NE UpdatesHappeningsBreaking News
অসম সাহিত্য প্রকাশন ১০টি বই অনুবাদের দায়িত্ব দেবে বাংলা সাহিত্য সভাকে : শিক্ষামন্ত্রী
সুদর্শন গুপ্ত স্মৃতিমঞ্চে শুরু দুদিনের প্রতিনিধি সম্মেলন
ওয়ে টু বরাক, ২৫ মার্চ : বাংলা সাহিত্য সভা অসমের দুদিনব্যাপী প্রথম রাজ্যিক প্রতিনিধি সম্মেলন শনিবার গুয়াহাটি মালিগাঁওয়ের কর্মশ্রী হিতেশ্বর শইকিয়া প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী সংগীত ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী ড. রনোজ পেগু সহ শিক্ষা বিভাগের উপদেষ্টা ননীগোপাল মহন্ত, অসম সাহিত্য সভার সভাপতি সূর্যকান্ত হাজরিকা, বড়ো সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি টরেন বড়ো, পদ্মশ্রী অজয় দত্ত, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ কৃষ্ণঞ্জন চন্দ এবং অসম প্রকাশন পরিষদের সচিব প্রমোদ কলিতা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সম্মেলনের মঞ্চটি রাধামাধব কলেজের সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক সুদর্শন গুপ্তের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে। মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখতে গিয়ে নবগঠিত বাংলা সাহিত্য সভা অসম এর আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সংগঠনটি চলার পথের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডঃ রনোজ পেগু বলেন, আজকের দিনে ভাষা নিয়ে সংঘাতের কোনও প্রশ্নই নেই। ভাষা নিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের বিরোধিতা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে ব্যক্তি যত বেশি ভাষা জানেন তার পক্ষে তত বেশি সুবিধা হয়। অন্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রে একশ্রেণির সরকারি শিক্ষকের অনীহার সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, এই মানসিকতা বদলাতে হবে। বাংলা জানেন না এমন শিক্ষকদের বাংলা সাহিত্য সভা অসমের পক্ষ থেকে শিক্ষা দান করা যেতে পারে বলেও তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। অসম প্রকাশন পরিষদ ১০টি বই বাংলায় অনুবাদের জন্য বাংলা সাহিত্য সভাকে দায়িত্ব দেবে বলে ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী।
কারিগরি বিষয়গুলি ছাড়াও চিকিৎসা ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো পাঠ্যক্রম অসমীয়া- বাংলা বড়ো সহ অন্যান্য ভাষায় চালু করার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির মাধ্যমে নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সম্ভব এবং এজন্য সাহিত্য সভার সদস্যদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। অসমের বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়ার কারণ সরকার নয়, তথাকথিত মধ্যবিত্ত বাঙালি অভিভাবকরাই দায়ী, কারণ তারা তাদের সন্তানদের বাংলা স্কুলে পড়াতে আগ্রহী নন, ইংরাজি স্কুলই তাদের কাছে পছন্দ বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষাবিভাগের উপদেষ্টা ননীগোপাল মহন্ত স্বাধীনতা পূর্ব অসমের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, দেশ বিভাজন নিয়ে পাকিস্তান তাদের পরিকল্পনায় অসমকে সন্নিবিষ্ট করে নিয়েছিল। ফলে মুসলিম লীগের ম্যাপিংয়ে আমাদের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় তখন অসম কংগ্রেসের হয়ে অসমের স্বার্থে ভোট দিয়েছিলেন অথচ অসম কংগ্রেসের সভাপতি মোহম্মদ তইবুল্লা জহরলাল নেহরুর স্বপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন বলে ননীগোপাল মহন্ত স্মরণ করিয়ে দেন। বাঙালিরা অসমকে সাহায্য করেছিল বলে উল্লেখ করে ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন দৈনিক অসমিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে মহন্ত বলেন, ইতিপূর্বে অসম দখল করতে আসা লোকদের বঙাল বলা হত। কিন্তু বঙাল ও বাঙালির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সিলেটের বসন্ত কুমার দাস ও বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিরা সবসময় অসমের স্বার্থে কথা বলে এসেছেন। শিক্ষা উপদেষ্টার মতে, এখনও হয়তো আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে এবং থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের স্বার্থ ও আগ্রহ একই হওয়া উচিত। আর যদি তা না হয় তাহলে সীমিত জনশক্তি নিয়ে আমরা লড়াই করতে পারব না বলে সতর্ক করেন তিনি। অসমে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে মতপার্থক্য রয়েছে তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
অসম সাহিত্য সভার সভাপতি সূর্যকান্ত হাজরিকা বলেন, অসম সাহিত্য সভা ও বাংলা সাহিত্য সভা, অসম এই দুই সংগঠন আগামীতে হাতে হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারবে। বাংলা ভাষায় রচিত হলিরাম ঢেকিয়াল ফুকনের ,”অসম বূরঞ্জি” চতুর্থ খন্ড প্রথম ইতিহাসমূলক গ্রন্থ বলেও হাজরিকা উল্লেখ করেন। দীর্ঘ অতীত থেকেই বাংলা ও অসমিয়া এই দুই ভাষার সমন্বয়মূলক রচনার কাজ চলছে, একথা জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে কাজ করলে সমগ্র অসম উপকৃত হবে।
পদ্মশ্রী অজয় দত্ত, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকার স্বত্বাধিকারী বিজয়কৃষ্ণ নাথ, বড়ো সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি টরেন বড়ো, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ডঃ ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অমলেন্দু চক্রবর্তী, অসম প্রকাশন পরিষদের সচিব প্রমোদ কলিতা, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ কৃষ্ণঞ্জন চন্দ এবং ভাষিক সংখ্যালঘু পরিষদের সচিব শিলাদিত্য দেব অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অসমিয়া, বাঙালি ও বড়ো মানুষের উপস্থিতি আজকের অনুষ্ঠানকে ত্রিবেণী সঙ্গমে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেন উষারঞ্জন ভট্টাচার্য। দেশ বিভাজনের করুণ স্মৃতিকে রোমন্থন করে তিনি বলেন, কুচক্রীদের কবলে পড়ে শ্রীহট্ট-কুমিল্লা চলে গেল পাকিস্তানে । ছয় এর দশকে গুয়াহাটিতে বাংলা- অসমিয়া- বড়ো, হিন্দু- মুসলমান বলে কিছু ছিল না। ছিল গুয়াহাটি সমাজ। বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী অসমে ভাষিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, বাংলা ভাষার কখনও বিলুপ্তি ঘটবে না। এই ভাষা চর্চার জন্য সবাইকে আকৃষ্ট করতে হবে। বাংলা সাহিত্য সভা অসমকে মর্যাদার সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বড়ো সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি টোরেন বড়ো তার বাংলা বক্তব্যে বলেন, বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। বিজয়কৃষ্ণ নাথ বলেন, অসমের ইতিহাসে বাঙালিদের জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। বই অনুবাদের দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী আজ বাংলা সাহিত্য সভা অসমকে স্বীকৃতি দিলেন। আমরা বাঙালি, আমাদের সত্তা একই। মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে আমাদের।
ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি শিলাদিত্য দেব সাহিত্যকে যোগাযোগের মাধ্যম বলে উল্লেখ করে বাংলা সাহিত্য সভা অসমকে মহীরুহ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজ্যের সমগ্র বাঙালি সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমলেন্দু চক্রবর্তী, অসমিয়া ও বাংলা ভাষার শব্দ উচ্চারণ ভঙ্গিমার উপর আলোকপাত করেন। রবিবার সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চক্র আয়োজিত হবে।