Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিলচরে উদযাপিত হলো বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মদিন
ওয়েটুবরাক, ১৭ এপ্রিল : রবিবার শিলচরেও মর্যাদার সঙ্গে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মদিন উদযাপিত হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে বিপ্লবীর প্রতিমূর্তির সামনে সকাল আটটয় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন নীলাঞ্জন পাল৷
বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির কার্যকরী সভাপতি শ্যামল কান্তি দেব অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন । এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রবীর কুমার রায়চৌধুরী, পীযূষকান্তি চক্রবর্তী , দীপঙ্কর চন্দ, শেখর পালচৌধুরী, সাধন পুরকায়স্থ , নীহাররঞ্জন পাল প্রমুখ। স্বাধীনতার যুদ্ধে যারা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, বছরের পর বছর আন্দামানের সেলুলার জেলে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে এই স্বাধীনতা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন তাদের স্মরণে এনে তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান বক্তাগণ৷
সঙ্গে আক্ষেপ ব্যক্ত করেন, সেলুলার জেলে বন্দি অবস্থায় অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে তিলে তিলে দেশের জন্য মৃত্যু বরণ করা অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর ইতিহাস বিলীন হয়ে যাচ্ছে । যাদের আত্মবলিদানে, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাঁদের অন্তত স্মরণে রাখার প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয় বলে মত ব্যক্ত করে তাঁরা বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটিকে সাধুবাদ জানান।
শিলচরের শ্যামাপ্রসাদ রোডে অবস্থিত বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের প্রতিমূর্তিতে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত, শিলচর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার দেব সহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবন নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন বিজন বিশ্বাস৷ দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মলয় ভট্টাচার্য ।
সমস্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রবীর কুমার রায়চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সফল করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দা সৌগত পাল বুদ্ধ।
উল্লাসকর দত্ত বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা কালিকচ্ছ গ্রামে ১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল জন্মগ্ৰহণ করেন। এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। অধ্যয়ন কালে জনৈক অধ্যাপক ভারতীয় সম্পর্কে কটুক্তি করায় তাঁর মধ্যে ইংরেজবিদ্বেষ মনোভাব তীব্র হয় । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিপ্লবী দলে যোগদান করেছিলেন। ১৯০৮ সালে বোমা তৈরির মামলায় ফাঁসির সাজা হয় এবং উচ্চ আদালতে আপিল করার পর ফাঁসির সাজা কমিয়ে আন্দামানের জেলে তাঁকে পাঠানো হয় এবং শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। ফলস্বরূপ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন । উল্লাসকর দত্ত ১৯২০ সালে অনেক কষ্টে জেল থেকে মুক্তি পান এবং স্বাধীনতার পর খণ্ডিত বাংলা ত্যাগ করে ১৯৪৮ সালে শিলচরে এসে আমৃত্যু স্ত্রী লীলা দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে শিলচরেই প্রয়াত হন এই মহান দেশসেবক। স্বাধীনতার যুদ্ধে যোগদান করা সংগ্রামীদের সরকার পেনশনের ব্যবস্থা করলেও উল্লাসকর তা গ্রহণ করেননি।