Barak Updates
বিনোদন পার্কের শিলান্যাস, সবুজ বাঁচাতে পথে নামলেন সংস্কৃতিকর্মীরা
৫ সেপ্টেম্বরঃ প্রতিবাদের মধ্যেই শিলচর গান্ধীবাগে শিলান্যাস হল বিনোদন পার্কের। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা ফলকের উন্মোচন করেন। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর, সাংসদ রাজদীপ রায়, পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল এবং জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। এর মধ্যে দিলীপবাবুই অনুষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে নজর কেড়েছেন। স্বদলীয় পুরসভা হলেও তিনি এই প্রকল্পের প্রকাশ্য বিরেধিতা করেন। তবু মঞ্চে তাঁর নাম লেখা একটি ফাঁকা চেয়ার ছিল।
অনুপস্থিত পরিমলবাবু বা লায়া মাদ্দুরির জন্য এই রকম কোনও ব্যবস্থা নজরে পড়েনি। পরিমলবাবুর অনুপস্থিতি নিয়ে সাফাই দেওয়া হয়, তিনি শিলচরে নেই। জরুরি কাজে গুয়াহাটিতে ব্যস্ত রয়েছেন। জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির জন্য মন্ত্রীর এই কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। অনুমান করা হচ্ছে, সবুজ ধ্বংসের অভিযোগ এবং বিনোদন পার্কের বিরোধিতার দরুনই দুইজনই এই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন। সংস্কৃতিকর্মী ও পরিবেশপ্রেমীরা আগেই জানিয়ে রেখেছেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে গ্রিন ট্রাইব্যুনালে যাবেন। বনমন্ত্রী-জেলাশাসকের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকলে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবাদে যে শহরের মানুষ পিছিয়ে থাকবে না, এ দিন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীর গাড়ির সামনে কালো পতাকাও প্রদর্শন করেন তাঁরা। নজরুল মূর্তির পাদদেশে জমায়েতের কথা বলা হলেও আসলে তারা দুইদিকে ছড়িয়ে পড়েন। একদল পূর্বঘোষিত স্থানেই ছিলেন। আরেকদল চলে গিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সামনে। পুলিশ-সিআরপিএফ যখন ডিআইজি বাংলোর সামনে ব্যারিকেড গড়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ এবং কংগ্রেসকে ঠেকাতে ব্যস্ত, তখনই মন্ত্রীর সামনে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সামনে কালোপতাকা দেখানো হয়।
তাঁরা পরে সেন্ট্রাল রোড, নরসিংটোলা হয়ে মূল বিক্ষোভে সামিল হন। সে সময় পুলিশ-সিআরপিএফের পক্ষে ব্যারিকেড টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে অবশ্য আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেডের ওপারে দাঁড়িয়েই বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের সোজা বক্তব্য, বিনোদন পার্ক, হোটেল-মল শিলচরে এলে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু ঐতিহ্যমণ্ডিত গান্ধীবাগকে ধ্বংস করে নয়। সব হারিয়ে গান্ধীবাগটাই এখন শিলচরবাসীর ফুসফুস।
ও দিকে মন্ত্রী হাজরিকাকে গান্ধীবাগের কোথায় কী হবে, ঘুরে দেখান সাংসদ রাজদীপ রায়। পরে ফলক উন্মোচন করে মন্ত্রী হাজরিকা বলেন, সংস্কৃতিকর্মীরা চাইলে যে কোনও সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনি সে জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি কথা বলতে নারাজ। কারণ এরা একে রাজনৈতিক রং দিয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, গান্ধীবাগের পরিত্যক্ত জমিতে এই বিনোদন পার্ক হবে।
বেসরকারি সংস্থা এই প্রকল্পটি নিয়েছে, পুরসভা মোটা টাকা পাবে। তা শিলচরের কল্যাণেই খরচ হবে। কবীন্দ্রবাবুর অভিযোগ, বিরোধীরা বিরোধিতা করবেই, তা স্বাভাবিক। কিন্তু এর তো একটা যুক্তি থাকবে। তিনি মনে করেন, এ দিন যারা বিরোধিতা করলেন, তারা অযৌক্তিকভাবেই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সাংসদ রাজদীপ রায় খোলামেলাই বলেন, রক্তচক্ষু দেখিয়ে এই প্রকল্প আটকানো যাবে না। তারা রক্তচক্ষুকে ভয় পান না।
বিক্ষোভে সামিল হয়ে প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, শুরু থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছিল। চার তারা হোটেল, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ইত্যাদির কথা উল্লেখই করা হয়নি। তাই তাঁউর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিল্যান্স সেল দিয়ে এর তদন্ত হোক।