Barak UpdatesHappeningsBreaking News
আয়ুষীই আদর্শ, মহিলা মহাবিদ্যালয়ের নবীনাদের সামনে সংবর্ধনা
ওয়েটুবরাক, ২৩ আগস্ট: বরাক উপত্যকার কৃতি ছাত্রী, ইউপিএসসি উত্তীর্ণ আয়ুষী কালোয়ারকে সংবর্ধনা দিল শিলচর মহিলা মহাবিদ্যালয়৷ তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে, ফুলের তোড়ায় সংবর্ধিত করেন অধ্যক্ষ ড. মনোজকুমার পাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যক্ষ ড. পাল বলেন, আয়ুষীর কৃতিত্ব এবং তার সাফল্য গোটা বরাক উপত্যকা এবং আসাম সহ ভারতবর্ষের জন্য গর্বের বিষয়। তাকে আজ সংবর্ধিত করতে পেরে গোটা উইমেন্স কলেজ পরিবার আনন্দিত এবং উৎফুল্ল। আয়ুষীর সাফল্য এই কলেজের ছাত্রীদের বিরাট উৎসাহের জোগান দেবে। অধ্যক্ষ আরও বলেন, বরাক উপত্যকায় প্রতিভার অভাব নেই, প্রয়োজন রয়েছে উন্নত পরিকাঠামোর এবং সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণার, যা আয়ুষী কালোয়ারের মতো কৃতি ছাত্রীদের সাফল্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। করোনা অতিমারীর ভয়াবহ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে গোটা দেশের সাথে বরাক উপত্যকা এবং কাছাড় জেলাও শিক্ষার অগ্রগতি এবং সামগ্রিক উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী বৈকুণ্ঠানন্দ মহারাজ, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের ডিরেক্টর জয়ন্ত ভট্টাচার্য, কবি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক অতীন দাশ, এনআইটি শিলচরের অধ্যাপিকা ড. বনানী বসু, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কাছাড় জেলা সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর, সাংবাদিক অরিজিৎ আদিত্য এবং শিক্ষক দীপক সেনগুপ্ত ৷ এদিনের অনুষ্ঠানে আয়ুষীর সঙ্গে ছিলেন তার পিতা শিক্ষক লক্ষ্মীনিবাস কালোয়ার এবং তার ঠাকুমা সিউদুলারি কালোয়ার।
অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে হাইলাকান্দি জেলার লালাবাজারের আয়ুষী কালোয়ার ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি তার বাবার কাছ থেকে ইউপিএসসির মত কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার উৎসাহ পেয়েছেন এবং সেই অনুযায়ী অনুশীলন শুরু করেছিলেন৷ লক্ষ্যে পৌঁছতে ছাত্রীদের আয়ুষী বলেন, সময়ের কাজ সময়ে করলে সাফল্য নিশ্চিত৷ তাই এত বড় মাপের পরীক্ষায় চেষ্টা এবং দৃঢ়তা থাকা অত্যন্ত জরুরি l
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এদিন ছিল কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান। নবীনদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান অতিথি শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী বৈকুণ্ঠানন্দ মহারাজ বলেন, কৃষ্টি-সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জানতে হবে এবং সেভাবেই নিজেদের তৈরি করে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি তার ভাষণে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শকে ছাত্রসমাজের কাছে তুলে ধরেন। তিনি শোনান, স্বামীজি বিশ্বাস করতেন, নারী সুশিক্ষিত না হলে দেশের ও জাতির বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এদিন, ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কবি- সাহিত্যিক ও সাংবাদিক অতীন দাশ বলেন, প্রকৃত শিক্ষাই মানুষের অন্যতম ধর্ম৷ ছাত্রসমাজকে শিক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে ধার্মিক জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাঁর ভাষণে স্বামীজির কথা উল্লেখ করে অতীন দাশ বলেন, দেশের প্রতি দায়িত্ব এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের কর্তব্যে ব্রতী হওয়া সকলের প্রয়োজন । ছাত্রছাত্রীদের নিজের জীবনে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখা অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আয়ুষী কালোয়ারের বাবা, পেশায় শিক্ষক লক্ষ্মীনিবাস কালোয়ার ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সকল ছাত্রীদের মধ্যেই প্রতিভা আছে, দরকার শুধু সেই প্রতিভাকে সঠিক সময়ে সঠিক দিশা নির্দেশিত করা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সঞ্জীব দেবলস্কর, বার্তালিপি পত্রিকার সম্পাদক অরিজিৎ আদিত্য এবং শিক্ষক দীপক সেনগুপ্ত।
উল্লেখ্য, কলেজের দুই ছাত্রী এইচ বিনীতা সিংহ এবং ওয়াই পুনম সিংহ গত মাসে অনুষ্ঠিত স্টুডেন্টস অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে গোটা জেলা সহ গোটা রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করেছে৷ তাদেরকে কলেজের তরফ থেকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। অপর একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে আয়ুষীর হাত দিয়ে উন্মোচিত হয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দেয়াল পত্রিকা। উপস্থিতি ছিলেন অধ্যক্ষ ড. মনোজ কুমার পাল, উপাধ্যক্ষ তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. সুতপা সিকিদার, বিভাগের শিক্ষিকাগণ সহ ছাত্রীরা। বিশিষ্টজনের মধ্যে গুরুচরণ কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অপ্রতীম নাগও উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঞ্জরী ভট্টাচার্য। দিনের দ্বিতীয়ার্ধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবীনবরণ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় এবং এতে ছাত্রীরা বিপুল উৎসাহে যোগদান করে।