SportsBreaking NewsFeature Story

পা-গোলক যখন ভাবায়, লিখেছেন হিমাদ্রি শেখর দাস

হিমাদ্রি শেখর দাস

ফুটবল জ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছে বিশ্ব। হার-জিতের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে আগামী কয়েকদিন। গত ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের জনসাধারণ। বিশ্বকাপ যিনি দেখেন না তিনিও খেলার শেষে আপডেট নিচ্ছিলেন। কিছু খেলোয়াড়ের নাম তো আকাশে বাতাসে ঘুরছিলো। মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার, এমবাপে-দের নিয়ে ভক্তদের মাতামাতি, বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ…এই নিয়ে গত এক মাস কিন্তু হাটে, ঘাটে, মাঠে উত্তেজনা চরমে ছিলো।

মানুষের ভাবনাই যখন অসীম তখন এর প্রভাব তো ফুটবলেও পড়বে! কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকদের ভাবনায় সেটি শুরু থেকেই ছিলো। তাই লোগোর মাধ্যমেই ভাবনার বহিঃপ্রকাশ পেলো। আপাতদৃষ্টিতে কাতার বিশ্বকাপের লোগোর দিকে তাকালে তেমন কিছু ভাবনা আমাদের মাথায় হয়তো আসবে না। কিন্তু অনেক ভেবেচিন্তেই পর্তুগালের কোম্পানি ‘আনলক’ লোগোটির ডিজাইন করেছিলো। গণিতের জগতের সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁরা লোগো দেখেই বুঝতে পেরেছেন যে সেটি ‘অসীম’ (Infinity)-এর প্রতীক। গণিতের দুনিয়ায় সেটি আড়াআড়ি শুয়ে থাকে, কিন্তু ফুটবলের দুনিয়ায় তা আবার খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। লোগোটি মূলত সারা বিশ্বকে এক সুতোয় গেঁথে রাখার প্রতীকী চিত্রের দিকে ইঙ্গিত করে। আবার সেটি দেখতেও আট সংখ্যার মত।

এই সংখ্যা আট নাকি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য আটটি সুন্দর স্টেডিয়ামের দিকে ইঙ্গিত করে। লোগোতে রয়েছে আটটি বাঁক। এই আটটি বাঁকের মাধ্যমে সেদেশের মরুভূমির টিলার প্রতিও আলোকপাত করা হয়েছে। কাতারের মত গরম আবহাওয়ার দেশে শীতকাল বেছে নেওয়া হয়েছিল আরামপ্রদ আবহাওয়ার কথা ভেবে, তাই লোগোটি করার মূল অনুপ্রেরণা এসেছে শীতকালে গায়ে পরা উলের শাল থেকে। আরব অঞ্চলে শীতকালে এই শাল হয়ে ওঠে সবার সাধারণ পোশাক। তাই এই আকৃতিতেই করা হয়েছে বিশ্বকাপের লোগো। লোগোটিতে একইসঙ্গে স্থানীয় আরব সংস্কৃতি এবং সৌন্দর্যকে খেলার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। লোগোটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিশ্বকাপের ট্রফির আকৃতির সঙ্গে খানিক মিল রেখে সেটি করা হয়েছে। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেই লোগোটিকে দেখে ‘যুগ্ম তারা’ (Binary star) ভেবেছিলেন কি না সেটা জানা নেই।

‘আল-রিহলা’- বাংলায় শব্দটির অর্থ ভ্রমণ। এবার কাতার বিশ্বকাপে ফুটবলটির এই নামকরণ করা হয়।  প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাডিডাস এর দাবি ছিল যে এটিই এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ব্যবহৃত সেরা বল। হাজারটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর এই বল তৈরি করা হয়। বলটির কী এমন বিশেষত্ব? বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব থেকে দ্রুত গতির বল ছিল আল রিহলা। ঘাসের উপর দিয়ে বাতাসের মধ্যে দিয়ে দ্রুত বলটি পৌঁছাচ্ছিলো। লক্ষ্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রেও সব থেকে নিখুঁত কাতার বিশ্বকাপের বল। কাতারের পতাকা, ঐতিহ্যবাহী নৌকা, স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং জাতীয় পতাকার রং থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করা হয়েছে বলটি। ১২টি বড় এবং আটটি ছোট প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে বলটিতে। কাতার বিশ্বকাপের দুটি সেমিফাইনাল ও একটি ফাইনালের জন্য নতুন বল ব্যবহার করা হয়েছিল। নাম ‘আল হিল্‌ম’। শব্দটির অর্থ হল ‘স্বপ্ন’। প্রযুক্তির যুগে ফুটবলে টেকনো টাচ্‌ থাকবে না সে কী হয়! বলের ভিতরে ছিল সেন্সর ও বিশেষ ধরনের চিপ। ম্যাচের আগে প্রতিটা বলকে চার্জ দেওয়া হতো। এর ফলে বলের ভিতরে থাকা চিপ ও সেন্সর কাজ করতো। আর ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্তের আপটেড ট্র্যাক হতো। এতে অফসাইড বুঝতে রেফারিদের সুবিধে হচ্ছিলো। একটি বল নিয়ে ফিফার কর্মকর্তাদের এমন ভাবনা সত্যি অবাক লাগে!

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির ওজন মোটামুটি ৬.১৭৫ কেজি হয়ে থাকে। এটা তৈরি করার জন্য ১৮ ক্যারেট সোনা (৭৫ শতাংশ) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ট্রফিটা লম্বায় ৩৬.৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ট্রফির ব্যাস ১৩ সেন্টিমিটার হয়। এই ট্রফির বেস মেলাকাইট স্টোন দিয়ে তৈরি হয়। ফিফার এই ট্রফিটি বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত একটি ট্রফি।

মজার ব্যাপার হলো ফাইনাল ম্যাচে বিজয়ী দল শুধুমাত্র অরিজিনাল ট্রফি নিয়ে সাময়িক আনন্দ উদযাপন করতে পেরেছিলো। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সেই ট্রফিটা ফেরত নিয়ে নেওয়া হয়। বিজয়ী দল আর্জেন্টিনা আসল ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারেন নি। বদলে তাঁদের একটু ডুপ্লিকেট ট্রফি দেওয়া হয়। এই ডুপ্লিকেট (Replica) ট্রফিটা ব্রোঞ্জের হয়ে থাকে। এর উপর সোনার জল করে দেওয়া হয়। যে ট্রফি নিয়ে এত লড়াই সেটি আবার জুরিখে ফিফার হেড কোয়ার্টারে চলে যাবে। ২০০৫ সালে ফিফা এটাই নিয়ম করেছিল যে বিজয়ী দল আসল ট্রফি বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে না। বেশ অবাক লাগছে, তাই না?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker