NE UpdatesAnalyticsBreaking News
নিজেদের কার্যকালে তহবিলের ১৮.০৫ কোটি টাকা ব্যয় করেননি আসামের ১৪ সাংসদ
গুয়াহাটি, ১৮ মার্চ : বিভিন্ন দলের ১৪ জন সাংসদ গত পাঁচ বছরে লোকসভায় অসমের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অসমের প্রতিনিধিত্ব করা এই সাংসদরা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন অথবা লোকসভায় তারা কতটা তৎপর ছিলেন, নির্বাচনের মুখে সেসব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নিজ নিজ কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সাংসদ তহবিলের অর্থ কতটা ব্যয় করেছেন, সেসব এখন আলোচনার বিষয়বস্তু।
প্রসঙ্গত প্রত্যেক সাংসদ নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য বছরে পাঁচ কোটি টাকা পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে একজন সাংসদ মোট ২৫ কোটি টাকা পান। এই অর্থ যে খুব একটা কম তা কিন্তু নয়। কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই অর্থ সম্পূর্ণরূপে ব্যয় করার ক্ষেত্রে সফল নন অসমের সাংসদরা। কেন্দ্র সরকারের পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আসামের ১৪ জন সাংসদই নিজেদের কার্যকাল সম্পন্ন হওয়ার সময় তাদের স্থানীয় এলাকা উন্নয়ন তহবিলের মোট ১৮.০৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে সমর্থ হননি।
তথ্য অনুযায়ী রাজ্যের ১৪ জন সাংসদের নিজের এলাকা উন্নয়নের জন্য মোট তহবিলের পরিমাণ ছিল ২৫০.৫০ কোটি টাকা। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে ১৪৫.৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। অবশ্য জেলা প্রশাসন গুলোর ব্যাংক একাউন্টে থাকা অর্থ সুদ সহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৮.৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাংসদদের দেওয়া প্রকল্পের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ১৩৯.৬৭ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়। এর মধ্যেও এ পর্যন্ত ১৮.০৫ কোটি টাকা খরচ বাকি থেকে যায়। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সংসদদের স্থানীয় এলাকা উন্নয়ন তহবিলের সর্বাধিক ৩.৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেননি এ আই ইউ ডি এফ সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল। গুয়াহাটির সাংসদ কুইন ওঝা ২.৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেননি।
অন্যদিকে ব্যয় না করা অর্থের তালিকা অনুযায়ী এরপরে রয়েছেন নগাঁওয়ের সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ। তিনি ১.০৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেননি। এছাড়া কলিয়াবর এর সাংসদ গৌরব গগৈ ১.১৯ কোটি টাকা, ডিফুর সাংসদ হরেন সিং বে ১.৬১ কোটি টাকা, বরপেটার সাংসদ আব্দুল খালেক ১.০৩ কোটি টাকা, ডিব্রুগড়ের সংসদ রামেশ্বর তেলি ১.০২ কোটি টাকা, মঙ্গল দইয়ের সাংসদ দিলিপ শইকিয়া ১.৭৯ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেননি।
এছাড়াও যোরহাট কেন্দ্রের সাংসদ তপন কুমার গগৈ ১.০১ কোটি টাকা, করিমগঞ্জের সংসদ কৃপানাথ মালাহ ৮১ লক্ষ টাকা, লখিমপুরের সাংসদ প্রদান বরুয়া ৮২ লক্ষ টাকা, তেজপুরের সাংসদ পল্লব লোচন দাশ ৯১ লক্ষ টাকা, কোকরাঝাড়ের সাংসদ নব কুমার শরণিয়া ৩৯ লক্ষ টাকা এবং শিলচরের সাংসদ রাজদীপ প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা নিজেদের তহবিলের অর্থ ব্যয় করতে পারেননি।
লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ভীষণ ব্যস্ত। বেশ কয়েকটি দল নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এবং বিভিন্ন দলের প্রার্থীরাও নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়েছেন। লক্ষণীয়ভাবে এবার নির্বাচনে বেশ কয়েকজন সাংসদই টিকিট পাননি। অসমের চৌদ্দটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে নয়টি বিজেপির দখলে থাকার বিপরীতে তিনটি কংগ্রেসের দখলে এবং একটি এআইইউডিএফ-এর ও একটি নির্দল প্রার্থী নবকুমার শরণিয়ার দখলে রয়েছে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে ছিটকে গিয়েছেন বরপেটার কংগ্রেস সাংসদ আব্দুল খালেক। একইভাবে শাসকদল বিজেপিও এবার পাঁচ সংসদকে টিকিট দেয়নি। টিকিট থেকে বঞ্চিত বিজেপির পাঁচ সংসদ হলেন গুয়াহাটির কুইন ওঝা, ডিব্রুগড়ের রামেশ্বর তেলি, শিলচরের রাজদীপ রায়, তেজপুরের পল্লব লোচন দাস এবং ডিফুর হরেন সিং বে। এই পাঁচটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে বিজেপি নতুন প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে গুয়াহাটিতে বিজুলি কলিতা মেধি, তেজপুরে রঞ্জিত দত্ত, শিলচরে পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং ডিফুতে অমরসিং তিসোকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজেপি ডিব্রুগড়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং কাজিরঙ্গায় রাজ্যসভার সাংসদ কামাখ্যা প্রসাদ তাসাকে প্রার্থী করেছে।