Barak UpdatesHappeningsBreaking News

এক কোটি মানুষ অধিকার হারাচ্ছেন, বঙ্গসাহিত্যের আর্জি, সরব হোন

বিপ্লব শর্মা কমিটির প্রতিবেদন ফাঁসের পরও নীরব জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলগুলি!

৩০ আগস্ট : অসম চুক্তির ৬ নং দফা রূপায়নের নামে রাজ্যে ‘অধিকারপ্রাপ্ত’ এবং ‘অধিকারহীন’  দুই শ্রেণীর নাগরিক তৈরির সুপারিশ করেছে কেন্দ্র গঠিত বিপ্লবকুমার শর্মা নেতৃত্বাধীন কমিটি৷ এর বিরুদ্ধে বিধানসভা এবং সংসদের ভেতরে-বাইরে সোচ্চার হতে বরাক সহ গোটা রাজ্যের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আর্জি রেখেছে বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। রাজ্য বিধানসভা ও সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রাক্কালে সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, সরকারি কমিটির এই সুপারিশ শুধু এ রাজ্যে এক জটিল পরিস্থিতি ডেকে আনবে না, সংরক্ষণের ‘ অসম মডেল ‘ উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ দেশের রাজ্যে রাজ্যে সংখ্যাগুরুর আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের ধারাগুলোকে আরও অমানবিক হতে উৎসাহ জোগাবে। এতে বিপন্ন হতে পারে শিক্ষা, কর্ম ও অন্যান্য সূত্রে ওইসব রাজ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর মানুষের ভবিষ্যৎ।

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত গোটা বিষয়টি সম্পর্কে সংগঠনের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ভারতীয় সংবিধানে দু শ্রেণীর নাগরিক তৈরির  কোনও সংস্থান নেই৷ সেখানে সাড়ে তিন কোটি মানুষ অধ্যুষিত অসমে এক কোটির উপর ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে৷ একান্ন সালকে ভিত্তি ধরে সংরক্ষণের মোড়কে ওই মানুষদের ‘অধিকারহীন’ নাগরিক করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে৷ গৌতমবাবুর কথায়, এই সুপারিশ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের নীলনক্সাই নয়, এটা অখন্ড রাষ্ট্রীয় চেতনার পল্লবিত আধারেও সরাসরি আঘাত করেছে । একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই নজিরবিহীন উদ্যমের প্রতিবেদনটি ফাঁস হয়ে যাবার পরও জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা শুধু বিস্ময়করই নয়, বেদনাদায়কও বটে।

সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, ১৯৭১ সালকে ভিত্তি ধরে ১৯৮৫তে দিল্লিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে অসম চুক্তি সম্পাদিত হবার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে সহমত তৈরি হয়েছিল। এই ভিত্তিবর্ষের আধারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা  ব্যয়ে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এর পরই অসম চুক্তির ৬নং দফা রূপায়নের নামে যুক্তিহীনভাবে কুড়ি বছর পিছিয়ে একান্ন  সালকে ধরে ‘অসমীয়া খিলঞ্জীয়া’ নামে এক ‘সুপার সিটিজেন’ তৈরি করতে চাওয়া হয়েছে। সেখানে বাঙালি ও অন্যান্যদের সরকারি-বেসরকারি চাকরি, জমি ও জনপ্রতিনিধিত্ব করার অধিকার থাকবে না। অথচ ২০১৫ সালে একান্নকে ভিত্তি ধরে অসমীয়া খিলঞ্জীয়া সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য রাজ্য বিধানসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রণব গগৈ যে প্রস্তাব এনেছিলেন অনেক বৈঠকের পরও তাতে সহমত আনা যায়নি। বিধানসভায় তা উত্থাপিত হলেও খারিজ হয়ে গিয়েছিল।

বঙ্গসাহিত্যের পক্ষ থেকে বিস্ময় করে বলা হয়েছে, কোনও বিতর্কিত বিষয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারি কমিটির গণতান্ত্রিকরণ কাঙ্খিত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে আর্জি জানানোর পরও যাদের অধিকার রদ করার  সুপারিশ করা হলো, কমিটিতে সেই অধিকার হারানো মানুষগুলোর একজন প্রতিনিধিকেও রাখা হয়নি। এক্ষেত্রেও কোনও রাজনৈতিক পরিসর থেকে দাবি উত্থাপিত হতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে শর্মা কমিটিতে আইন ও প্রশাসনিক জগতে কাজ করার বিস্তর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা থাকলেও ভিত্তিবর্ষের  স্পষ্ট  বিষয়টিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি, গ্রাহ্য হয়নি বিধানসভার অভিমতও।

কেউ চাইছে বলেই সব রীতিনীতি , প্রচলিত ব্যবস্থা ভেঙে তাদের একশ  শতাংশ সংরক্ষণ দিতে হবে, আর অন্যরা বসবাস ও ভোটাধিকার ছাড়া আর কিছুরই অধিকারী হবেন না— এই সুপারিশ গণতান্ত্রিক ভাবধারার সঙ্গে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নয়। একটা সরকারি কমিটি এভাবে একপেশে মনোভাব নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করতে পারে না। সরকারি-বেসরকারি নিযুক্তি, জমির মালিকানা এবং জনপ্রতিনিধিত্বের পরিসংখ্যান কোনভাবেই প্রমাণ করে না যে, এ রাজ্যে অসমীয়া খিলঞ্জীয়ারা অধিকার পাচ্ছেন না। বরং নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালি ও অন্যান্যদের হার গত ছ-বছরে  ১০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিযুক্তিতে স্থানীয় প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে ভোটের প্রতিশ্রুতিও রক্ষিত হয়নি। এই গোটা বিষয়টি সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রতিক্রিয়াহীন ।

সাধারণ সম্পাদক দত্ত খেদ ব্যক্ত করে বলেছেন, একদিকে এক দেশ, এক বিধানের কথা বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় ঐক্য ভাবনাকে শক্তিশালী করার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে তাকে দুর্বল করার উদ্যোগে জাতীয় রাজনীতি মৌন-বধির, দায়হীন মমতাহীন। এক কোটির উপর মানুষকে তার ভাষা ও জাতি পরিচয়ের জন্য অধিকারহারা করতে চাওয়া গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এক নতুন অশনিসংকেত। ডি ভোটার, বিদেশি নোটিশ, ডিটেনশন ক্যাম্প এবং এনআরসি-ছুটের পর সংখ্যাগুরুর জন্য একশ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব নির্দিষ্ট ছকে চলা পরিকল্পনারই পরিব্যাপ্ত প্রকাশ। বঙ্গসাহিত্যের কাছে পরিতাপের বিষয়, ”আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকরা এক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই ভূমিকাহীন।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker