NE UpdatesHappeningsBreaking News
বাল্যবিবাহ : ধৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২৭৮, বাড়ছে উৎকণ্ঠা
ওয়েটুবরাক, ৬ ফেব্রুয়ারি : অসমে তিনদিন ধরে বাল্যবিবাহের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। থানা-জেলে নিত্য ধৃতদের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। শনিবার মানকাচরে আত্মহত্যা করেছিলেন ২৭ বছর বয়সী এক মহিলা। ধলাইয়ে প্রাণ হারান ১৭ বছরের কিশোরী৷
বহু লড়াই করে পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিতে মা-বাবাকে রাজি করিয়েছিল কাছাড় জেলার ভাগার সপ্তদশী মাহমুদা বেগম লস্কর। বাল্যবিবাহ ঠেকাতে পুলিশ তিনদিন ধরে রৌদ্রমূর্তি ধারণ করায় চিন্তায় পড়ে যায় তরুণী। বিষয়টি বুঝতে পেরে সকালেই মা আলিবুন্নেসা বলে দেন, দেশের আইন মেনে চলতে হবে সবাইকে। কিছুদিন অপেক্ষা করেই বিয়ের দিনতারিখ পাকা করবেন তাঁরা। দুপুরে অনেকটা সময় ধরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে আলিবুন্নেসা খোঁজ করে দেখেন, ওড়না দিয়ে বাড়ির আমগাছে ঝুলে পড়েছে দশম শ্রেণির মাহমুদা।
কিছুদিন আগে ১৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন ১৮ বছরের অঙ্কুর নাথ। এখন কি তাকেও ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ! ওই আশঙ্কায় গুয়াহাটির বশিষ্ঠতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন ধিঙের যুবক। সঙ্কটজনক অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অঙ্কুর নাথের মতো আরও দুই-একজন আত্মহননের চেষ্টা করেছেন বলে খবর রয়েছে৷ অনেকে প্রকাশ্যে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
রবিবার রাত পর্যন্ত মোট ২২৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বনাথ (১৩৯), বরপেটা (১৩০), ধুবড়ি (১২৬), বাকসা (১২৩) এবং বঙ্গাইগাঁও (১১৭) ও হোজাইয়ে (১১৭)। ডিজিপি জিপি সিংহ জানিয়েছেন, বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত ৪০৭৪টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। তাঁর কথায়, “প্রতিটি বড় ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণ কার্য শুরু হয়। কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা কী নির্মাণ করব, তা আমাদের ওপর নির্ভর করে।” একাংশ মানুষ পুলিশের বিরুদ্ধে নানা উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছে বলে অভিযোগ করে ডিজিপি তাদের সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, আইনের পরিসরে থেকেই আসাম পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে৷
বাল্যবিবাহের মামলার তদন্তে নেমে বিভিন্ন জালিয়াতির তথ্যও পুলিশের হাতে আসছে। উদাহরণ দিয়ে রাজ্যের পুলিশপ্রধান জানান, কম বয়সের নথি হাতে পেয়েও বহু কাজি কাবিলনামায় পাত্রীর বয়স বেশি দেখিয়েছেন। অনেকে বৈধ কাজি নন। কাজি সেজে বছরের পর বছর বিয়ের কাজ করে গিয়েছেন। বাল্যবিবাহের মামলায় জড়িত ৬০ কাজি-পুরোহিতের মধ্যে অবৈধ কাজিও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা বাল্যবিবাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অভিযুক্ত বলে তাঁকে গ্রেফতারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ জানান। তিনি কাছাড় জেলার বড়খলায় এক জনসভায় বলেন, মোদি যখন বিয়ে করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর, যশোদাবেনের ১১। তাই হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাহস থাকলে তিনি যেন ডিজিপি-কে পাঠিয়ে মোদিকে ধরে আনেন।
প্রদেশ বিজেপি সভাপতি ভবেশ কলিতা ভূপেন বরার মন্তব্য হেসে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, মোদি যখন বিয়ে করেছিলেন, তখন না ভূপেন বরার জন্ম হয়েছিল, না বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন প্রণীত হয়েছিল। তাঁর কথায়, কংগ্রেস নিজেরা কোনও ভালো কাজ করতে পারে না, অন্যরা করলেও তা সইতে পারে না।