Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ভাষিক আগ্রাসন, ধরনায় বরাকবঙ্গ
১৮ জানুয়ারি : রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালিকে সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছে বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। আসাম ভাষা আইন লংঘন করে নিযুক্তির পরীক্ষায় অসমিয়া ভাষাজ্ঞান বরাকের কর্মপ্রার্থীদের জন্যও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে৷ জাতিবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালিকে ক্রমাগত বঞ্চিত করা হচ্ছে। কার্যত এ রাজ্যে সরকারি নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালির দুয়ার রুদ্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।অন্যদিকে, নাগরিকত্ব ইস্যুতে এ যাবত দেওয়া সরকারি প্রতিশ্রুতিগুলো রূপায়ণ হয়নি। ২০১৫ সালের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছিন্নমূল উদ্বাস্তু আশ্রয় সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এ রাজ্যে এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি৷ এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হবার পরও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি প্রণয়ন না হওয়ায় বিদেশি অজুহাতে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে । এই বিষয়গুলো নিয়ে উপত্যকার অন্যান্য স্থানের সঙ্গে সোমবার শিলচরেও প্রতিবাদী কর্মসূচি নিয়ে দু’ঘণ্টার ধরনা পালন করল বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন।
শিলচরে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে এই ধরনা কর্মসূচিতে খোলাখুলি অসন্তোষ ব্যক্ত করে বলা হয়, বহুজাতিক ও বহুভাষিক এ রাজ্যে সুকৌশলে সর্বক্ষেত্রে বাঙালিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। ফলে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এ নিয়ে সরকারের দরবারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। অসম ভাষা আইন লংঘন করে বরাকে বহু সরকারি বিভাগ তাদের কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে স্থানীয়ভাবে নিযুক্তি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা এখনও প্রতিশ্রুতির পর্যায়েই রয়ে গেছে। চন্দ্রধর দাসের মত শতবর্ষ পেরনো ব্যক্তিদেরও বিদেশি নাগরিক তকমা নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে এই শীতেও উপযুক্ত উপকরণ না দিয়ে চলছে চরম অমানবিক আচরণ ।
সরকারি কর্পাস ফান্ড থেকে বাঙালি ছাড়া অন্যসব জনগোষ্ঠীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। ১৯ মে ভাষা শহিদ দিবসটি উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এক্ষেত্রে দৃষ্টি আকর্ষণের পরও নির্বিকার ভূমিকায় রয়েছেন । বিধানসভায় বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এসব বিষয় উত্থাপন করলেও উপত্যকার অন্য প্রতিনিধিরা একেবারেই মৌন ছিলেন। ধরনা কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি সৌরিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, শিলচর আঞ্চলিক সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর , সহ-সভাপতি অমিত সিকিদার ও সীমান্ত ভট্টাচার্য, সাধন পুরকায়স্থ, সুজাতা বণিক প্রমুখ। ধরনার শুরুতে উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন আঞ্চলিক সমিতির সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা। সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির সিদ্ধান্ত মর্মে কাছাড় জেলা সমিতি ও শিলচর আঞ্চলিক সমিতি যৌথভাবে এই ধরনা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।
ধরনা কর্মসূচি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজীব রায়ের হাতে স্মারকপত্র তুলে দেওয়া হয় । তুলে দেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি সৌরিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য , কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অমূল্য কুমার পাল , কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত, জেলা সমিতির সংস্কৃতি সম্পাদক সব্যসাচী পুরকায়স্থ ও আঞ্চলিক সম্পাদক উত্তমকুমার সাহা। সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির সিদ্ধান্ত অনুসারে এদিন উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বাঙালির সুরক্ষা এবং নাগরিকত্ব নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।