Barak UpdatesHappeningsAnalyticsBreaking News
গ্রহণকে জানার চেষ্টা, লিখেছেন ড. হিমাদ্রি শেখর দাস
১) ঘটনা-১: লাল টুকটুকে আপেল দেখেই বালক হনুমান ইয়া বড়া লাফ দিলেন, আর গিলে ফেললেন সূর্য। আসলে ভোরের সূর্যকে লাল আপেলের মত দেখাচ্ছিল। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল। অবশেষে সবার কাকুতি মিনতিতে হনুমান মুখ খুললেন, আর রেহাই দিলেন সূর্যকে।
২) ঘটনা-২ : মহাভারতের যুদ্ধে জয়দ্রথ বধ করার শপথ নিলেন বীর যোদ্ধা অর্জুন। সূর্যাস্তের আগেই তাকে বধ করবেন। যুদ্ধের দিন জয়দ্রথকে অর্জুনের পাশ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলেন কৌরবেরা। শপথ রক্ষা না হলে অর্জুন নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবেন। মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন শ্রীকৃষ্ণ। সুদর্শন চক্র দিয়ে সূর্যকে ঢেকে রাখলেন। চারিদিক অন্ধকার নেমে এলো। কৌরব শিবিরে খুশির হাওয়া। জয়দ্রথ ছুটে এলেন অর্জুনের ইচ্ছামৃত্যুর সাক্ষী হতে। ব্যস সুদর্শন চক্র সরে গেলো সূর্যের সামনে থেকে। আবার চারিদিকে উজ্জ্বল আলো। অর্জুন কালবিলম্ব না করে জয়দ্রথ বধ করলেন।
রামায়ণ এবং মহাভারতের এই দুই কাহিনীতে খুব সূক্ষ্মভাবে সূর্যগ্রহণের কথা বলে গেছেন বাল্মিকী এবং ব্যাসদেব। প্রশ্ন হলো, অতীতে কি গ্রহণের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা? গ্রিস, চিন এবং ভারতীয় সভ্যতায় গ্রহণ নিয়ে নানা মিথের কাহিনী বা নিদর্শনের কথা শোনা যায়। গ্রহণের সঠিক পূর্বাভাস প্রায় ৪০০০ বছর আগেও করে গেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এমন দাবিও অনেকে করে থাকেন। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে গ্রীস এবং চিনের জ্যোতির্বিদেরা বিভিন্ন সময়ে হওয়া চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের এক তালিকা প্রস্তুত করে গিয়েছিলেন। এতে পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের বেশ সুবিধেই হয়।
ইতিহাস বলছে, নিউটনের গতিসূত্র প্রয়োগ করে অ্যাডমন্ড হ্যালি সর্বপ্রথম নির্ভুলভাবে সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ৩ মে ১৭১৫-তেই হয়েছিল সেই গ্রহণ। তাঁর আর এক গবেষণাও বেশ উল্লেখযোগ্য। হ্যালি সর্বপ্রথম ধূমকেতুর কক্ষপথ নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ধূমকেতু পুনরাবৃত্ত (Periodic) কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমা করে। তাঁর নামানুসারেই ধূমকেতুর নাম হয় “হ্যালির ধূমকেতু”। ভারতের কিছু গবেষক আবার কম্পিউটার সফটওয়্যার এর সাহায্যে বের করার চেষ্টা করছেন যে, অতীতে আদৌ কুরুক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল কি না। তাহলে জানা যাবে মহাভারতের সময়কাল। এই বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কিছু গবেষণাও হয়েছে। এ নিয়ে আগামীতেই না হয় গল্প হবে। আসুন জেনে নিই গ্রহণ নিয়ে কিছু তথ্য। আজ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শিলচর তথা বরাক উপত্যকার অন্যান্য অঞ্চল থেকে দৃশ্যমান হয়। পূর্ণগ্রাস শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটায় আর শেষ হয় সন্ধ্যা সন্ধ্যা ৫ টা ১১ মিনিটে। তবে উপচ্ছায়ার রেশ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে যায়। উল্লেখ্য যে সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখা অত্যন্ত ক্ষতিকর হলেও চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখা ক্ষতিকর নয়। তাই পরের বার কোনও চিন্তা না করে গ্রহণ দেখবেন। এ জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২০২৫ পর্যন্ত। কারণ পরবর্তী পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে ২৪ মার্চ ২০২৫-এ।
(ড. হিমাদ্রি শেখর দাস আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক)