Barak UpdatesHappeningsBreaking News
নামকরণ ঠেকাতে সরকারই ডিমাসা সংগঠনকে দিয়ে আপত্তি করিয়েছে, অভিযোগ বিডিএফের
ওয়েটুবরাক, ১০ আগস্ট : কেন্দ্র, পূর্বতন রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন সত্ত্বেও ভাষাশহিদ স্টেশন নামকরণ আটকাতে কিছু অখ্যাত ডিমাসা সংগঠনকে প্ররোচিত করে নিকৃষ্ট রাজনীতি করেছে সরকার৷ এই অভিযোগ করেছে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ)৷
গতকাল ভাষাশহিদ স্টেশন নামকরণের ব্যাপারে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা ডিমাসাদের আপত্তির অজুহাত দেখান। এতে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিল বিডিএফ।
বিডিএফ আয়োজিত এক সভায় আজ মঙ্গলবার ফ্রন্টের নেতা প্রদীপ দত্তরায় বলেন, এই ইস্যুতে প্রচুর আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ২০০৮ সালে এই ব্যাপারে রাজ্য সরকার ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ জারি করে। এরপর ২০১৬ সালে রাজ্যের তরফে কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন যায় এবং সবদিক খতিয়ে দেখার পর এর ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ২০১৬-তেই এই ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেন ও নামের বানান জানাতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া এর বাস্তবায়ন হলে যে আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হবে না বলে ২০০৮ ও ২০১৬ সালে দুবার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন স্পষ্টীকরণ দেয়।
প্রদীপবাবু বলেন, এতকিছুর পরও দু-একটি ভুইফোঁড় ডিমাসা সংগঠন ও ব্যক্তির স্মারকলিপির অজুহাত দেখিয়ে দিশপুর এটাকে আটকে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব আসলে দিশপুর নেতৃত্বের উগ্র জাতিবিদ্বেষ৷ মুষ্টিমেয় কিছু ডিমাসা লোককে সরকারই পরোক্ষভাবে এরজন্য মদত দিয়ে এসব প্রতিবাদ করাচ্ছেন।
বিডিএফ নেতা বলেন, এসব চক্রান্ত করতে গিয়ে সরকার একটি ব্যাপারকে বারবার ভুলে যাচ্ছে যে, ১৯৬১-এর ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলা ভাষার জন্য ছিল না৷ এটি ছিল সমস্ত মাতৃভাষার স্বাধিকার রক্ষার আন্দোলন৷ তাই বাঙালির পাশাপাশি সব ভাষিক গোষ্ঠীর লোক ওই আন্দোলনে স্বতস্ফুর্তভাবে যোগদান করেছিলেন। একই কারণে হরিনগর, জয়পুর ইত্যাদি এলাকার ডিমাসারাও এতে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অধিকাংশ ডিমাসাভাষী এই দাবিকে সমর্থন করেন৷ ডিমা হাসাওয়ের জনপ্রিয় নেতা দেবজিৎ থাউসেন ও বিজেপি বিধায়িকা নন্দিতা গারলোসা ২০১৯ সালে শিলচরে প্রকাশ্য জনসভায় এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন। ডিমাসা ও বাঙালিদের মধ্যে এই অঞ্চলে বহু যুগ ধরে যে পারস্পরিক সদ্ভাব ও সহমর্মিতার সম্পর্ক রয়েছে, এর উল্লেখ করে দত্তরায় অভিযোগ করেন, সরকার নিকৃষ্ট রাজনীতি করে একে নষ্ট করতে চাইছে।
বিডিএফ যুব ফ্রন্টের কল্পার্ণব গুপ্ত ও ইকবাল নাসিম চৌধুরী বলেন, বরাক কাছাড়ি রাজত্বের আগে কোচ ও ত্রিপুরা-রাজের অধীনে ছিল। তাই অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলে জনবসতি ছিল এবং তা যে বাংলাভাষী অধ্যুষিত ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ কারণ ডিমাসা রাজসভায়ও আইন কানুনের ভাষা হিসেবে অনেক আগে থেকে বাংলা ব্যবহৃত হতো। তাই মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকাকে বিতর্কিত মন্তব্য করার আগে একবার ইতিহাস পড়ে নেবার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
বিডিএফ সদস্যরা এদিন বলেন যে সরকার যেভাবে গত পাঁচবছর ধরে এই বিষয়কে ঝুলিয়ে রেখেছে এবং এখনও একই মনোভাব নিয়ে চলছে, তাতে বরাকবাসীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে৷ কারণ এই ইস্যুটি বরাকের ৩৫ লক্ষ মানুষের ভাবাবেগের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই সমমনস্ক সব সংগঠনের সাথে মিলে এবার জোরদার আন্দোলনে নামবে বিডিএফ। একই সাথে এই ইস্যুতে আইনের রাস্তায়ও তারা হাঁটবেন বলে এদিন জানিয়েছেন।