Barak UpdatesCulture

কবিতা, নাচ এবং গানের ত্রিবেণী সঙ্গমে অবগাহনের সুখকর অভিজ্ঞতা, লিখেছেন দীপক সেনগুপ্ত

৷৷দীপক সেনগুপ্ত৷৷

রবীন্দ্রসঙ্গীতের দিগন্তহীন বলয়ে নিজেকে না হারিয়ে বরাক উপত্যকার সাহিত্য-সংস্কৃতি নিজেকে খুঁজে নিতে ব্যস্ত । এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই চলছে নাটক লেখার কাজ , গল্প লেখার কাজ । বরাকের গল্প , নাটক ইতিমধ্যে নিজের পরিচয়ে পরিচিত । গানের ক্ষেত্রেও নিজের পরিচয়কে খুঁজে পেতে সচেষ্ট বরাক , ইতিমধ্যে নিজেকে তুলে ধরেছে বঙ্গ সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে । সাম্প্রতিক কালের দোঁহারের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে শিলচরে দলছুট , ম্যাডলি বাঙালি সহ একাধিক গানের দল তৈরি হয়েছে, যারা অনুকরণে নয় অনুসরণে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছে । দলছুট , ম্যাডলি বাঙালির অনুসরণে হাইলাকান্দির “ ফেরিওয়ালা”র নাম আজ বরাকের সাংস্কৃতিক মহলে বহু উচ্চারিত । “ফেরিওয়ালা” ইতিমধ্যে মুম্বাই , শিলং সহ একাধিক জায়গায় অনুষ্ঠান পরিবেশন করে প্রশংসা অর্জন করেছে ।

গত শনিবার বঙ্গভবনে আয়োজিত “ নৃত্যাঞ্জলি আকাদেমির দ্বিবার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে “ফেরিওয়ালাদের” গান শোনার সুযোগ পেলাম । ঘড়ির কাঁটা দশটা অতিক্রান্ত , বাইরে ঘন কালো মেঘে “ বুলবুলের” হানার আশঙ্কা সব কিছুকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দর্শকের উপস্থিতিতে “ফেরিওয়ালা”-র জনপ্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া গেল । ফেরিওয়ালারা প্রায় সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা গবেষক । প্রান্তিক শ্রেণির সংস্কৃতিকে মধ্যবিত্ত পরিসরে নিয়ে আসার সংগ্রামে রত এই ছাত্ররা সকলেই যোদ্ধা, সংস্কৃতি চর্চা তাদের কাছে বিনোদন নয় । “বুলবুলের” ভ্রূকুটিকে অগ্রাহ্য করে এত দূর এসে অনুষ্ঠান করতে গলায় সুর থাকাই যথেষ্ট নয়, বুকে বল থাকা চাই ।

নৃত্যাঞ্জলির অনুষ্ঠানে গায়ক/ কবি বিশ্বরাজ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় গান বিষয়ে এক বৈঠকী আড্ডায় উঠে এল গানের একাল সেকাল সহ কত কথা কত সুর । আড্ডার মেজাজে এই আলোচনায় তুহিন মজুমদার ও বিভাবসু ভট্টাচার্য অংশ নিলেন । অতীতবিলাসিতার আত্মঘাতী স্বখাত সলিলে নয়, ধারাবাহিকতার বহমান স্রোতে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে হলেও তারা যে ভেসে বেড়াতে আত্মপ্রত্যয়ী, আলোচনায় সেই কথাই উঠে এল । বিবর্তনের পথ ধরে গান এগিয়ে যায় সৃষ্টির উৎসমুখ থেকে অনন্তের অভিমুখে।

ভরত নাট্যমের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে যেমন লোকসংস্কৃতি যথা লোকগান বা লোক নৃত্যকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে তেমন রবীন্দ্র নৃত্য ও শাস্ত্রীয় নৃত্যকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষা মধুমিতা ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় লোক নৃত্য আখ্যান “ জীবন নদী” বর্ণময় জীবনের বহুমাত্রিকতার স্বাদে গন্ধে ভরপুর জীবন আখ্যানকে তুলে ধরল।

রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করে কোনও অনুষ্ঠান করা কি সম্ভব? প্রশ্নই ওঠে না। রবীন্দ্র কাব্য “প্রভাত সঙ্গীতের” উপর রচিত নৃত্যকাব্য “মুক্তি” পরিবেশিত হল । প্রভাত সঙ্গীতকে নতুনভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আলেখ্য রচয়িতা অনিতা মল্লিকের রবীন্দ্রবোধকে ও নির্দেশিকা মধুমিতার সৃজনশীলতাকে প্রশংসা করতেই হয় । মধুমিতার একক পরিবেশনা অত্যন্ত উঁচুমানের হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাতৃসমা আনন্দময়ী ভট্টাচার্যকে সম্মান জানিয়ে মানপত্র পড়া হয়েছে । আনন্দময়ী দেবী অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি। তাঁর পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্য মানপত্র গ্রহণ করেন।

প্রায় পাঁচ ঘন্টার এই উপভোগ্য অনুষ্ঠান শেষে বাইরে বেরিয়ে ঝিঁরিঝিঁরি বৃষ্টিতে বাসায় ফেরার পথে অজান্তেই গানগুলো গুনগুন করেই গাইছিলাম। গানের সঙ্গে কি শরীর মোঁচড় দিয়েছিল? দিতেই পারে নাচের প্রভাব থাকতেই পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker