Barak UpdatesHappeningsAnalytics
বৃষ্টি পড়ে, নর্দমা ভরে, শহর শিলচর জলে ভাসে, লিখেছেন রাহুল রায়
//রাহুল রায়//
‘জল পড়ে, পাতা নড়ে, পাগলা হাতির মাথা নড়ে’– বর্তমানে বৃষ্টিস্নাত শিলচরের মানুষের অবস্থাও এই পংক্তির অনুরূপ প্রায়। এই ছন্দে পরিস্থিতির কথা বললে শহরের অবস্থাটা দাঁড়ায় ‘ বৃষ্টি পড়ে, নর্দমা ভরে, শহর শিলচর জলে ভাসে’। জল পড়া ও তার ফলে গাছের পাতা নড়ার মতোই বৃষ্টি পড়া ও তার ফলে বন্ধ হয়ে থাকা নর্দমার জল শহরের রাস্তার ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়াটা এখন শিলচরের মানুষের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আর স্বাভাবিক হবেই বা না কেন, বছরের পর বছর থেকে শহরের মানুষ এই ঘৃণ্য, অস্বাস্থ্যকর চিত্র দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমাদের নীতিপ্রণেতাদের। দিনের পর দিন এই জায়গায় তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। বিধায়ক, বিভাগীয় মন্ত্রী এমনকী শাসক দলও বদল হয়েছে। যাঁরা একসময় ক্ষমতায় এলেই চিত্র বদলে দেবেন বলে জোর গলায় দাবি করতেন তারাই আজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত , কিন্তু সমস্যা রয়ে গেছে সেই তিমিরেই।
শিলচর শহরে এই অবস্থা নতুন নয়, আমরা আজকে শহর জুড়ে যে নিষ্কাশন ব্যবস্থা দেখতে পাই তাও কিন্তু কয়েক দশক পুরনো। এখানে মনে রাখতে হবে, এই নিষ্কাশন ব্যবস্থা যখন গড়ে তোলা হয়েছিল তখন শহরের জনসংখ্যা ছিল অনেক কম। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময় এই নিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর চাপ কম ছিল । কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরের জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে নিষ্কাশন ব্যবস্থাগুলোর ধীরে ধীরে নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করে। পাশাপাশি যোগ হয় সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করার ব্যাপারটাও। নালাগুলো ধীরে ধীরে ভরে উঠতে থাকে মাটি, প্লাস্টিক তথা অন্যান্য বর্জ্য পদার্থে। ফলে নালার গভীরতা কমতে থাকে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো শহরের বিভিন্ন অবাঞ্ছিত জায়গায় জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করার ফলে অনেক জায়গাতেই নালা সঙ্কুচিত হতে হতে একসময় বন্ধ হয়ে যায়।
রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই সব সমস্যা দূরীকরণে চেষ্টা করা হয়নি। শাসক বদলালেও ভোট ব্যাঙ্ক অটুট রাখার নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে একদিকে যেমন নালাগুলো শহরের জমা জল বের করতে পারে না, অন্যদিকে অগভীর নালা থেকে সামান্য বৃষ্টিতে জমা জল খুব সহজেই রাস্তার উপর চলে আসতে শুরু করে। ফলে নরসিংটোলা, মিশন রোড , উল্লাসকর দত্ত সরণীর মতো শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে বর্ষাকালের দৃশ্য নিত্যদিন।
মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টির ফলে শহরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো এই জল শহর তথা শহরবাসীর কাছে লজ্জাজনক। একই সঙ্গে নালা ভরে বেরিয়ে আসা এই জল শহর জুড়ে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
দেশজুড়ে যখন স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথা হচ্ছে, চিন্তা করা হচ্ছে, সেখানে শিলচরে নীতিপ্রণেতাদের অবহেলার জন্য জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে বিরাট আপোস করা হচ্ছে । বলতে বাধা নেই, তাঁদের নীতির অভাবের জন্যই সামান্য বৃষ্টিতেই নীল পাহাড়, সবুজে ঘেরা সুন্দর এই শহরের কয়েকটা বিশেষ জায়গা যেন হঠাৎ করেই নরকসদৃশ হয়ে যায় । পরিশেষে বলতে হয়, ক্রমশ বর্দ্ধিষ্ণু এই শহরটির নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সময় হয়েছে । রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী দীনেশ গোয়ালার সময় থেকেই শিলচরে মাস্টার ড্রেনেজ সিস্টেমের কথা বলা হচ্ছে । এরপর দশ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, শহরের বুকের ওপর দিয়ে এই সময়ে কয়েক শত গ্যালন জল বয়ে গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি । সরকার বদল হয়েছে সেই ২০১৬ সালে, কিন্তু শহরবাসী আজও বৃষ্টির মরশুমে সেই নালার জলে পা ডুবিয়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য, এখানে কোনও বদল হয়নি । বলতে গেলে, শিলচর শহরে ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ’