Barak UpdatesHappeningsBreaking News
বাংলাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে কমলাক্ষের পাশে তমাল বণিক
ওয়েটুবরাক, ৯ এপ্রিল : বাংলাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির প্রশ্নে বিধানসভায় বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের দাবিকে সমর্থন জানালেন শিলচর পুরসভার প্রাক্তন সভাপতি, কংগ্রেস নেতা তমালকান্তি বণিক৷ তাঁর কথায়, এ শুধু কমলাক্ষেরই নয়, ধ্বনিত হয়েছে বরাকের প্রত্যেক সচেতন ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছা। বরাকের যেসব নির্বাচিত বিধায়ক ওই দাবির প্রতি অসম্মতি প্রকাশ করেছেন, তাদের বরাকের কলঙ্ক বলে অভিহিত করে তাদের ধিক্কার জানান তমাল৷
তিনি বলেন, রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষিক গোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলাকে সরকারি সহযোগী হিসেবে স্বীকৃতির জন্য বিধানসভায় আর্জি জানিয়েছিলেন করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে এবং বিধানসভায় বরাকের অমেরুদণ্ডী বিধায়কদের লজ্জাজনক অবস্থানের ফলে বিষয়টিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর যেভাবে বরাকের বিধায়করা বাংলাবিরোধী এই খেলাতে সামিল হলেন সেটা ভাষাশহিদদের রক্তস্নাত বরাক উপত্যকার ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিধায়ক কমলাক্ষ বাংলাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যে বেসরকারি বিল এনেছিলেন তা সঙ্গত দাবি বলেই মন্তব্য করেন সদ্যপ্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি। তিনি হিসাব টেনে জানান, আসামে বড়ো জনগোষ্ঠীর সংখ্যা পাঁচ শতাংশ। তাঁদের ভাষাকে সহযোগী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একে উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেও জিনি জানতে চান, কিন্তু রাজ্যে ভাষিক জনসংখ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী বাংলাভাষীদের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের এতো অনীহা কেন? তাঁর মন্তব্য, এতে এটাই প্রমাণিত হয়, এই বিজেপি সরকার ও দল মুখে বরাক- ব্রহ্মপুত্রের মিলনের কথা বললেও কাজে ও বাস্তবে আদ্যন্ত বাঙালি বিরোধী। এই বিষয়ে বরাকের বিজেপি বিধায়করা যেভাবে কমলাক্ষ বিরোধিতার নামে ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগকে হেয় করলেন, সেটা শুধু ধিক্কারযোগ্যই নয়, প্রত্যেক ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষের কাছে চরম অপমান জনক আর এর মধ্যে যারা বাঙালি বিধায়ক রয়েছেন তাঁদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন তমাল বণিক।
সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন , বড়ো আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাঁদের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার তাদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিয়েছে, ভালো কথা; আসাম আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, সেই ৭৬৭ জনের পরিবারকেও একইভাবে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই যাত্রায় পৃথক ফল হয়েছে শুধু বরাক উপত্যকায় মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার স্বার্থে আত্মবলিদান দেওয়া শহিদদের সাথে। ১৯৬১-র বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের শহিদদের আর্থিক অনুদান তো দূরের কথা, এখন অবধি সরকারি ভাবে শহিদের স্বীকৃতিও মেলেনি । এছাড়া শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের লক্ষ্যে বরাক উপত্যকার জনমানস থেকে উঠে আসা গণদাবিকে কেন্দ্রীয় সরকারও অনেক বছর আগেই অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু সেই ভাষাশহিদ স্টেশন নামকরণের ব্যাপারটি বিভিন্ন অজুহাতে আটকে রাখা হয়েছে। তমাল বলেন, বর্তমানে বিজেপির বাঙালি ভোটারদের বোঝার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে যে, এই সরকার শুধু ভোটের স্বার্থে তাদের ব্যবহার করছে, আর প্রকৃত উন্নয়ন, যার সাথে জড়িয়ে আছে ভাষা সংস্কৃতি সহ মানুষের জীবনের মানের উন্নতি, সেটা এখনও বিশ বাঁও জলেই নিমজ্জিত।
রাজ্যের মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা বলেছেন, বিধানসভায় বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এটা তাকে কেন বলে দিতে হবে, সেটা সবাই জানে যে বিধানসভা, লোক সভা, রাজ্যসভায় বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা যায় , তার মানে এটি সরকারি ভাবে রাজ্যের স্বীকৃত ভাষা হয়ে যায় না। বাংলাকে সহযোগী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হলে বিধানসভায় বিল পাস করে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। যেটা বড়ো ভাষার ক্ষেত্রে হয়েছিল। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে কি তা হয়েছে, জানতে চান তমাল বণিক৷ তিনি মন্ত্রী হাজরিকার কাছে হয়ে থাকলে সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি দেখাতে চ্যালেঞ্জ জানান৷
তিনি প্রাক্তন বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন । বলেন, তিনি তো আসামে বসবাস করা বাঙালির স্বঘোষিত ঠিকাদার, কিন্তু এই বিষয়ে একটা টু শব্দও বেরলো না তাঁর মুখ থেকে। তমাল বিস্মিত, “সন্দেহজনক ভাবে তাঁর উদ্যোগে নবগঠিত বাংলা সাহিত্য সভার কোনও কর্মকর্তাদেরও এই ইস্যুতে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই৷”
বিজেপি বিধায়কদের স্বাভিমান বেচে দেওয়ার রাজনীতিকে তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়ে এবং কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের দাবি যা বরাকের প্রত্যেক মানুষের দাবি, তার প্রতি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে অবিলম্বে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা বাংলাকে রাজ্যে সহযোগী ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করার জোরালো দাবি জানান প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক পদ ফিরিয়ে দেওয়া কংগ্রেস নেতা তমাল কান্তি বণিক৷