Barak UpdatesAnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/শেষ কিস্তিঃ প্রত্যর্পণ জরুরি, সঙ্গে বিলের সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করা হোক
৩১ মার্চঃ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ১৯৮৬ সাল থেকে ৯০ হাজার বিদেশিকে শনাক্ত করে। এর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৪০০ জনকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে বাকিদের বিতাড়ন করা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য, প্রত্যর্পণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তারা এই ইস্যু উত্থাপন করেন। যৌথ সংসদীয় কমিটি বিদেশি নাগরিকদের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদের বহিষ্কার বা প্রত্যর্পণের কোনও সুস্পষ্ট নীতি নেই বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জবাবও সন্তোষজনক নয়। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই যে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যর্পণের বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। কিছু কিছু রাজ্যের কাছেও তা সমস্যাবিশেষ। সত্য বললে, বহিষ্কার ঠিকঠাক না হওয়ার দরুনই দেশের, বিশেষ করে অসমের প্রকৃত নাগরিকদের ওপর এ এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে এই ইস্যুর সমাধান করতে হবে।
৫.৫২ কমিটি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, দেশে বিশাল সংখ্যক অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বসবাস করছে এবং তাদের একাংশের কাজকর্ম রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকিবহুল। এই প্রেক্ষিতে আইবি-র ডিরেক্টরের বক্তব্য, নিরাপত্তার জন্যই দেশের প্রতিটি মানুষের বায়ো-মেট্রিকস রাষ্ট্রের হাতে থাকা দরকার। কমিটির অভিমত, সে ব্যাপারে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আসামের ডিজিপি জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত বিদেশিদের বায়ো-মেট্রিকস, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফোটোগ্রাফ তোলার একটি প্রক্রিয়া কার্যকর হতে চলেছে। তাতে তাদের সহজে খুঁজে বের করা যাবে এবং গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। কমিটির জোরালো মতামত, মানবিকতা আর যাই বলা হোক, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অন্য সমস্ত বিষয়ের উর্ধ্বে। বিদেশ থেকে ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশ বড় উদ্বেগের এবং তা বন্ধ হতেই হবে। কমিটি তাই পুনরুল্লেখ করছে যে, সরকারকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো, টহল বাড়ানো, নজরদারিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং সর্বত্র বায়োমেট্রিকস প্রথা চালু করা খুবই দরকার। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অনুপ্রবেশকারী ধরে আটকে রাখতে হবে এবং ঠিক সময়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
৫.৫৩ সরকার দীর্ঘকালীন ভিসায় ভারতে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুদের সুবিধের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড ও আধার নম্বর, এনআরও অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি, স্বনিয়োজনের সুবিধা, থাকার জন্য আবাস ইউনিট কেনা, জেলাশাসকের পাশাপাশি মহকুমাশাসকদের শপথ গ্রহণ করানোর ক্ষমতা অর্পণ, পাকিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের রেজিস্ট্রেশন ফি ১৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করা ইত্যাদি নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে, কমিটি তা জানতে পেরে প্রশংসাই করে। কমিটির ইচ্ছে, দীর্ঘকালীন ভিসা নিয়ে যে সব শরণার্থী বসবাস করছেন, তাদের উদ্দেশে এইসব সুবিধে প্রদান অব্যাহত থাকুক, যাতে তারা ভারতের মাটিতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। দীর্ঘকালীন ভিসা ইস্যুর জন্য কম সময় নেওয়া, দীর্ঘকালীন ভিসার এক্সটেনশন লেটার দ্রুত প্রদান, ভারতে ফেরার নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, উদ্বাস্তুদের জন্য প্রদত্ত সুযোগসুবিধে ঠিকমত মিলছে কিনা তা দেখভালের জন্য নোডাল এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া, পাকিস্তান থেকে এমবিবিএস পাস করে আসা উদ্বাস্তুদের এখানে চিকিতসার অনুমতি, সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনপত্র প্রাপ্তি এবং সার্টিফিকেট প্রদানের মধ্যে সময় বেঁধে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিবর্গ মৌখিক ও লিখিতভাবে পেশ করে। এই রিপোর্টের প্রথম অধ্যায়ে সে সব বিষয়ে বলা হয়েছে। কমিটির ইচ্ছে, সেগুলি বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।
৫.৫৪ বিলে সংযোজিত স্টেটমেন্ট অব অবজেক্টস অ্যান্ড রিজনস অংশে কিছু ব্যাকরণগত ভুল এবং বানান ভুল কমিটির নজরে এসেছে। তাই প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে,
১. স্টেটমেন্টের ২ নং অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে, ভেলিডিটি অব দেয়ার ডকুমেন্টস হেভ এক্সপায়ারড-এর স্থলে লিখতে ভেলিডিটি অব দেয়ার ডকুমেন্টস হেজ এক্সপায়ারড।
২. স্টেটমেন্টের ২ নং অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে permanently, তা হবে permanently।
৩. স্টেটমেন্টের ২ নং অনুচ্ছেদে অতিরিক্ত একটি অলসো লেখা হয়েছে, তা তুলে দেওয়া যেতে পারে।
যৌথ সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, বিলে যে ভাবে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেইভাবে পাশ করা হোক এবং প্রয়োজনীয় যে সব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ যোগ করা হয়েছে, সেগুলি বিবেচনা করা হোক।
রাজেন্দ্র আগরওয়াল, চেয়ারম্যান, ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংক্রান্ত যৌথ কমিটি।
তারিখ, ৪ জানুয়ারি ২০১৯। স্থান, নতুনদিল্লি।