Barak UpdatesHappeningsBreaking News
দূরদর্শন উঠেই গেল! শিলচর এখন শুধু রিলে সেন্টার!
২৩ জুলাইঃ শিলচরে এখন আর কোনও দূরদর্শন কেন্দ্র নেই। এতদিন যে প্রতিষ্ঠান বরাক উপত্যকার বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে, সংবাদ পরিবেশন করেছে, সেটি এখন শুধু এক রিলে সেন্টার। উঠে গিয়েছে স্টুডিও। তার দায়িত্ব এখন শুধু ডিডি আসামের অনুষ্ঠান রিলে করা। বৃহস্পতিবার এই অঞ্চলের কোনও অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়নি। সে জায়গায় শোনানো হয়েছে অসমিয়া ভাষার নানা অনুষ্ঠান।
এ নিয়ে বরাক জুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা সমিতির পক্ষ থেকে এ দিন সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এ দিনই তিনি যেন বিষয়টি বিভাগীয় মন্ত্রীর নজরে নেন, অনুরোধ জানানো হয়। কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন, নানা পর্যায়ের আন্দোলন ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফসল এই দূরদর্শন কেন্দ্র। একে এভাবে তুলে নিলে এই অঞ্চলের আবেগে তীব্র আঘাত হানা হবে।
Drawing the attention of @PrakashJavdekar ji to reverse the decision to downgrade/closedown the #DDK #Silchar which was started in early ‘80s to fulfill the aspiration of the people of #barakvalley and #nchills.@sarbanandsonwal @DrJitendraSingh pic.twitter.com/Lt4185bTV3
— Dr Rajdeep Roy MP ( MS, MCh) (@drrajdeeproy) July 23, 2020
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের পক্ষ থেকে এ নিয়ে শুক্রবার শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে এগারোটায় কোভিড বিধি মেনেই তাঁরা প্রতিবাদ জানাবেন বলে মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অজয় রায় জানিয়েছেন।
এ নিয়ে সরব হয়েছেন শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ, মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী সুস্মিতা দেবও। তিনি বলেন, এ নিয়ে প্রয়োজনে সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে ঝাঁপাবেন তিনি। সুস্মিতা বলেন, এই অবনমনের মধ্য দিয়ে বরাক উপত্যকার সাংস্কৃতিক ও ভাষিক অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি প্রসঙ্গক্রমে ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রীকে জানিয়ে দেন। সংস্কৃতি কর্মী আশিস ভৌমিক বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোনওভাবে মেনে নেওয়া হবে না। এ নিয়ে সমস্ত আন্দোলনে তিনি পাশে থাকবেন বলে জানান।
শিলচরের সাংসদ বিজেপি নেতা ডা. রাজদীপ রায়ও এ দিন এ নিয়ে বিভাগীয় মন্ত্রীকে ফোন করেন, চিঠি লেখেন। তিনি তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরকে বলেন, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহৃত না বলে স্থানীয় জনতার আবেগ মারাত্মক আহত হবে। এর সঙ্গে বাঙালি, উপজাতি সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির বিকাশের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অজিত পাঁজা শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন। ১৯৯৩ সালের ৩০ এপ্রিল চালু হয় নিজস্ব স্টুডিও। শুরুতে ৩০ মিনিট, ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে শেষপর্যন্ত শিলচরকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছিল নিজস্ব অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য। গানবাজনা, নাটক, আলোচনার সঙ্গে সপ্তাহে চারদিন চালানো হতো আঞ্চলিক সংবাদও। বাংলার সঙ্গে চলত হিন্দি, মণিপুরি, চা জনগোষ্ঠী, ডিমাসা সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান।
শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের প্রধান আর কে আদিত্য বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি, তাই কার্যকর করতে হল।’ প্রোগ্রাম হেড চন্দ্রিমা দে জানান, ‘ডিডি আসামের অনুষ্ঠানে শিলচরকেও কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে।’
ডিডি শিলচরে স্টুডিও থাকা, অনুষ্ঠান করা—এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কয়েকজন অস্থায়ী কর্মীর সংসার প্রতিপালন। শিল্পীদের মধ্যেও এ নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। তবে একাংশ বুদ্ধিজীবীর অভিমত, চিঠিতে শিলচরের কথা আলাদা করে উল্লেখ নেই। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শিলচর কেন্দ্রকে গুয়াহাটিরই ইউনিট ধরে নির্দেশ পাঠায়। ভুল ধরিয়ে দিলে শোধরে নেয়। এ বারও সম্ভবত তা-ই হয়েছে। কিন্তু আদিত্যবাবু বা চন্দ্রিমাদেবী সেই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন না।