NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
পরমানন্দের প্রস্তাব প্রতিক্রিয়াশীল, নিন্দায় সরব এআইডিএসও
ওয়েটুবরাক, ২ অক্টোবর : শিলচর সফরকালে আসাম সরকারের এক বিধায়ক দলের নেতা পরমানন্দ রাজবংশী বরাক উপত্যকা, পার্বত্য জেলাসমূহ ও বড়োল্যান্ডের প্রাথমিক স্কুলে অসমিয়া ভাষা বাধ্যতামূলকভাবে পাঠদানের সুপারিশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এআইডিএসও’র কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা কমিটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের চিন্তাবিদ ও ভাষাবিদরা স্কুলের ছাত্ৰ-ছাত্ৰীদের জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্ৰে বলেছিলেন, বিশ্বের অত্যাধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে ইংরেজি ভাষাচৰ্চা যেমন প্ৰয়োজন, ঠিক তেমনি বিষয়বস্তু সহজেই জানতে, বুঝতে ও উপলব্ধি করতে মাতৃ ভাষা চৰ্চা করাও অতি প্ৰয়োজন। এর পাশাপাশি অত্যাধুনিক চিন্তাভাবনা সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতেও মাতৃভাষার গভীর চর্চা ও অধ্যয়নের প্ৰয়োজন।
এআইডিএসও সংগঠনেরও অভিমত, আসাম বহু ভাষা-সংস্কৃতি, জাতি-জনগোষ্ঠী ও ধর্মের মানুষের ঐক্যে সমৃদ্ধ একটি বৈচিত্ৰময় রাজ্য। তাই আসামেও ওই নীতি প্ৰযোজ্য হওয়া দরকার। এখানে সমস্ত ভাষিক গোষ্ঠীর ছাত্ৰ-ছাত্ৰীদের উপর অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। সংগঠন মনে করে, আসামের সকল জনগোষ্ঠী ও ভাষিক গোষ্ঠীর মানুষের সংযোগী ভাষা হিসেবে অসমিয়া ভাষা সৰ্বজনস্বীকৃত এবং রাজ্যের বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর জনগণ অৰ্থনৈতিক ও অন্যান্য প্ৰয়োজনে স্বেচ্ছায় অসমিয়া ভাষা শিখছেন। কিন্তু জোর করে ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইলে এর ফল উল্টো হবে। অতীতে এই ভাবে উগ্ৰ-প্ৰাদেশিকতাবাদীরা জোর করে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইলে মেঘালয় আসাম থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং বরাক উপত্যকায় মাতৃভাষা প্রেমীদের ঐতিহাসিক আন্দোলন সংগঠিত হয়, যার পরিণতিতে ১১ টি তাজা প্রাণ পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়ে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা করে।
পরবর্তীতে ১৯৭২, ১৯৮৬ সালে আবারও উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে তৎকালীন আসাম সরকার রাজ্যে ভাষিক সংখ্যালঘুদের মাতৃভাষার মর্যাদা কেড়ে নিতে চাইলে জনগণ তীব্র বিরোধিতা করেন এবং আত্মাহুতির বিনিময়ে ও আন্দোলনের চাপে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। মাতৃভাষা আন্দোলনে আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে অর্জিত ভাষা নীতিকে পদদলিত করার লক্ষ্যে বরাক উপত্যকা সফরে এসে আসাম বিধানসভার শাসকদলের বিধায়ক দলের নেতা পরমানন্দ রাজবংশী যে “প্ৰতিক্ৰিয়াশীল মন্তব্য” করেছেন তার তীব্ৰ নিন্দা ও ধিক্কার জানায় এআইডিএসও ৷
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে এ ধরণের উগ্ৰ-প্ৰাদেশিকতাবাদী ব্যক্তিদের জন্যই আসামের ভৌগলিক অখণ্ডতা আবারও সংকটের সম্মুখীন হবে। শুধু তাই নয় এধরনের মন্তব্য রাজ্যের বিভিন্ন ভাষিক-গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে বিভেদের জন্ম দেবে। ফলে পুঁজিপতি শ্ৰেণীর অবৰ্ণনীয় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রাজ্যের নিষ্পেষিত মেহনতি মানুষের বেঁচে থাকার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। তাই সংগঠনের তিন জেলা কমিটি ভাষাকে কেন্দ্ৰ করে বিভিন্ন ভাষিক – গোষ্ঠীর জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী উগ্ৰ প্ৰাদেশীকতাবাদী শক্তি ও সরকারের হীন চক্রান্তকে প্ৰতিহত করতে জাতি, ধৰ্ম, ভাষা, বৰ্ণ, নিৰ্বিশেষে সমস্ত অংশের জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে এই ধরনের “প্ৰতিক্ৰিয়াশীল ভাষানীতি” রাজ্যে চালু না করতে দাবি জানায়।