Barak UpdatesHappeningsBreaking News

কোনও উচ্ছেদ নয়, ৯৮ এক্সকেভেটর শুধু চা গাছ তোলার কাজ করছে, বললেন ডা. রাজদীপ রায়

ভুল কথা ছড়ানো হয়েছে, আমি জোর গলায় বলছি, শ্রমিকদের মোটেও মাওবাদী বলা হয়নি"

ডা. রাজদীপ রায়

১৩ মে : কেন্দ্র সরকার ও আসাম সরকার মিলে ডলু চা বাগানে একটি গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এই যে উন্নয়নের ভাবনা, পরিকাঠামো মজবুততর করে তোলার পরিকল্পনা, এটা হঠাৎ করে হয়নি। শিলচরে একটি অসামরিক বিমানবন্দর নির্মাণের দাবি বহু পুরনো। এখানে যে কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দর রয়েছে, এটি একটা টিলার উপর। টেবিল-টপ পজিশন এর। একে সম্প্রসারণের কোনও সুযোগ নেই। এর দরুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে অবস্থায় বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছিল, এখনও প্রায় একই জায়গাতে রয়ে গিয়েছে। একে বড় করা যাবে না। কিন্তু পরিকাঠামোর দিক থেকে বলুন বা জনসংখ্যায়,  কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথায়, শিলচর অসমের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। গুয়াহাটির পরেই শিলচরের স্থান। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বড় শহরগুলির একটি হল শিলচর। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে একটি ভাল এয়ারপোর্ট দরকার। রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় শিলচরে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য কেন্দ্র সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে। টেকনিক্যালি একে অনুমোদন জানিয়েছে। পরে যখন জমির কথা আসে, রাজ্য সরকার ডলুর আড়াই হাজার বিঘা জমিকে বাছাই করে।

ওই জমিতে বিমানবন্দর তৈরির জন্য আপনারা এগোতে পারেন বলে গত ৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে বাগান কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকে   লিখিত ভাবে জানিয়েছে। সে থেকে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়। যাদের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে, অর্থাৎ কংগ্রেসের শাখা সংগঠন আইএনটিইউসি, বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠন সিআইটিইউ এবং ভারতীয় জনতা পার্টি সমর্থিত বিএমএস এই তিনটা সংগঠনকে জেলাশাসকের অফিসের সভাকক্ষে ডেকে আলোচনা হয়। ডলু ও তার ফাঁড়ি বাগানগুলিতে শ্রমিকরা এই তিন সংগঠনেরই কোনও না কোনওটির সদস্য। তাই তাদের সঙ্গেই মউ স্বাক্ষরের জন্য খসড়া তৈরি হয়, সবার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, এর পরই তা স্বাক্ষরিত হয়েছে। সবাইকে তা দেখার জন্য পাবলিক-ও করা হয়েছে। এ ছাড়াও চা বাগানের আরও বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির সঙ্গে কথা বলা হয়। সবাই একযোগে সায় জানান। কিন্তু এর পরই একটি গোষ্ঠী শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার কাজ করে চলেছে। শ্রমিকদের ভুল বোঝানো হয়েছে।  সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস, এআইইউডিএফ প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সবাই প্রজেক্টটাকে স্বাগত জানান। আমি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই স্পিরিটকে সাধুবাদ জানাই। সরকারকে তাঁরা এও বলেছেন, আপনারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যা যা করা প্রয়োজন, তা করতে পারেন।

কিন্তু এখন শ্রমিকদের ভুল বোঝানো হচ্ছে, আমরা নাকি শ্রমিকদের কাজ কেড়ে নেব। আমি আপনাদের একথা আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, ডলু টি এস্টেটে এখন মোট সতেরোশ শ্রমিক রয়েছেন। বারোশ স্থায়ী, পাঁচশ অস্থায়ী। তাঁদের কারও চাকরি যাবে না। একজনেরও নয়। সরকার মউয়ে স্পষ্ট বলেছে, শ্রমিকদের যে পুরনো দেনা-পাওনা রয়েছে, সেগুলি জিরাতের টাকা থেকে মিটিয়ে দেওয়া হবে। সেই কথামতো গত সোমবার ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও যাদের বকেয়া রয়েছে, তাদের টাকাও পর্যায়ক্রমে মিটিয়ে দেওয়া হবে। শ্রমিক ভাই-বোনদের বলছি, ভুল বোঝানোতে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। যারা টাকা পেয়েছেন, তাঁদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।

আর একটা কথা বলা হচ্ছে, চা বাগানটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমি একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিতে চাই। প্রতিটি চা গাছের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। সত্তর বছর পর পর পুরনো চারাগাছ তুলে নতুন চারা লাগাতে হয়। এখানে যে গাছগুলি রয়েছে, সেগুলি ষাট বছরের পুরনো। আর চার-পাঁচ বছর পরে এমনিতেই সেগুলিকে তুলে ফেলে দিতে হবে। এটা একটা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

আরেকটা কথা হচ্ছে, চা বাগানের মোট জমির ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশেই চা গাছ রয়েছে। ফলে আড়াই হাজার বিঘার পরও প্রচুর জমি থেকে যাবে। সেখানে নতুন করে চারাগাছ লাগানো হবে। ডলু চা বাগানেই নতুন চা গাছ দেখতে পাবেন।

আরও একটি ভুল কথা ছড়ানো হয়েছে, বিজেপি দল ও আমি চা শ্রমিকদের মাওবাদী বলেছি। আমি জোরগলায় বলছি, শ্রমিকদের মোটেও মাওবাদী বলা হয়নি। বরং বরাক সহ অসমের চা শ্রমিকরা পৃথিবীতে উন্নতমানের চা উৎপাদন করে আসামের সুনাম কামিয়েছেন। তাঁদের আমরা কখনও মাওবাদী বলিনি। আমরা যে কথা বলেছি, তা হল, কিছু কিছু নেতা রয়েছেন, বাম জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ কিছুদিন আগে বরাকের এক চা বাগান থেকে একজন সর্বভারতীয় স্তরের মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অসমে, বিশেষ করে বরাক উপত্যকায় তারা শেকড় গাড়তে চায়।

গতকাল যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা মোটেও উচ্ছেদ অভিযান নয়। এখানে একজনকেও উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। শুধুই বিমানবন্দরের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে চা গাছগুলোকে ওঠানো হচ্ছে।

আমি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আজই এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। গতকাল ৯৮টি জেসিবিকে চারাগাছ তোলার কাজে লাগানো হয়েছে। শুরুতে কিছু প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আজ কোথাও কোনও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নেই। তাঁরা নিজেরা বুঝতে পারছেন।

আপনারা জানেন, বড় প্রকল্প করতে গেলে এভাবেই করতে হয়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় বা মহাসড়ক এ ভাবেই তৈরি হয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দল সে সব কাজে একসঙ্গে ঝাঁপিয়েছিল। কেন্দ্রের সরকার এই এয়ারপোর্টটি করতে বদ্ধপরিকর। রাজ্য সরকারও তাড়াতাড়ি এর কাজ আরম্ভ করতে চাইছে। তাই শ্রমিকদের বলছি, কারও কোনও বক্তব্য থাকলে আমাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। কারও কোনও ন্যায়সঙ্গত দাবি থাকলে আমরা কথা বলতেই পারি। শুধু কারও বিভ্রান্তিকর কথায় কান দেবেন না। শ্রমিকদের স্বার্থ কোনও ভাবে বিঘ্নিত হবে না। উচ্ছেদ নয়, জমি অধিগ্রহণ চলছে। আমি আশা করি, আমরা শিলচরকে দেশের অন্যান্য শহরের সমান মর্যাদায় নিয়ে যেতে পারব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker