Barak UpdatesHappeningsBreaking News

সুদর্শনের মৃত্যু আমার ভুল ভাঙিয়ে দিল, লিখেছেন উত্তমকুমার সাহা

//উত্তমকুমার সাহা//

সুদর্শনকে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখতে হবে, স্বপ্নেরও অতীত ছিল৷ বরং তাঁর কলমে অন্যের স্মৃতিকথা পড়তে গিয়ে বহু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠত৷ কিন্তু বিধির বিধান মেনে নিতেই হয়, সুদর্শন আর আমাদের মধ্যে নেই৷
সুদর্শন গুপ্তের সঙ্গে কবে মুখোমুখি পরিচয় হয়েছিল, মনে পড়ে না৷ মুখোমুখি পরিচয়ের অপেক্ষা সে করেছিল কিনা, নাকি নিজের গুণেই আমার পরিচিতদের তালিকায় ঢুকে পড়েছিল, তাও মনে নেই৷
সুদর্শনকে আমি প্রথম জানি বিটিএনের সংবাদবিভাগের বরিষ্ঠ সদস্য হিসাবে৷ পরে জানলাম, সে জেএনইউর প্রাক্তনী৷ বয়সে অনেকটা ছোট হলেও শ্রদ্ধার আসনেই বসাই সে দিন৷ আমাদের পেশায় এই ধরনের মেধাবীর খুব প্রয়োজন৷ ফলে তার কাছে প্রত্যাশাটাও বেড়ে গেল৷ কিছুদিন পর বিস্ময়ের মাত্রাটা আরও বেড়ে যায়, যখন জানতে পারি, সুদর্শন রাধামাধব কলেজের শিক্ষক৷ কয়েকদিনের মধ্যে দেখি, সে তো শুধু কলেজশিক্ষক নয়, কলেজশিক্ষকদের নেতাও৷ বড়-ছোট, যার যা সমস্যা, সমাধানে তৎপর হয়ে ওঠেন৷ কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যান, কখনও দৌড়ান গুয়াহাটিতে৷ কিন্তু জীবনজ্যোতি হাসপাতালে শেষ লড়াইর সময় জানতে পারি, তার প্রমোশন সেই কবে থেকে বকেয়া পড়ে রয়েছে৷ কিন্তু নিজের জন্য ভাবেননি একটিবার৷ পদ্ধতি মেনে এর জন্য আবেদন করা, নথিপত্র জমা করা সেগুলির ফুরসত মেলেনি তাঁর৷ অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তিত্ব, কত আলোচনায় যে অংশগ্রহণ করেছেন, কত গবেষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু আর্থিক লাভালাভ জড়িত জেনেও নিজের পিএইচডি-টা করতে পারলেন না৷ বলা ভালো, করার কথা সে ভাবে ভাবলেন না৷ শহরের চিকিৎসকদের অনেকে তাঁর অতি আপনজন, কিন্তু কিডনিতে পাথরের যন্ত্রণায় মাঝেমধ্যেই কুঁকড়ে উঠতেন, পাথর অপসারণের সুচিন্তিত পথে হাঁটলেন না৷ নিজের তো ! সে পরে ভাবা যাবে বলে ফেলে রেখেছিলেন সবকিছু৷ অথচ কোনও সামাজিক কর্মসূচি, নিজের পোর্টালের জন্য সংবাদ তৈরি, এসিটিএর কোনও বিশেষ কাজ কিংবা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ প্রদান কোনও কিছু ফেলে রাখা বা গাফিলতি করা তাঁর ধাতে ছিল না৷
সুদর্শন সম্পর্কে কত কী কথা মাথায় গিজগিজ করছে, এর অনেকটাই অনেকের জানা৷ দুদিন ধরে তাঁর স্মৃতিচারণায় অনেকে অনেক কিছু উল্লেখ করেছেন, আমি সেগুলির পুনরাবৃত্তি করছি না৷ আর তাঁর সঙ্গে পিকনিকে যাওয়া, দিল্লি-হরিদ্বার-মথুরা-বৃন্দাবন-অমৃতসর সফরের নানা কথা সেগুলি থাক ব্যক্তিগত হিসাবেই৷ গত পাঁচ বছরে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতর হয়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্তে কত অভিজ্ঞতাই না সঞ্চয় করলাম! সমস্ত প্রশ্নের সহজ জবাব দিত সে, আবার নিজে কিছু জানতে চাইলে শিশুর মতো প্রশ্ন করত৷
ওই সূত্রে আমার মনে হতো, সুদর্শনের ঘনিষ্ঠতার বৃত্তে জাঁকিয়ে বসেছি৷ নইলে এতটা সময় কে কাকে দেয়, এত ঘনিষ্ঠ আলোচনা কতজনের সঙ্গে আর করা সম্ভব! তাঁর মৃত্যু ভুল ভাঙিয়ে দিল৷ সুদর্শনের ঘনিষ্ঠতার বা ঘনিষ্ঠতরদের বৃত্ত যে কত বিশাল, এর টের পেলাম এই কয়েকদিনে৷

সুদর্শন, ক্ষণজন্মা বলেই হয়তো এত আলো ছড়িয়ে গেলে! এত মানুষকে একসঙ্গে এত আপন করে নিতে পারলে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker