India & World UpdatesHappeningsBreaking News
বাংলাদেশ হয়ে চিনের অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছায় আরাকান আর্মির কাছে, লিখেছেন সুবীর ভৌমিক
আরাকান আর্মি জঙ্গিদলের সঙ্গে মায়ানমার সেনার লড়াইয়ে চীন জঙ্গিদের পাশে এসে রয়েছে৷ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র চিন তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে৷ মাসদুয়েক আগেও ৫০০ অ্যাসল্ট রাইফেল, ৩০ ইউনিভার্সাল মেশিনগান, ৭০ হাজার রাউন্ড কার্তুজ এবং প্রচুর গ্রেনেড পাঠায়৷ সমুদ্রপথে ওইসব অস্ত্র প্রথমে মনাখালি সৈকতে পৌঁছায়৷ জায়গাটি বাংলাদেশের হলেও মায়ানমারের উপকূলীয় অঞ্চলের খুব কাছে৷
বাংলাদেশ, মায়ানমার ও হংকঙের সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে আমি যখন এই ব্যাপারে তদন্তে নেমে দেখতে পাই, ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে কোনও ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট ছাড়াই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র জাহাজ থেকে নামানো হয়৷ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৫০ রাখাইন কুলিকে সংগ্রহ করা হয়৷ সঙ্গে আরাকান আর্মির ৫০ সদস্য৷ কোনও অস্ত্র হাতে, কোনওটা কাঁধে নিয়ে হেঁটে তারা গুনদুং, রেজুপাড়া, উহালাপালোন ও পাগলিরারা পেরিয়ে যায়৷ পরে মাতামুহুরি-সেঙ্গুয়া অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে সিংপা হয়ে পৌঁছে যায় আরাকান আর্মির সন্ডাক শিবিরে৷
বাংলাদেশ কখনও ওইসব অঞ্চলে টহল দেয় না৷ গত বছরকয়েকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের কোনও অভিযান চালানোর খবর নেই৷ ফলে জঙ্গিরা যে নির্বিবাদে এত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গেল, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ কক্সবাজারের এক সাংবাদিক বললেন, আসলে বাংলাদেশ সেনা আরাকান আর্মিকে ঘাঁটাতে চায় না৷ কারণ প্রথমত, এরা বেশ শক্তিশালী৷ দ্বিতীয়ত, এরা মায়ানমার সেনাকে খুব চাপে রাখে৷ বাংলাদেশের জন্য যা মন্দ নয়৷ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়িত করার ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্ক ভাল নয়৷ কারণ বাংলাদেশকেই তাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে৷ তাই এরা ভারতের অপারেশন সানরাইজের মত অভিযানে নামতে নারাজ৷ ভারত তাদের কালাদান মাল্টিমডেল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের স্বার্থে গত বছর মিজোরামের দক্ষিণাঞ্চলে অপারেশন চালায়৷
চট্টগ্রামের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে, মায়ানমার সেনা আরাকান ও রোহিঙ্গাদের দমাতে বাংলাদেশ শান্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে৷ এরা তাই শান্তিবাহিনীর গতিবিধি নজরে রেখেছে৷ দিল্লি-ঢাকা সুসম্পর্কের দরুন একমাত্র বার্মিজরাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উপজাতি জঙ্গিদের কাজে লাগাতে পারে৷ আর অপারেশন সানরাইজ চালালে কী হবে! চিনের ওই অস্ত্রসম্ভার দক্ষিণ মিজোরামের পরভা করিডর দিয়েই রাখাইনে গিয়ে পৌঁছায়৷ সেদিককার খুমি গ্রামবাসীদের সঙ্গে জঙ্গিদের সুসম্পর্ক রয়েছে৷ পরভা অঞ্চলে আসাম রাইফেলসও বেশি রক্ষী কাজে লাগায় না৷ কারণ মিজোরাম শান্ত রাজ্য৷ কোনও জঙ্গি উপদ্রব নেই৷ তাই অপারেশন সানরাইজের মাধ্যমে আরাকান আর্মির বেশকিছু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আসাম রাইফেলস তাদের অতিরিক্ত বাহিনী সরিয়ে নেয়৷ এদের উত্তরপূর্বের অন্যান্য জঙ্গি উপদ্রুত অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে৷
চিন থেকে বিশাল অস্ত্র আসার খবর তাদের কাছেও ছিল বলে আসাম রাইফেলসের এক পদস্থ কর্তা বললেন৷ কিন্তু তারা জেনেছিলেন, ওই চালানে শুধু ২০০ রাইফেল ও ৪০ হাজার কার্তুজ রয়েছে৷ আসলে তারা যখন খবরটা পেয়েছেন, ততক্ষণে আরাকান আর্মি সমস্ত অস্ত্র নিজেদের নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নিয়েছে৷ ব্যাঙ্ককের এক অস্ত্র চোরাচালান বিশেষজ্ঞ বিষয়টি আরও বিশদে ব্যাখ্যা করেন৷ তিনি জানান, চিনের রাষ্ট্রায়ত্ত গোলাবারুদ কোম্পানি নরিনচু-ই আরাকান আর্মিকে গোলাবারুদ সরবরাহ করে৷ আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও এরাই অস্ত্রের জোগান দিত৷ ওই বিশেষজ্ঞের কথায়, নরিনচু-রই সহযোগী সংস্থা টিসিএল ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে দক্ষিণ চিনের মতস্য বন্দর হেইবেই-তে পুরো অস্ত্র ভর্তি করে৷ টিসিএলের এক ম্যানেজার লিন ওরফে ইথনার ওই জাহাজ ভরার দায়িত্বে ছিলেন৷ কিন্তু এটা জানা যায়নি এর খরচ কে বহন করল? টিসিএল নাকি চিনা গোয়েন্দা৷