Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News

১৮টি গ্রহাণু শনাক্ত করেছে শিলচরের সিটিজেন সায়েন্স গ্রুপ

ওয়েটুবরাক, ১৮ সেপ্টেম্বর : নক্ষত্রখচিত রাতের আকাশের রহস্য যে শুধু বিজ্ঞানীরা উন্মুক্ত করেন তা নয়, সাধারণ মানুষও এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যখন জনসাধারণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন তখন সেটিকে ‘সিটিজেন সায়েন্স’ বা নাগরিক বিজ্ঞান বলা হয়। সিটিজেন সায়েন্টিস্ট বা নাগরিক বিজ্ঞানীরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন৷ তাঁরা তথ্য সংগ্রহ, প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণ করে পেশাদার বিজ্ঞানীদের সহযোগিতা করেন। তাই বিশ্বজুড়ে সিটিজেন সায়েন্টিস্টদের এক আলাদা সম্মান রয়েছে। মহাকাশে প্রেরণ করা স্যাটেলাইট বা মহাকাশ দূরবীণ থেকে প্রতিদিন এত বেশি তথ্য আসে যে এগুলো বিশ্লেষণ করার মতো সময় করে উঠতে পারেন না বিজ্ঞানীরা। আর তখন প্রয়োজন হয় সিটিজেন সায়েন্টিস্টদের, যারা বিজ্ঞানীদের কাজ অনেকটাই সহজ করে দেন।

বরাক উপত্যকার বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞান জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ‘অ্যাস্ট্রোজেন’ নামক একটি সিটিজেন সায়েন্স গ্রুপ ২০২২-এর ২৮ মার্চ তৈরি করা হয়েছিল। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর দাসের নেতৃত্বে অ্যাস্ট্রোজেনের আট জন সদস্য সম্প্রতি ১৮টি গ্রহাণু (Asteroid) শনাক্ত করেছেন। গ্রুপের কনিষ্ঠ সদস্য ঐশী জ্যোতি ২টি গ্রহাণু শনাক্ত করেছে। সে শিলচরের ডনবস্কো স্কুলের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী এবং হিমাদ্রি বাবুর কন্যা। এছাড়াও গ্রুপে রয়েছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের গবেষক গুলাফসা বেগম চৌধুরী, দুই ছাত্রী তনুশ্রী ভট্টাচার্য, সঞ্চালি নাথ মজুমদার, শিলচরের গুরুচরণ কলেজের দুই ছাত্র সৈকত মজুমদার, আকাশদীপ মোহন্ত এবং দিল্লী নিবাসী সিটিজেন সায়েন্টিস্ট শোভন আচার্য।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সার্চ কোলাবরেশনের চারটি ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেই ‘অ্যাস্ট্রোজেন’ এই সাফল্য পেয়েছে। চলতি বছরের ২৯ মার্চ শুরু হয়েছিল প্রথম ক্যাম্পেন। চতুর্থ ক্যাম্পেন শেষ হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রয়েছে আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা। ভারত সহ বিশ্বের নানা দেশের সিটিজেন সায়েন্টিস্টরা ক্যাম্পেইনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী একটা বিস্তীর্ণ এলাকায় (প্রায় ৫৫ কোটি কিলোমিটার) অতিক্ষুদ্র গ্রহের মত কিছু বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে৷ তাদের বলা হয় গ্রহাণু (Asteroid)। আর এলাকাটাকে বলা হয় ‘অ্যাস্ট্রয়েড বেল্ট’। বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলো সৃষ্টি হওয়ার সময় মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আরও একটি গ্রহ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু কারণে সেখানে কোনও গ্রহ সৃষ্টি হতে পারেনি৷ তাই সেখানে অবস্থান করছে লক্ষ কোটি বিভিন্ন আকারের গ্রহাণু। ‘অ্যাস্ট্রোয়েড সার্চ ক্যাম্পেইন’ বা গ্রহাণু শনাক্তকরণ অভিযান হচ্ছে একটি জনপ্রিয় সিটিজেন সায়েন্স প্রজেক্ট। এটি পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সার্চ কোলাবরেশন (আই এ এস সি) ।

এটি একটি নাগরিক বিজ্ঞান প্রোগ্রাম যা বিশ্বব্যাপী নাগরিক বিজ্ঞানীদের উচ্চ মানের জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য সরবরাহ করে। কোনও খরচ ছাড়াই এই সেবা নাগরিক বিজ্ঞানীদের প্রদান করা হয়! আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসা এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্যানোরামিক সার্ভে টেলিস্কোপ এবং র‍্যাপিড রেসপন্স সিস্টেম (Pan-STARRS) এই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত। মূলতঃ পেন-স্টার্স থেকে তোলা রাতের আকাশের বিভিন্ন ছবি নাগরিক বিজ্ঞানীদের দেওয়া হয়। আর এর থেকেই ‘অ্যাস্ট্রোমেট্রিকা’ সফটওয়ারের মাধ্যমেই নাগরিক বিজ্ঞানীরা গ্রহাণু শনাক্ত করে থাকেন। প্রতিমাসেই প্রায় ২৫ দিন ধরে চলে এই ক্যাম্পেন। এখন পর্যন্ত ১০,১৯০ টি গ্রহাণুকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন নাগরিক বিজ্ঞানীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker