NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking News
তিন পুত্রের শোক ছাপিয়ে খাওয়া-পরার চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বৃদ্ধ মাহমুদুরকে
২৯ জানুয়ারিঃ বুক ফেটে যাচ্ছে বৃদ্ধের। কিন্তু চোখের জল ফেলার উপায় নেই। তিনি কাঁদতে থাকলে ৩ পুত্রবধূ, ১৩ নাতি-নাতনিকে কে সামলাবে! সবাই যে ২২ জানুয়ারি বিকাল থেকে নাগাড়ে কেঁদে চলেছে।
কে জানত এমন একটা দুঃসংবাদ শুনতে পাবেন তিনি! ৭৮ বছর বয়সী মাহমুদুর রহমানের তিন ছেলে মেঘালয়ের কয়লা খনিতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। গত সপ্তাহের দুর্ঘটনায় মৃত ৬ জনের মধ্যে রয়েছেন তাঁরাও। স্থানীয় পুলিশের কাছে খবরটা শুনেই তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কিন্তু একযোগে তিন পুত্রবধূর বুকভাঙা কান্না মুহূর্তে তাঁকে কঠিন করে তোলে। বললেন, “স্ত্রীকে হারিয়েছি অনেকদিন। বলা যায়, শূন্যতা নিয়েই বেঁচে ছিলাম। এখন যে আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”
পুত্রশোকের সঙ্গে দুশ্চিন্তাও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে। মকবুলের ২ ছেলে, ২ মেয়ে। আলির ৫ ছেলে, ১ মেয়ে। দিলোয়ারের ১ ছেলে, ২ মেয়ে। তাঁকে নিয়ে মোট ১৭ জনের সংসার। কোথা থেকে কী এনে তুলে দেবেন তাঁদের মুখে! স্ত্রীর মৃত্যুর পর খাওয়া-পরা নিয়ে সঙ্কটের মুখে পড়তে হয়নি। বরং তিন ছেলের সবাই বলছিলেন, তার ঘরে খেতে। মুম্বইয়ে থাকেন আরও তিন ছেলে। এরা সদ্যমৃত তিন ভাইয়েরই ছোট৷ তাঁরাও চাইছিলেন তাঁকে নিয়ে যেতে। শেষে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন, মকবুল বড় ছেলে, তাঁর সঙ্গেই খাবেন।
কিন্তু বৃদ্ধ মাহমুদুর রহমান খাওয়ার সমস্যাটা টের পেতে শুরু করেছিলেন লকডাউন ঘোষণার কিছুদিন পরই৷ কয়লা খনির কাজ হারিয়ে তিন ছেলেই মেঘালয় থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। প্রথমদিকে ভালই কাটছিল৷ বাবাকে বাড়িতে পেয়ে ছেলেমেয়েদের আনন্দ যেন আর ধরে না। স্ত্রীরাও বেশ খুশি৷ সকলের হাসিমাখা মুখ দেখে বৃদ্ধ নিজেও বেশ উচ্ছ্বল বোধ করছিলেন। কিন্তু দিনকয়েকেরর মধ্যেই সংসারে অনটন দেখা দেয়। ছেলেদের কেউ কাজের খোঁজে বেরোতে পারছিলেন না। কোনও দিন বেরোলেও কাজ জুটছিল না। কী করা, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না৷ সরকারি-বেসরকারি ত্রাণে কতদিন চলতে পারে! আনলক ঘোষণা হতেই সবাই যোগাযোগ শুরু করেন মেঘালয়ের পুরনো খনিমালিকের সঙ্গে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অপেক্ষার অবসান৷ ডাক পেতেই ছুটে যান তিন ভাই।
একই অবস্থা পাশের বাড়ির হিলালুদ্দিনের। ৩০ বছরের হিলালও খনিতে কাজ হারিয়ে একসঙ্গে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। কাজ জোটাতে না পেরে কয়লাখনিতেই ফিরে যান। বৈধ না অবৈধ উত্তোলন, সে সব ভাবার সুযোগ নেই। তাঁরও ঘরে বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী, ২ ছেলে, ১ মেয়ে। আছে বয়স কুড়ির বোন, তার আবার শারীরিক নানা সমস্যা।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাহমুদুর রহমান জানান, লকডাউনের শুরুতে তাঁর ৩ ছেলের মত হিলালও বলতেন, “একটা কাজ জোগাড় করে এখানেই থেকে যাব। কয়লা তুলতে আর ভাল লাগে না।” কিন্তু কাজ আর জুটল কোথায়!