Barak UpdatesHappeningsBreaking News
ভাষার অধিকার খর্ব করার প্রয়াস চলছে, প্রতিরোধের আহ্বান বরাক বঙ্গের
কথা বললে মামলা সাজিয়ে হেনস্তা!
ওয়েটুবরাক, ৩ ডিসেম্বর : শিলচরের হোর্ডিংকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভাষিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অর্জিত অধিকার বাঁকা পথে খর্ব করার পরিকল্পিত প্রয়াস শুরু হয়েছে বলে সতর্কবার্তা দিয়ে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন তার বিরুদ্ধে উপত্যকা জুড়ে প্রবল জনমত গঠনের ডাক দিল। বরাকবঙ্গ বলেছে, বিভাজনের বার্তা ছড়িয়ে উপত্যকার আত্মপরিচয়কে নষ্ট করে দেওয়ার কৌশলী উদ্যম বিপন্ন বরাকের জনগণকে আরও গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। তাই ভাষার প্রশ্নে মাটির টানে মতাদর্শগত বিরোধ ভুলে উপত্যকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সর্বস্তরের জনগণকে আপসহীন মনোভাব নেওয়ার আহ্বান রেখেছে বরাকবঙ্গ।
বৃহস্পতিবার বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেছেন , সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে একপেশে মনোভাব এবং উপত্যকার ভাষাকেন্দ্রিক ভাবাবেগকে দলনের যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাস্তবিকপক্ষেই তা উদ্বেগজনক এবং আগামী দিনের জন্য অশনি সংকেত। অসমিয়া হোর্ডিঙে কালিলেপন কিংবা সময় বেঁধে হুমকি দিয়ে তা সরানোর দাবির মত চমক সৃষ্টিকারী তৎপরতায় বরাকবঙ্গের কোনও সমর্থন নেই, থাকবেও না। এটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কোনও পন্থা হতে পারে না। তবে পরিতাপের বিষয়, এক্ষেত্রে আইনের শাসনকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অমানবিক হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। মামলা সাজিয়ে আন্দোলনরত অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসার উপযুক্ত সুযোগ না দিয়ে হেনস্থার চেষ্টা, পাশাপাশি বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করতে চাওয়ার ঘটনাক্রমকে উপত্যকার জনগণ কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
বরাকবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসন ও সরকার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ আচরণ করবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু রাজ্যের দুই উপত্যকায় প্রশাসনের বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে। বরাকে যেখানে ভাষাবিদ্বেষী উস্কানির অভিযোগ এনে পদক্ষেপ নিতে প্রশাসন তৎপর, ঠিক একই অভিযোগ উজান অসম এবং গুয়াহাটিতে উত্থাপিত হলেও সেখানে প্রশাসন মৌন ভূমিকা পালন করছে। গত কিছুদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কোনও কোনও স্থানে বাংলা ও হিন্দি সাইনবোর্ডে কালি লেপন, কোথাও তা সরিয়ে দেওয়ার হুমকি, এমনকি ভারত সেবাশ্রম সংঘের মত সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত হানা দিয়ে ভাষা সংক্রান্ত হুঁশিয়ারি দেওয়ার ঘটনা সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ এর পরও প্রশাসনকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি । রাষ্ট্রবাদী ভাবনার পরিসরে এই দ্বিচারিতা বাস্তবিকই বেদনাদায়ক।
মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি উত্থাপনকারীকে কখনোই দেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত বলা সঙ্গত নয় এই অভিমত ব্যক্ত করে বরাক বঙ্গের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনি সংস্থানের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের দাবি সংবিধানসম্মত এবং এই অধিকার থেকে কাউকে বিরত রাখা যায় না। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো অসহনশীল মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরছে’। বরাকবঙ্গ মনে করে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সবারই শ্রদ্ধা জানানো উচিত । সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, ১৯৬১ সালের সংশোধিত অসম রাজ্য ভাষা আইন অনুসারে বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক সরকারি ভাষা বাংলা। এর যথাযথ প্রয়োগের দাবির যৌক্তিকতা সরকার মেনে নিয়ে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করলেও মাঝেমাঝেই তার ব্যত্যয় ঘটছে । এই প্রবণতার জন্যই সম্প্রতি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বরাকবঙ্গ এই দাবি রূপায়ণে গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তৎপর ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে৷ এই অঙ্গীকারে ফের প্রত্যয় ব্যক্ত করে সাধারণ সম্পাদক দত্ত বলেছেন, ভাষাকে কখনও বিভাজনের হাতিয়ার করা উচিত নয়। নানা সমস্যায় জর্জরিত অসমকে ঘুরে দাড়াতে হলে এই মূহুর্তে সর্বস্তরে সদর্থক ঐক্যবোধই জরুরি।