Barak UpdatesHappeningsBreaking News
হিন্দিভাষী ও চা জনগোষ্ঠীর ২১ সংগঠনের যৌথ সুরক্ষা সমিতি গঠিত
ওয়েটুবরাক, ১৬ অক্টোবর: হিন্দিভাষী ও চা জনগোষ্ঠীর ২১টি সংগঠন এক সভায় মিলিত হয়ে ‘রাজভাষা হিন্দি যৌথ সুরক্ষা সমিতি আসাম’ গঠন করা হয়। আনন্দ শাস্ত্রী সর্বসম্মতিক্রমে কমিটির প্রধান আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সকল সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকদের সহ-আহ্বায়ক নিযুক্ত করা হয়।
শিলচরের প্রবীণ সমাজকর্মী অবধেশ কুমার সিংয়ের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় আসাম সরকারের উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দি বিষয় পড়ানো বন্ধ করা ও হিন্দি শিক্ষকের পদ বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আসামের মুখ্যমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি ভাষা হিন্দি সম্পর্কিত সমস্ত সংস্থার কাছে স্মারকলিপি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পণ্ডিত আনন্দ শাস্ত্রী বলেন, হিন্দুস্তানে হিন্দির দাবি না করলে কোথায় দাবি করবেন? তিনি বলেন, কোনও ভাষা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই তবে হিন্দিকে পঙ্গু করার শর্তে তা হতে পারে না। তিনি বলেন, শিলচরে বাংলা ভাষার জন্য বহু মানুষ শহিদ হয়েছেন, প্রয়োজনে আমরা হিন্দির জন্যও শহীদ হতে প্রস্তুত।
সাংবাদিক-সমাজকর্মী দিলীপ কুমারকে মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকার হুমকি দেওয়ার বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়৷ গত ১৩ অক্টোবর এক প্রতিনিধি দল সার্কিট হাউসে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে হিন্দি দৈনিক ‘প্রেরণা ভারতী’র কর্ণধার দিলীপ কুমারকে তাঁর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন।
অবধেশ কুমার সিং সভাপতির বক্তব্যে বলেন, হিন্দি দৈনিক ‘প্রেরণা ভারতী’ একজন ব্যক্তির নয়, একটি বৃহত্তর সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, এটি প্রজাতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। পীযূষ হাজারিকার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি ভাষার জন্য প্রতিটি লড়াইয়ে তিনি সমর্থন করবেন। প্রবীণ সমাজকর্মী মহাবীর জৈন বলেন, সরকারকে সরকারি ভাষার শিক্ষা বন্ধ করা উচিত নয়, এটি বরাক উপত্যকায় যে ভাবে চলছে চলতে দেওয়া উচিত। এটাই আসামের জন্য ভালো। এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বরাক হিন্দি সাহিত্য সমিতির সভাপতি পরমেশ্বর লাল কাবরার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। দক্ষিণ আসাম চা যুব সমিতির সভাপতি রাজদীপ রাই বলেন, এটা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমরা প্রতিটি স্তরে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত, দিসপুর থেকে দিল্লি পর্যন্ত আমরা হিন্দির সম্মান রক্ষার জন্য চাপ দেব। বরাক চা জনজাগৃতি মঞ্চ লক্ষীপুরের সুনীল কুমার সিং বলেন, আমরা সব দলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাব এবং যে আমাদের সমর্থন দেবে আমরা তাকে সমর্থন করব।
রাজকুমারী মিশ্র হিন্দি স্কুল বন্ধ হওয়ার বিষয়ে তার দুঃখ প্রকাশ করেছেন। উধারবন্দের সমাজসেবক গোলক গোয়ালা বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এপার ওপারের যুদ্ধ করতে হবে, আমাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। হিন্দিভাষী যুব মঞ্চের সভাপতি রাজন কুনওয়ার বলেন, হিন্দি শুধু হিন্দিভাষীদের ভাষা নয়, হিন্দির জন্য আওয়াজ সকলকে একত্রিত হয়ে তুলতে হবে। শূন্য হিন্দি পদগুলিতে নিয়োগ করা হচ্ছে না, এটি বিবেচনা করা উচিত।তরুণ সমাজকর্মী শচী কুমারী বলেন, আমরা কাপুরুষ নই, আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সরকারের এই বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে নারী শক্তি এগিয়ে এসে আওয়াজ তুলবে।
বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক বাবুল নারায়ণ কানু বলেন, আমরা সবাই মিলে হিন্দির জন্য লড়াই লড়ব। বরাক হিন্দি সাহিত্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ কুর্মি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হিন্দি সাহিত্য সমিতি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে। তিনি হিন্দি বিষয়ে হিন্দি সাহিত্য সমিতির কাজের বিবরণ দেন। দুর্গেশ কর্মী হিন্দি সাহিত্য সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অমরনাথ খান্ডেলওয়ালের পাঠানো পরামর্শ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন। চা যুব কল্যাণ সমিতির সংগঠন সম্পাদক চৌধুরী চরণ গড় সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে বলেন, সরকারের সঙ্গে কথা বলতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আসাম সরকারের সমালোচনা করে পাথারকান্দির গৌতম কৈরি বলেন, দুর্নীতি চলছে এবং সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সরকারের চোখ খুলতে যা করা দরকার আমরা করতে প্রস্তুত। জাতীয় কবি সুষমা পারেখ হিন্দিতে তাঁর কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে মুগ্ধ করেন। মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন হিন্দিভাষী সমন্বয় মঞ্চের সভাপতি ডাঃ বৈকুণ্ঠ গোয়ালা, প্রবীণ সমাজকর্মী ফুলমতি কালওয়ার, কাছাড় ইট ভাটা সমিতির রামস্বার্থ সিং, ভোজপুরী পরিষদের সভাপতি যুগল কিশোর ত্রিপাঠী প্রমুখ।