Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বাঙালিদের বাদ দিয়ে বরাকের অন্য জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক পরিষদ চেয়ে সাজুর বিল পেশ, খারিজ বিধানসভায়

ওয়েটুবরাক, ২১ মার্চঃ ১৯৪৭ সালের আগে থেকে বরাক উপত্যকায় বসবাসকারী  বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নের জন্য পৃথক স্বশাসিত পরিষদ চেয়ে বিধানসভায় বিল পেশ করেছেন সোনাইর এআইইউডিএফ বিধায়ক করিমউদ্দিন বড়ভুইয়া ওরফে সাজু। তাঁর এই বেসরকারি বিলে প্রায় সকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাঙালিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু মাইমাল ও কিরাত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।

তবে মঙ্গলবার বিলটি পেশ হওয়ার পরই ধ্বনিভোটে খারিজ হয়ে যায়। বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল, কৌশিক রাই, দীপায়ন চক্রবর্তী ও বিজয় মালাকারের সঙ্গে কংগ্রেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সমস্বরে এই বিলের বিরোধিতা করেন। তাঁদের আশঙ্কা, সাম্প্রদায়িক বিভেদের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়েছে। বরাক উপত্যকার শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে। একই ধরনের চক্রান্ত ২০০২ সালেও হয়েছিল বলে বিধানসভাকে জানান লক্ষীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাই। তিনি অন্যদিনের মতো এই বিল বিরোধিতায়ও বাংলায় বক্তৃতা করেন৷ বলেন, ২০০২ সালে মার-ডিমাসা দাঙ্গা হয়, ২৮ জনের মৃত্যু হয়। সেই দিনগুলিকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র চলছে, এই বিলে এরই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত মেলে৷ ১৯৪৭ সালের আগের যে সব জনগোষ্ঠীর কথা বিলে বলা হয়েছে, তাতে বাঙালিদের বাদ দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। জানান, বহু বাঙালি, চা জনগোষ্ঠীর মানুষ, হিন্দিভাষী জনতা স্বাধীনতার আগে থেকে বরাকে রয়েছেন। পরে অবশ্য করিমউদ্দিন বড়ভুইয়ার বেসরকারি বিলটি পাশ হতে পারেনি। ধ্বনি ভোটে খারিজ হয়ে যায়।

করিমউদ্দিন বড়ভুইয়া তাঁর বেসরকারি বিলের নাম দিয়েছিলেন পৃথক সঞ্চালকালয়ের অধীনে বরাক উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খিলঞ্জিয়া সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন পরিষদ আইন বা বরাক উপত্যকা আইন ২০২৩। তিনি তাতে বলেন, বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন আদিবাসী এবং  ক্ষুদ্র জনজাতির মানুষ বাস করেন। তাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়ন করে উন্নয়ন পরিষদ স্থাপন করা সমীচীন এবং প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

তাঁর ১৬টি চিহ্নিত জনগোষ্ঠী তথা ১৬টি প্রস্তাবিত কাউন্সিলে রয়েছে বর্মন ডিমাসা, মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, বড়ো, কোচ, মরিয়া ও কিরণ শেখ সম্প্রদায়, খাসি-জয়ন্তিয়া, হালাম ও তার উপগোষ্ঠী সমূহ, রংমাং নাগা ও কাবুই নাগা, ত্রিপুরা, চৈক্রিয়াম, মার, কুকি, মিজো বা লুসাই এবং রাংলং সম্প্রদায়, যারা স্বাধীনতার আগে থেকে বরাক উপত্যকায় বসবাস করছেন। তাঁর এই প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে মুহূর্তে সরব হন বরাক উপত্যকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ভাষাগোষ্ঠীর বিধায়ক। কৌশিক বলেন, এই সময় পাঁচটি স্বশাসিত উন্নয়ন পরিষদ রয়েছে বরাকে। আরও কয়েকটি একই ধরনের পরিষদ তৈরির প্রস্তাব অবিবেচনাপ্রসূত। তাই একে আইনে পরিণত করার প্রশ্নই ওঠে না বলে সভায় পাল্টা দাবি পেশ করেন কৃষ্ণেন্দু, কৌশিক, দীপায়ন, কমলাক্ষ, বিজয়রা। শেষপর্যন্ত বিলটি ধ্বনিভোটে খারিজ হয়ে যায়৷

বিধানসভার ভেতরে বিল খারিজ হতেই বাইরে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে স্বস্তি পরিলক্ষিত হয়৷ বিশেষ করে, বাঙালি নেতৃবৃন্দ শঙ্কায় ছিলেন, তাঁদের কোণঠাসা করার জন্য একটি বড়সড় চক্র সাজুকে ব্যবহার করছে৷ তবে ওই আশঙ্কা থেকে তাঁরা এখনও মুক্ত নন৷ সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মন্তব্য করেছেন, এই বিলের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য এখন নানাদিক থেকে উসকানি চলবে৷ তাঁরা সবাইকে সতর্ক করে দেন৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker