India & World UpdatesHappeningsBreaking News
কলকাতা বইমেলার হাত ধরে বৃহত্তর বাঙালি পাঠক পরিসরে বরাকবঙ্গ
ওয়েটুবরাক, ১৪ ফেব্রুয়ারি : বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন তার নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসরের বাইরেও সাংগঠনিক কাজকর্ম বিস্তারের কাজে হাত দিয়েছে । এ বছরের জমজমাট কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় সম্মেলন তার সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো নিয়ে হাজির হয়েছিল ।এই সবগুলো প্রকাশনাই বৃহত্তর বাঙালি পাঠক পরিসরে বেশ সমাদৃত হয়েছে। বিহার বাঙালি সমিতির সঙ্গে সাংগঠনিক সহমতের ভিত্তিতে তাদের স্টলকে প্রকাশনাগুলো উপস্থাপনের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিল বরাকবঙ্গ। সঙ্গে ছিল মেলায় লিটিলম্যাগ স্টলের ‘উনিশ মে ‘ পত্রিকার বর্ণময় টেবিল। এই দুটি জায়গায় প্রতিদিন সমাবেশ ঘটেছিল বাংলা এবং বাংলার বাইরের বিশিষ্ট লেখক ,অনুরাগী পাঠক এবং ভাষার জন্য সংগ্রামরত নানা স্থানের ব্যক্তিত্বদের।
বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত এক বার্তায় এসব তথ্য তুলে ধরে বলেছেন , সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রকাশিত এগারোটি প্রকাশনা নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছিল সংগঠন। বিগত ৪৬ বছর ধরে বরাক তথা রাজ্যের বাঙালিদের ভাষা ,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নাগরিকত্ব ও আর্থিক অধিকার রক্ষায় সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থাগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করার দাবিতে নিরলস ভাবে সংগ্রাম করে আত্মপরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সন্মেলন। এই বহমান আন্দোলনের সুরগুলো বিভিন্ন ধারায় ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি সাহিত্য ও কলাক্ষেত্রে সৃজনী প্রতিভাগুলোর সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরা হয়েছে প্রকাশিত বইগুলোতে। মেলায় আগত লেখক ও পাঠকরা ওই বইগুলোর সুবাদে বরাকবঙ্গের সংগ্রামের এই ধারার সঙ্গে অনেকটাই পরিচিত হতে পেরেছেন।
উপস্থাপিত বইগুলোর অধিকাংশই নিঃশেষিত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল সব্যসাচী রায়ের লেখা ‘ অভিবাসন ,নাগরিকতা ও আসাম : প্রাক উপনিবেশ কাল থেকে নাগরিক পঞ্জি নবায়ন ‘,অমলেন্দু ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় ‘সুরমা উপত্যকা – স্মারক গ্রন্থ ‘ও ‘বরাক উপত্যকার ভট্টসঙ্গীত ‘, গৌতম প্রসাদ দত্তের সম্পাদনায় ‘বরাকের গল্প সংগ্রহ- দ্বিতীয় খন্ড’, সঞ্জীব দেলস্করের সম্পাদনায় ‘জননেতা অরুন কুমার চন্দ’, গণেশ নন্দীর লেখা ‘চারুকলায় বরাক : ইতিহাস ও সমকাল’।
কলকাতায় বরাকবঙ্গের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখ থেকে।’ লেক টাউনে অনুষ্ঠিত সভায় বিশিষ্ট গল্পকার রণবীর পরকায়স্থকে সভাপতি , কবি মনোতোষ চক্রবর্তী ও লেখক অনুপ সেনকে সহ-সভাপতি এবং কবি ও লেখক শান্তনু গঙ্গারিডিকে সম্পাদক করে সম্মেলনের কলকাতা অধ্যায় গঠন করা হয়েছিল। পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত । ওই সভায় বিহার বাঙালি সমিতির সহযোগিতা নিয়ে বরাকবঙ্গের প্রকাশনাগুলো কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । এই সিদ্ধান্ত মর্মে বিহার বাঙালি সমিতির কলকাতার সংযোজক অধ্যাপক তন্ময় বীরের সঙ্গে ৬ জানুয়ারি শিলচর বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রক্রিয়াগত দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এতে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দত্ত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাছাড় জেলা সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর , দূরশিক্ষা কেন্দ্রের সঞ্চালক পরিতোষ চন্দ্র দত্ত ও সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সম্পাদক তমোজিত সাহা। অন্যদিকে বইগুলো নিয়ে কলকাতার মেলাস্থলে হাজির হয়ে সম্মেলনের তরফে ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক অনিল পাল। সঙ্গে ছিলেন তার জায়া নন্দিতা অধিকারী পাল । কলকাতায় মেলায় বই উপস্থাপনে সক্রিয় ভূমিকা নেন কলকাতা অধ্যায়ের সভাপতি রণবীর পুরকায়স্থ। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার কঠিন দায়িত্ব পালন করেন বিহার বাঙালি সমিতির কলকাতার সংযোজক অধ্যাপক তন্ময় বীর । গোটা প্রক্রিয়ায় সন্মেলনের পক্ষে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচার ও বিপণনের কাজটি দেখাশোনা করেন কলকাতা অধ্যায়ের সম্পাদক শান্তনু গঙ্গারিডি। সহযোগিতায় ছিলেন দুই সহ-সভাপতি মনোতোষ চক্রবর্তী ও অনুপ সেন। উল্লেখ্য , গত ৮ জানুয়ারি কলকাতার সল্ট লেকের অন্য থিয়েটার সভাগৃহে কবি মনোতোষ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে সন্মেলনের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করে কলকাতা অধ্যায়।