Barak UpdatesHappeningsBreaking News

অর্জুন নমঃশূদ্রের মা ভারতীয়ই, ১৯৬৫-র ভোটার, ট্রাইবুনালের রায়

ওয়েটুবরাক, ১১ মে : ২০০০ সালে আকলরানি নমঃশূদ্রকে এক পুলিশ অফিসার বিদেশি বলে সন্দেহ করেছিলেন৷ রিপোর্টে লিখে দেন, তিনি ১৯৭১-র পর ভারতে এসেছেন৷ ওই রিপোর্ট ধরেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি মামলার সূচনা৷ কিন্তু ওই পুলিশ অফিসার আকলরানির কাছে কোনওদিন কোনও নথি দেখতে চাননি৷ এমনকী ২০০০ সালের ওই মামলা আইএমডি ট্রাইবুনাল হয়ে ২০১১ সালে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে যায়৷ এ সবের বিন্দুবিসর্গও আকলরানি জানতে পারেননি৷ এ বার শিলচরের ৪ নং ট্রাইবুনালে যেতেই সদস্য-বিচারক ধর্মানন্দ দেব দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা মামলা দুই মাসে নিষ্পত্তি করেন৷

Akol Namasudra with her grandchildren

আজ বুধবার তিনি আকলরানি নমঃশূদ্রকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা করেন৷ তিনি তাঁর রায়ে বলেন, আকলরানি ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালের ভোটার তালিকার কপি জমা করেছেন৷ ওই সব কপি সার্কল অফিসারের অফিসে পাঠানো হলে, তাঁরা পুরনো নথি ঘেঁটে জানিয়ে দেন, এগুলি যথার্থই৷ তাই তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷

আকলরানির পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন শিলচরের চার আইনজীবী অনিলচন্দ্র দে, অমরেন্দ্র পাল, চম্পক দে ও সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী৷ অনিলচন্দ্র দে বিদেশি সন্দেহের ব্যবস্থাটাকেই দোষারোপ করেন৷ তিনি বলেন, পুলিশের খামখেয়ালিপনার দরুন বহু মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷

ফরেনার্স ট্রাইবুনাল বিদেশি সন্দেহে নোটিশ পাঠানোয় আতঙ্কে ২০১২ সালের ৮ জুন আত্মহত্যা করেছিলেন আকলরানির একমাত্র পুত্র অর্জুন৷ ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি রামনগরের সমাবেশে অর্জুন নমঃশূদ্রের নাম উল্লেখ করে তাঁর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন৷ সর্বানন্দ সোনোয়াল আকলরানির সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন৷ এর পরও সঙ্কট পিছু ছাড়েনি কাছাড় জেলার কাটিগড়া থানার হরিটিকর গ্রামের এই নমঃশূদ্র পরিবারের৷ দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটছিল না৷ তখনই আকলরানি জানতে পারেন, ছেলের পর রাষ্ট্রের সন্দেহের নজর পড়েছে তাঁর ওপর৷ বিদেশি সন্দেহে নোটিশ গিয়েছে তাঁর নামেও৷ ৮৩ বছরের বৃদ্ধা একা লড়াই করে প্রমাণ করে দিয়েছেন, অহেতুক তাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে৷ তাঁরা প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক৷ বিনা দোষে তাঁর ছেলেকে প্রাণ হারাতে হয়েছে৷

আকলরানির অবশ্য ঘোর কাটে না৷ নানা প্রশ্ন তাঁর মনে৷ বলেন, মৃত্যুর একবছর পর অর্জুনকে ট্রাইবুনাল ভারতীয় বলে ঘোষণা করেছে৷ মেয়ে অঞ্জলিকেও একই রায় শোনানো হয়েছে৷ তাঁদের রায়েই উল্লেখ রয়েছে, অনন্তকুমার নমঃশূদ্র ও আকলরানি নমঃশূদ্র ১৯৬৫ সালের ভোটার৷ তাই তাঁদের সন্তানরা বিদেশি নয়৷ আকলরানি জানতে চান, এর পরও কেন তাঁকে আইন-আদালত করতে হল?

আকলরানি অবশ্য দাবি করেছিলেন, এনআরসিতে তাঁর নাম উঠেছে৷ বিচারক ধর্মানন্দ দেব তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের বিজ্ঞপ্তি জারির আগে এনআরসিতে নাম উঠল কিনা, তা বিচার্য নয়৷ তবু তিনি এনআরসি-র তালিকাটি খুঁজে দেখেন৷ আকলরানির নামে লেখা রয়েছে, ফরেনার্স ট্রাইবুনালে মামলা রয়েছে৷ বিচারক দেবের অনুমান, এই মামলার জন্যই আসলে তাঁর নাম ওঠেনি৷ এখন হয়তো আর সমস্যা হবে না৷

Also Read: 83 years old lady who lost her son over citizenship issue finally declared Indian after a long legal battle

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker