NE UpdatesHappeningsCultureBreaking News
বাংলা সাহিত্য সভার আয়োজনে ভাষা গৌরব সপ্তাহের উদ্বোধন শিক্ষামন্ত্রীর
গুয়াহাটি, ৩ নভেম্বর : এক ঐতিহাসিক অভূতপর্ব মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইল অসমের বাঙালি সমাজ। আজ গুয়াহাটির সাউথ পয়েন্ট স্কুলে “বাংলা সাহিত্য সভা, অসম” আয়োজিত “ভাষা গৌরব সপ্তাহ” উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ডা. রনোজ পেগু অসমের দুই উপত্যকার বাঙালিকে এক হয়ে রাজ্যের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আগাগোড়া ঝরঝরে বাংলা ভাষণ প্রদান করে তিনি বলেন, বরাকের বাঙালি ও ব্রহ্মপুত্রের বাঙালিকে একযোগে মাতৃভাষা মাধ্যমের স্কুল, নিজেদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তাকে এগিয়ে নিতে হবে। তবেই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা রূপে স্বীকৃতির এই উদযাপন প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়িত হবে।
তিনি বলেন, প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পঞ্চ সংকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক ভারতীয় যেন নিজের ভাষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে বহন করে, যেন হীনমন্যতায় না ভোগেন। সেই দিকটি মাথায় রেখে অসমিয়া-বাংলা সহ মারাঠি, পালি ও প্রাকৃতকে ধ্রুপদী ভাষা রূপে মর্যাদা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে-সব ভাষা হাজার বছর পার করেছে, সেই ভাষাগুলোই ধ্রুপদী। তিনি বলেন, ইংরেজিকে জানতে হবে কাজের জন্য বা আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের জন্য। হিন্দি জানতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে সংযোগের জন্য। কিন্তু যে জাতি মাতৃভাষাকে ভুলে যাবে, সেই জাতি ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বাঙালিদের বাংলা সাহিত্য সভার উদ্যোগে সকলে মিলে বাংলা মাধ্যমের স্কুলকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসা দরকার। সেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে ইংরেজি শেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে। ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণায় শিক্ষাবিদেরা বাল্যশিক্ষায় মাতৃভাষা মাধ্যমই শ্রেষ্ঠ বলেছেন। এটাই বিজ্ঞানসম্মত। তাই কেন্দ্রীয় সরকার নতুন শিক্ষানীতিতে সমস্ত স্কুলে মাতৃভাষা মাধ্যমকে বাধ্যতামূলক করেছে।
শিক্ষামন্ত্রী বাংলা সাহিত্য সভার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অসমের বাঙালিরা এই মঞ্চের মাধ্যমে নিজ ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নয়নে এগিয়ে আসুন। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী সাউথ পয়েন্ট স্কুলে বাংলা সহ বিভিন্ন মাতৃভাষা যে পড়ানো হয় তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নিজেদের শেকড়কে কেউ ভোলা উচিত নয়।
এদিন বিশিষ্ট অতিথি রূপে অংশগ্রহণ করেন অসম প্রকাশন পরিষদের সচিব প্রমোদ কলিতা। তিনি বলেন, অসমের বাঙালিরা নিঃসংকোচে নিজের মাতৃভাষা চর্চা করুক, মাতৃসংস্কৃতি বহন করুক। এখানে বাঙালিরা অসমিয়া জানেন, বলতে পারেন, লিখতে পারেন, চর্চা করেন। আর অসমিয়ারা তো বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগী। এই ভাষা গৌরব সপ্তাহের উদযাপনের দ্বারা অসমের দুটি ধ্রুপদী ভাষাগোষ্ঠী আরও নিবিড় সম্পর্কে আসবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনসের সঞ্চালক রাজীব বরঠাকুর বলেন, রাজ্য সরকার ওড়িশার মতো সমস্ত স্কুলে মাতৃভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করুক। এটা সময়ের দাবি।
সকলকে স্বাগত জানিয়ে বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রেরণা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. রনোজ পেগুর আহ্বানে বরাক-ব্রহ্মপুত্র একাকার করে এই ভাষা গৌরব সপ্তাহ উদযাপনে এগিয়ে এসেছে বাংলা সাহিত্য সভা। আমরা চাই অসমের প্রায় এক কোটি বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি রক্ষা হোক। আমাদের জাতিসত্তা অটুট থাকুক এবং অন্য ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় আরও বৃদ্ধি পাক।
এদিন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিবর্গকে পবিত্র ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উপলক্ষে ভাইফোঁটা দেন সাহিত্য সভার গুয়াহাটি শাখার সম্পাদক জয়া নাথের নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্য সভার নারীরা। সমবেত উলুধ্বনি ও “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা” শ্লোকের মধ্য দিয়ে মঞ্চে এই ভাইফোঁটা গ্রহণ করে শিক্ষামন্ত্রী ও অন্য অতিথিবর্গ আপ্লুত হয়ে পড়েন। উল্লেখ্য, বাঙালির পারিবারিক পরম্পরা এই প্রথম গণভাইফোঁটা রূপে পালন করল বাংলা সাহিত্য সভা, অসম।
এই বিরাট সমারোহে কটন কলেজের (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ড. নন্দিতা গোস্বামী ভট্টাচার্য, রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড.পান্নালাল গোস্বামী, সাহিত্য সভার উপদেষ্টা দেবব্রত রায় চৌধুরী, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ কৃষ্ণাঞ্জন চন্দ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী জ্যোতির্ময় পুরকায়স্থ, প্রাণতোষ রায়, করিমগঞ্জের দীনদয়াল উপাধ্যায় মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. জয়শ্রী চক্রবর্তী, মাইবং কলেজের বাংলার অধ্যাপক ড. মিথিলেশ চক্রবর্তী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও বাচিক শিল্পী অমল চক্রবর্তী। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সমবেত ধামাইলের মধ্যদিয়ে দিনজোড়া অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।