Barak UpdatesHappeningsBreaking News
সিলেট-করিমগঞ্জের সঙ্গে ‘শ্রীভূমি’ জড়িয়েছে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ বা তারও আগে
ওয়েটুবরাক, ২৩ নভেম্বর: কবিগুরু কবে সিলেটকে শ্রীভূমি বলেছিলেন, এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু সিলেট বা করিমগঞ্জের সঙ্গে শ্রীভূমি শব্দের যোগাযোগ গড়ে ওঠে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ বা তারও আগে। ১৯০৯ সালে এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সুরমা সাহিত্য সম্মিলনী। এর দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ১৯১৪ সালে, শিলচরে। ওই অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবের সূত্র ধরেই করিমগঞ্জ শহর থেকে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় সাহিত্য পত্রিকা মাসিক শ্রীভূমি।
তবে এই পত্রিকার প্রকাশ এক বছর আট মাস পরে বন্ধ হয়ে যায়। এর তিন দশক পরে ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে শ্রীহট্টের দাড়িয়াপাড়া থেকে শ্রীভূমি নামেই আর একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। তবে ওই পত্রিকা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য সম্মিলনীর তৃতীয় অধিবেশন মৌলবীবাজারে অনুষ্ঠিত হয়। সেই অধিবেশনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতির ভাষণে দয়াল কুমার দত্ত শ্রীভূমির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বিজয়া, শ্রীভূমি, সুরমা, পরিদর্শক সাহিত্য চর্চার যথেষ্ট সুবিধা করে দিয়েছে। সুরমা, শ্রীভূমি ও পরিদর্শক দেশবাসীর দ্বারা আমাদের দেশেই পরিচালিত হইতেছে।” ” … শ্রীভূমির মূলেও অর্থাভাব দেখা দিয়েছে।”
একই অধিবেশনে ভুবনমোহন দেবশর্ম্মা তাঁর সভাপতির ভাষণেও শ্রীভূমির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “শ্রীভূমি প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক পুরাতন এবং নূতন লেখক আমাদের প্রাদেশিক সাহিত্যের পুষ্টি-পরিণতির যত্ন করিতেছেন। যাহাদের যত্নে শ্রীভূমি বাঁচিয়া রহিয়াছে তাহাদিগকে প্রাণের সহিত ধন্যবাদ প্রদান করিতেছি।”
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীহট্টে অনুষ্ঠিত চতুর্থ অধিবেশনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এই অঞ্চলকে শ্রীভূমি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই শ্রীভূমি হিন্দু মুসলমান সভ্যতার অপূর্ব্ব মিলনক্ষেত্র।” ততদিনে যে শ্রীভূমি মাসিক পত্র উঠে গিয়েছে, এরও উল্লেখ তাঁর ভাষণে রয়েছে।
শ্রীভূমির প্রচার প্রসারে যাঁরা অর্থানুকূল্য করেছিলেন তাঁদের মধ্যে মুসলমানরাও ছিলেন। মৌলবী আব্দুল খালেক চৌধুরী (লাউতা-বাহাদুরপুর) ১০ টাকা, মৌলবী আব্দুল হামিদ চৌধুরী (দক্ষিণ ভাগ পাথারিয়া) ১০ টাকা, মৌলবী আব্দুল গফুর, ওভারশিয়ার (করিমগঞ্জ) ১০ টাকা দিয়েছিলেন।
১৩২২ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে প্রথম বর্ষের চতুর্থ সংখ্যায় আকুল আকাঙ্ক্ষা নামে কবিতা লিখেছিলেন আব্দুল মালিক চৌধুরী। অগ্রহায়ণে অষ্টম সংখ্যায় তিনি লিখেছিলেন পতঙ্গ ও মোমবাতি কবিতা। পৌষে নবম সংখ্যায় কোকিল নামের কবিতা লিখেছেন মশাহেদ উদ্দিন চৌধুরী। মাঘের সংখ্যায় শেখ আব্দুর রহিম লিখেছেন প্রবন্ধ শা হজরত শাহ পাতা, কোরাণ নামে কবিতা লিখেন আবুল ফতেহ আহম্মদ ওলী উল্লা মরহুম। এই ভাবে শ্রীভূমিতে লেখালেখি করেছেন বহু মুসলমান কবি লেখক।
এই শ্রীভূমিকে সাহিত্য সংস্কৃতি মহল সহ বরাক উপত্যকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভাবে নিয়ে আসে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। এই সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৫ সালে পালিত হয় শ্রীভূমি পত্রিকার শতবর্ষ পূর্তি উৎসব। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় সুরমা সাহিত্য সম্মেলনের শতবর্ষ। এই উপলক্ষে একটি স্মারক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল। ওই স্মারক গ্রন্থে সুরমা সাহিত্য সম্মেলন ও শ্রীভূমি পত্রিকার বিস্তৃত উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ষ ব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় শ্রীভূমির প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যার প্রতিলিপিও প্রকাশ করা হয়।
উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি তাঁর বক্তৃতায় গুরুসদয় দত্তের লেখা শ্রীভূমি কবিতাটি পড়ে শোনান। গুরুসদয় দত্ত তাতে লিখেছেন, “দূর নগর বন /ভ্রমিয়া আর্যগণ/রম্যনিকেতন আশে/বিবিধ বিবিধ কত/দেশ অতিক্রমি/উপনীত শ্রীভূমিতে শেষে।”
ঊষারঞ্জন কবি অশোকবিজয় রাহার একটির লেখার কথাও উল্লেখ করেন। অশোকবিজয় লিখেছেন, “আজিকার শুভদিনে, ওগো কবি, ঝষি বাঙ্গালার/শ্রীভূমির লহ নমস্কার। ”