Barak UpdatesIndia & World UpdatesBreaking NewsFeature Story

অস্ট্রেলিয়া থেকে কাঁথা কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে

২৪ ফেব্রুয়ারি: অস্ট্রেলিয়া থেকে কাঁথা এল শিলচরের কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে৷ সেলাই করে পাঠিয়েছেন ৮০ বছরের জোন্স টাফিন৷ অসমের এই অঞ্চল তো বহূদূরের কথা,ভারতের সঙ্গেই তাঁর কোনও নিজস্ব আবেগের জায়গা নেই৷ ইদানিং মেয়ে পেনিলপ বছরে একবার কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে আসেন৷ এখানকার পেইন অ্যান্ড পেলিয়াটিভ ডিপার্টমেন্টে নার্সদের প্রশিক্ষণ দেন৷ সম্পর্ক বলতে ওইটুকুই৷ মেয়ের চোখেই তাঁর ভারত দেখা৷

Rananuj
Cachar Cancer Hospital

এখানকার ক্যানসার রোগীদের গল্প শোনা৷ পেনিলপের কাছ থেকেই তিনি জেনেছেন, ভারতের প্রচুর ধনসম্পদ রয়েছে৷ আবার এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাদের ক্যানসার ধরা পড়লে দ্বিতীয়বার ডাক্তারের কাছে যেতে চান না৷ কোথা থেকে ওষুধের টাকা জোগাবে! কে দেবে তাদের গাড়িভাড়া! যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শেষ সময়ে যখন হাসপাতালে আসেন, তাদের অনেকের কাঁথা-কম্বল পর্যন্ত থাকে না৷ কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের উদাহরণ টেনে তিনি মাকে শোনান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই সমাজের কাছ থেকে তাঁদের জন্য কাঁথা-কম্বল চেয়ে আনেন৷ সোসাইটি পরিচালিত হাসপাতালটি প্রায় বিনা খরচে দরিদ্র ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা করে৷

পেনিলপকে থামিয়ে দেন জোন্স৷ মানুষের দুঃখকষ্ট বেশি সইতে পারেন না অস্ট্রেলীয় বৃদ্ধা৷ গৃহবধূ হলেও আজীবন চেষ্টা করেছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে৷ তাই ৯ হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও সুঁই-সুতো নিয়ে বসে পড়েন৷ গত বছর মেয়ে ভারতে আসার সময় তার হাতে তুলে দেন ৯টি কাঁথা৷ এ বার দিলেন ২০টি৷ বুদ্ধদেব কাঁথা গায়ে দিতেন৷ কাঁথা ব্যবহার করতেন চৈতন্যদেবও৷ স্টেলা ক্রামরিশের লেখায় এর উল্লেখ রয়েছে৷ কবি ভারতচন্দ্র রায় অন্নদামঙ্গল কাব্যে শিবকে ঝুলি-কাঁথা-বাঘছাল পরিহিত বলে উল্লেখ করেছেন৷ উইকিপিডিয়ায় রয়েছে, কাঁথা বা খেতা বা কেন্থা বা শুজনি প্রধানত গ্রামবাংলার (বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) হাতে সেলাইয়ের কাজ করা আচ্ছাদন বস্ত্র৷

তবে কাঁথা যে শুধুই বুদ্ধদেব-চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার মানুষের আচ্ছাদন বস্ত্র নয়, জোন্স-পেনিলপ টাফিন এর বড় উদাহরণ৷ আজকাল বরং বাঙালিদের মধ্যে কাঁথার প্রচলন উঠে গিয়েছে৷ হালকা শীতে এখন আর কেউ কাঁথা টেনে নেন না৷ পিসি-মাসি, দিদিমা-ঠাকুমারা বসে নবজাতকের জন্য পুরনো কাপড়ে কাঁথা সেলাই করছেন, সেই দৃশ্য অতীতপ্রায়৷ এখন তা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রদর্শনীর বস্তু৷ হস্তশিল্পের মেলায় এক-দুটো সাজিয়ে রাখা হয়৷

পেনিলপ টাফিন জানিয়েছেন, তাদের ওখানে কাঁথার বহুল ব্যবহার রয়েছে৷ এই সময়ে তারা ঘুমনোর সময় কাঁথাই গায়ে দেন৷ অতিথি গেলে সবচেয়ে সুন্দর কাঁথাটাই তাঁরা খুঁজে বের করেন৷

কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত সমাজসেবী সীতালক্ষী কান্নান জানালেন, এ শুধু দুই দফায় ২৯টি কাঁথাই নয়৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু দূরে বসা ৮০ বছরের বৃদ্ধার হাতের স্পর্শ, শ্রম আর অকৃত্রিম ভালবাসা‌, যা সমস্ত দূরত্বকে অতিক্রম করে নিয়েছে৷ হাসপাতালের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার কল্যাণ চক্রবর্তী বললেন, এই দানকে কোনও অঙ্কেই মাপা যায় না৷ ‘বাংলার নকশিকাঁথা’ বইয়ে শীলা বসাক যথার্থই লিখেছেন, ‘কাঁথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্নেহ-প্রীতি, প্রেম-ভালবাসা-আবেগ৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker