Barak UpdatesCultureBreaking News
‘রক্তিম’ অভিবাদন, লিখেছেন বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
১৫ অক্টোবরঃ শেষ শ্বাস নেবার আগ পর্যন্ত রক্তিমদা ( রক্তিম দাস) ছিল শহর শিলচরের এমন একজন মানুষ, যে ক্রমশ শিল্পের কাছ থেকে সবটুকু রস নিংড়ে নেওয়ার সাধনা শুরু করেছিল। নাচ, নাটক,গান— এই তিন দেশে অবাধ যাওয়া-আসার পাসপোর্টটা তার ছিল। ছিল একটা আগুনে জেদ। কিছু করে দেখানোর অদম্য তাগিদ।
নাচ অন্ত প্রাণ রক্তিম দা’কে ক্রমশ গান আর অভিনয়ের দিকে ঝুঁকতে দেখে অনেকের মতই চমকে উঠেছি। ২০১৮ সালের রূপম-এর নাটক প্রতিযোগিতায়, দেবারতি ভট্টাচার্য নির্দেশিত ‘চার্চ রোড সমন্বয় সমিতি’র ‘মাংস’ নাটকের ‘বিভু'(রক্তিম দাস) তাঁর অভিনয়ে এক নতুন ভাবনা উসকে দিয়েছিল।
আবার ২০১৮ সালেই পুজোর সময় তাঁর কথা-সুরে প্রকাশিত হয় প্রথম গানের অ্যালবাম ‘আমার গানে’। মৌসুমি পাল চৌধুরী, মেঘা দাস, প্রীতম দত্ত, অয়ন অধিকারীরা গাইলেন এতে। সুরকার-গীতিকার হিসেবে নতুন রক্তিম দাসের আত্মপ্রকাশ হলো। ২০১৯। পয়লা বৈশাখ। আবারও নতুন গান। ‘তোমায় খুঁজে আমার আকাশ।’ গানটি রক্তিমদা’র কথা ও সুরে গাইলেন সন্দীপ ভট্টাচার্য আর মেঘা দাস।
২০১৯ এর পুজোতেই মুক্তি পেল রক্তিম দা’র দ্বিতীয় গানের অ্যালবাম, ‘মেঘের ভেলা’। এতে মৌসুমি পাল চৌধুরী, রাজু সেনগুপ্ত, মেঘরাজ চক্রবর্তী, মেঘা দাস আর আমি গাইলাম। এই কাজটার সংগে যুক্ত থাকায় খুব কাছ থেকে দেখলাম রক্তিম দা’কে। নিজের কথা ও সুর নিয়ে তাঁর নিষ্ঠা, যত্ন, সংবেদনশীলতা অবাক করেছে। অবাক করেছে তাঁর ধৈর্য। উচ্চারণ, মডুলেশন থেকে শুরু করে অনুভূতি কেমন হবে সেটাও বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে সে। অ্যালবামের কাজ হয়েছে শহরের ‘স্টুডিও রিতিকায়’। রিতিকার নিরুপম দা( নিরুপম বড়ভূঁইয়া), রণবীর দা( রণবীর সিনহা)রাও কাছ থেকে দেখেছে তার সৃষ্টিশীল ‘পাগলামো’।
আজকের ডিজিটাল যুগে যখন সবাই ইউটিউবে মিউজিক ভিডিও আপলোড করছে তখন যারপরনাই খেটে সিডি বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। একটা রোখ না চাপলে তা হয় না। একরোখা না হলে হয়ত রক্তিমদা আজকের সময় দাঁড়িয়ে ৭০’ বা ৮০’ দশকের মেলোডি গানগুলোর সুরের ধাঁচ তার গানে ব্যবহার করতো না। গানের সিডির কাটতি নেই, জেনেও এর জন্য দিনরাত খাটত না। নিজের অসুখকে সারাতে সে সময় দেয়নি। বা একবার ও ভাবেনি। সময় দিয়েছে নিজের সৃষ্টিকে।
মানুষ কি তাঁর সময় ফুরিয়ে আসাটা টের পায়? জানি না। রক্তিম দা তুমি কি তা টের পেয়েছিলে? নিজের নানা পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব মেলাতে তাই অাঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল শিল্পকেই ! তোমার আকস্মিক চলে যাওয়া এ সব ভাবনার একটা মিছিল তৈরি করেছে তোমার কাছের মানুষদের মনে। তোমার সমালোচকরাও হয়ত ভাবছে তাই!
রক্তিম দা তোমার রোখ তোমাকে ভিড়ে মিশতে দেয়নি। সবাই এ রোখটা বাঁচিয়ে রাখতে পারে না দাদা । আপোস করে। তুমি করোনি। তাই তুমি তোমার মত করে একটা জীবন বেঁচে গেলে। কজন এমনটা পারে!
তোমায় অভিবাদন রক্তিম দা।