Barak UpdatesHappeningsBreaking News
নির্মল বায়ুতে দেশের সেরা তিনে শিলচর, তবে আহ্লাদের কিছু ঘটেনি, লিখেছেন ড. পার্থঙ্কর চৌধুরী
//ড. পার্থঙ্কর চৌধুরী//
এটা সত্যি একটা সুখদায়ক খবর যে, দীপান্বিতা বা দেওয়ালির আগের এবং পরদিন কেন্দ্রীয় প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে গোটা দেশের ২৩০টি ছোট, বড় এবং মাঝারি শহরে বাজি পোড়ানো নিয়ে যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাতে বিভিন্ন শহরে বাজি-পটকা পোড়ানোজনিত যে বায়ু প্রদূষণ হয়ে থাকে, তার পরিমাপ নিয়ে দেওয়ালির পরদিন স্বচ্ছ এবং নির্মল বায়ু রয়েছে, এমন তিনটা শহরকে শনাক্ত করা হয়েছে৷ ওই নির্মল বায়ুর তিন শহরের মধ্যে আমাদের শিলচর শহরও রয়েছে। অন্য দুটো হলো কর্নাটকের মাদিকেরি এবং তামিলনাড়ুর ওটি শহর।
প্রসঙ্গক্রমে বলে নিচ্ছি যে, এই বছর দেওয়ালির আগের দিনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কর্নাটকের কুর্গ জেলার মাদিকেরিতেই ছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, কুর্গ জেলার কড়াগু এবং আশপাশ এলাকার কফিবাগানগুলিতে রাত কাটানো। মাদিকেরি একটা ছোট শহর। আয়তনে মোটামুটি করিমগঞ্জের মতই বলা যায়। তবে পাহাড়ি অঞ্চল, রাস্তাঘাটে অনেকটাই চড়াই-উতরাই রয়েছে। ওই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময়ের মধ্যে বাজি-পটকা পোড়ানো ছিল একেবারেই নগণ্য। তেমন কিছু চোখে পড়েনি, পটকা ফাটানোর শব্দও শোনা যায়নি। নিঃসন্দেহে এমন শহর পরিচ্ছনতার দাবিদার হতেই পারে।
ওটি শহরে গিয়েছিলাম সাত-আট বছর আগে। সেটা একটা শৈল শহর। ইদানীং যাওয়া হয়নি। তাই এই দেওয়ালির পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এ বার আসি আমাদের শহর শিলচরে। বাতাসের বিভিন্ন উপাদান পরিমাপ করার কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে মেশিন, সেটি রাখা আছে শহরের প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ অফিসের ছাদে। বলা বাহুল্য, শহর শিলচরের ফুসফুস বলে যে জায়গাটা চিহ্নিত, তার মোটামুটি কেন্দ্রবিন্দুতে ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স মনিটরিং মেশিন’টি রাখা, জায়গাটার চারপাশে ফুটবল মাঠ, বিভিন্ন সরকারি আবাসন, সার্কিট হাউস, গান্ধীবাগ ইত্যাদি রয়েছে। আবাসিক স্থল একেবারেই নেই। নো বাজিপটকা, তাই এমন জায়গায় শুদ্ধ বায়ুমণ্ডল থাকারই কথা। জানিগঞ্জ, অম্বিকাপট্টি, বিলপার প্রভৃতি এলাকা হলে ছবিটা আলাদা হতো।
আরেকটা বিষয় একটু বলতে হয়, দেশের ‘ন্যাশনাল ক্লিয়ার এয়ার প্রোগ্রাম’ দ্বারা এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চালানো সমীক্ষার রিপোর্টে অসমের পাঁচটি শহরকে ‘নন অ্যাটেনমেন্ট সিটিজ’ বলে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো হলো গুয়াহাটি, নগাঁও, নলবাড়ি, শিবসাগর এবং আমাদের শহর শিলচর। গোটা দেশের ১৩১টি শহরের বায়ু প্রদূষণ নিয়ে ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, সেখানে রাজ্যের আর পাঁচটা শহরের মতো আমরাও পরীক্ষা উতরোতে পারেনি।
শহরবাসীর কাছে এখন দুটো অপশন রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়ালি রিপোর্ট খানা পড়ে আহ্লাদে আটখানা হওয়া বা দ্বিগুণ আনন্দে ষোলোখানা হয়ে আহ্লাদে গা ভাসিয়ে দেওয়া। দুই, এনসিএপির ফেব্রুয়ারি ২০২৩-র রিপোর্ট মোতাবেক আত্মবিশ্লেষণ তথা আত্মসংশোধনের পথ ধরে হাঁটা শুরু করা।
কথাগুলি শহরের অভিভাবক তথা বিদগ্ধজনদের উদ্দেশেই থাকল।
(ড. পার্থঙ্কর চৌধুরী আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তু ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন।)