Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিলচর শ্মশানের এক চুল্লী করোনায় মৃতদের জন্য রাখতে বললেন বিধায়ক দিলীপ
২৭ জুলাই: করোনায় মৃত ব্যক্তির অন্ত্যেষ্টি নিয়ে প্রশাসনকে স্থানে স্থানে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে৷ তিনদিন আগে কাছাড়ের লক্ষীপুর মহকুমাতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটে৷ এমন পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী ভূমিকায় দেখা গেল শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে৷ জেলাশাসক আহূত বৈঠকে তিনি প্রস্তাব দেন, শিলচর শ্মশানঘাটে চারটি চুল্লীর একটি করোনায় মৃতদের জন্য বরাদ্দ করা হোক৷ মৃতদেহের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করার লক্ষ্যে কাছাড়ের জেলা প্রশাসন সোমবার এই বৈঠক ডেকেছিলেন৷ তাতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে জেলাশাসক কীর্তি জল্লি বলেন, কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ থেকে দূষণের কোনও সম্ভাবনা নেই। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এ সংক্রান্ত ভুল ধারণার অবসান ঘটাতে হবে৷ তাঁর কথায়, শ্মশান বা দাফনে প্রয়াতদের অবশ্যই শেষ মুহূর্তের সম্মান জানাতে হবে ।
জেলাশাসক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মৃতদেহ সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা এখানে কঠোরভাবে মেনে চলা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত পেশাদাররা পিপিই দ্বারা
সুরক্ষিত হয়েই কাজটা করেন৷ এমনকি আত্মীয়স্বজনদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সহ মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়৷ তবে স্পর্শ-আলিঙ্গন-চুম্বন অনুমোদিত নয়।
এর আগে বৈঠকে শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ গুণজিৎ দাস বলেন, একটি কোভিড রোগীর মৃত্যুর পরে, দেহটি ১ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইটের সাথে সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং বায়ু বেরনোর মত অঞ্চলগুলি সুতির প্লাগ দিয়ে বন্ধ করা হয়। তারপরে শরীরটি একটি ফুটোশূন্য জিপড বডি ব্যাগে প্যাক করা হয়৷ আবার হাইপোক্লোরাইট দ্রবণ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপরে দেহটি আবার প্যাক করে ১৫০ মাইক্রন পুরু অন্য পলিথিন শিটে বেঁধে দেওয়া হয় এবং বাইরের অংশটি আবার হাইপোক্লোরাইট দ্রবণ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়৷
তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার দ্বারা ইতিমধ্যে জারি করা নির্দেশিকা অনুসারে এই পদ্ধতিতে একবার প্যাক হয়ে গেলে শরীর থেকে অন্যের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারে শূন্য৷
বৈঠকে শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাঃ অভিজিৎ স্বামী বলেন, করোনা ভাইরাস কোনওরকমভাবে মৃতদেহ থেকে জীবিত ব্যক্তির দেহে সংক্রামিত হতে পারে না এবং এরকম কোনও দৃষ্টান্ত নেই।
সভায় সাংসদ ডাঃ রাজদীপ রায়ও বলেন, এই রোগটি কেবল জীবিত কোষের মাধ্যমেই সংক্রামিত হতে পারে৷ করোনার শিকারের মৃতদেহ থেকে কেউ আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই l তিনি ব্যাখ্যা করার সময় মৃতদেহ সৎকার সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। সভায় অংশগ্রহণকারীরা আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে মৃতদেহ সৎকার করতে সম্পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্তাওয়ান ও রাজীব রায়, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বাবুল বেজবড়ুয়া সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধি, এনজিও, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী এবং সমাজের অন্যান্য অংশের ব্যক্তিবর্গ বৈঠকে অংশ নেন।