Barak UpdatesHappeningsAnalyticsBreaking News
আশঙ্কা অমূলক, নিরুত্তাপ বরাক
এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়ায় ৪ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। তবু নিরুত্তাপ গোটা উপত্যকা। কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই। নেই কোনও বিক্ষোভ বা আন্দোলনও। অসমের বাঙালি প্রধান এই অঞ্চলে এনআরসি প্রকাশের পর হাঙ্গামা বাঁধতে পারে বলে শুরু থেকে প্রশাসন আশঙ্কা করছিল। পুলিশ অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে। সেনা সতর্কতার কথাও শুনিয়ে দিয়েছিল।
বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠনের হুমকিতেই অবশ্য এই ধরনের প্রশাসনিক ততপরতা পরিলক্ষিত হয়। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাবি কমিটি (ইউটিডিসি) হুঙ্কার ছেড়েছিল, যথেচ্ছভাবে নাম কাটা হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। চূড়ান্ত তালিকায় দেখা গিয়েছে, নাম বাদ পড়েছে খোদ সংগঠনের সভাপতি সঞ্জিত দেবনাথ ও তাঁর ভাই-বোন-পুত্র সকলের। হিন্দুস্তানে হিন্দুদের নাম কাটা মানব না বলে পক্ষকাল ধরে সভা-সমিতি করছিল নর্থ-ইস্ট লিঙ্গুইস্টিক অ্যান্ড এথনিক কো-অর্ডিনেশন কমিটি (নেলেক)। তালিকায় নেই তাদের কার্যবাহী সভাপতি শান্তনু নায়েক। আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। নাম ওঠেনি তাঁদের কারও বাবার, কারও স্ত্রীর। এর পরও কারও কোনও জোরালো বক্তব্য নেই। সংসদে সরগরম হলেও বরাকে নীরব কংগ্রেস, এইআইউডিএফ। বিবৃতি দিয়ে দায় সেরেছে সিপিএম এবং সিআরপিসিসি-ও।
সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবেই এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে তালিকা দেখছেন। কারও নাম রয়েছে, কারও নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের ৫ জনের নাম আছে তো ২ জনের নেই। না থাকার তালিকায় মহিলারাই বেশি। অনেকে বাদ পড়েছেন ভিন রাজ্যের নথি পরীক্ষা না হওয়ায়। বাদ পড়াদের এই সংখ্যাটা মোটেও কম নয়। মোট আবেদনকারীর ১২ শতাংশ। তাঁদের অধিকাংশের আশা, ৭ অগস্ট থেকে যখন দাবি-আপত্তির পর্ব শুরু হবে, তখন ফের নথিপত্র জমা করলেই নাম উঠে যাবে।
বিজেপি খসড়া প্রকাশের আগে থেকেই হিন্দু কার্ড ছেড়ে দেয়। স্থানে স্থানে জানিয়ে দেয়, এখন নাম না থাকলেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করিয়ে সবাইকে এনআরসি-ভুক্ত করা হবে।
মুসলিমদের দল হিসেবে পরিচিত এআইইউডিএফ-এর করিমগঞ্জ সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘একটা অপশক্তি হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের চেষ্টায় লিপ্ত। আমরা মনে করি, ধর্মীয় পরিচিতিতে নয়, যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ ভারতীয় বঙ্গভাষী। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ কিন্তু সংসদের বাইরে কীভাবে তা করবেন, তা স্পষ্ট করলেন না।
ডি ভোটার এবং তাঁদের পরিবারের সকল সদস্যের নাম এনআরসি-তে হোল্ড রাখার সমালোচনা করেন রাধেশ্যামবাবু। তিনি বলেন, তাঁদের অধিকাংশের হাতে উপযুক্ত নথি রয়েছে। কিন্তু একাংশ আইনজীবীর সদিচ্ছার অভাব ও আদালতের নানা জটিল প্রক্রিয়ার জন্য তাঁরা ওইসব দেখানোর সুযোগ পান না। এনআরসি-তে তাদের আবেদনের সুযোগ দিলে অনেকে নথি দেখিয়ে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে পারতেন। তাতে ট্রাইব্যুনালেরও চাপ কমত।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রায় বললেন, বরাকের বাদ পড়াদের ৫০ শতাংশের নাম চূড়ান্ত তালিকায় উঠে যাবে। আমাদের চিন্তা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ৩৬ লক্ষ বাদ পড়া বাঙালিকে নিয়ে। সাংগঠনিকভাবে যে তাঁদের সেখানে কিছু করা সম্ভব নয়, খোলামেলা জানিয়ে দেন তিনি। তাঁর কথায়, এনআরসি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বটে। তবে বুঝে উঠতে সকলের একটু সময় লাগছে। দিন-সাতেক সময় নিয়ে তাঁরা গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন সূচি চূড়ান্ত করবেন। ৫ আগস্ট হাইলাকান্দিতে কেন্দ্রীয় সমিতির সভা আহ্বান করা হয়েছে। মূলত দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য বঙ্গ সাহিত্য তিনমাস সময় চাইবে। সব্যসাচীবা্বুর কথায়, ১০-১২ শতাংশের দাবি জানানো, সঙ্গে রয়েছে ভুল সংশোধনের আবেদন। ওইসবের আবারও কত রকমের জটিলতা। হবে শুনানি। ফলে তিনমাসের কম সময়ে তা হতে পারে না। তাঁর প্রশ্ন, ১৯৯৭-র ভোটার তালিকাকে ধরে যদি ডি ভোটার চূড়ান্ত হয় এবং তাদের এনআরসি-বঞ্চিত করা হয়, তবে ওই ভোটার তালিকায় থাকা অন্য সকলের নাম এনআরসি-তে থাকা উচিত ছিল।
অন্যদিকে, এনআরসির খসড়ায় অধিকাংশ মানুষের নামের বানান ভুলে আরেক সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন করিমগঞ্জের সমাজসেবী লোপামুদ্রা চৌধুরী। তিনি বলেন, চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের আবেদন জানিয়ে সেগুলিকে শোধরাতে হবে। নইলে পরবর্তী সময়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে।