেটারি-র চেম্বারে বসিয়ে দিয়েছেন৷ তাঁর এসি রুমে গিয়েই শিক্ষকদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতির জন্য৷ অথচ কলেজের অধ্যক্ষ কোনও প্রাইভেট সেক্রেটারিই রাখতে পারেন না৷ কলেজে এমন কোনও পদই নেই৷
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তাঁর প্রতি ক্ষোভের যে যথেষ্ট কারণ রয়েছে, ওই চিঠিতেই তা স্পষ্ট৷ তাঁরা সঞ্চালককে জানিয়েছেন, সংস্কৃতের সহকারী অধ্যাপিকা নয়না গোস্বামীকে অধ্যক্ষ মানসিক নির্যাতন করে চলেছেন৷ তাঁকে ইতিহাস ও দর্শনশাস্ত্রের ক্লাশ নিতে বলেন৷ তাতে যে ছাত্রদেরও সর্বনাশ, সে কথা বুঝতে পারেন না সিদ্ধার্থশঙ্কর৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আনন্দচন্দ্র ঘোষকে তিনি কলেজে ঢুকতে বারণ করে দিয়েছেন৷ ড. ঘোষ এখন বাড়ি বসে মাসের পর মাস পুরো বেতন পেয়ে যাচ্ছেন৷ গভর্নিং বডির সভায় এক সিদ্ধান্ত হয়, তা কার্যকরের সময় সিদ্ধার্থ নিজের মতো করে আরেকটা প্রয়োগ করেন৷ তিনি কলেজের এনসিসি ইউনিটটিকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন বলেও ব্রিফ নোটে অভিযোগ আনে এসিটিএ৷ তারা জানায়, এনসিসির ইনচার্জ হেমন্ত বরা-কে অ্যাসোসিয়েট এনসিসি অফিসার প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করেছিল৷ কিন্তু অধ্যক্ষ নাথ তাঁকে ওই প্রশিক্ষণের জন্য নাগপুরে যাওয়ার অনুমতি দেননি৷ এ ব্যাপারে এনসিসির তরফ থেকে কিছু জানতে চাওয়া হলেও অধ্যক্ষ তাঁদের চিঠিকে গুরুত্বই দেননি৷ ফলে এনসিসি যে কোনও সময় কাছাড় কলেজ থেকে তাদের ইউনিট তুলে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এসিটিএ৷
এ দিকে, সঞ্চালককে জেলাশাসকের অভিযোগ, এসিটিএর অভিযোগ অভিযোগ, শিক্ষককে জেলাশাসকের শারীরিক নিগ্রহ ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন৷ শুধু বলেন, রাজ্য সরকার তাঁকে তদন্ত করতে পাঠিয়েছে, তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন৷ এ বার সেগুলি ভালো করে খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন৷