Barak Updates

আধুনিকতার মিশেলেও সরস্বতী পুজোয় বাঙালিয়ানা

১০ ফেব্রুয়ারি : রবিবার বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজো। সঙ্গীত, শিল্পকলা, বিদ্যা ও বুদ্ধির আরাধ্য দেবীর পুজোকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বরাক উপত্যকার গ্রাম ও শহরে উৎসবের আমেজ।

মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর আরাধনা বৈদিক যুগ থেকে চলে আসছে। আজকের আধুনিক যুগেও এই পূজার্চনায় কোনও খামতি নেই। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উৎসাহের সঙ্গে পুজোর আয়োজন করা হয়। ইদানিং বারোয়ারি মণ্ডপেও দেবীর আরাধনার তোড়জোড় দেখা যায়।

বিশেষ করে এই পুজোতে পড়ুয়াদের আগ্রহ লক্ষ্যণীয়। সকাল থেকেই পুজোর উপকরণ জোগাড়ে সবাইকে তৎপর হতে দেখা যায়। মেয়েরা আবার এই দিনটিতে রঙ বেরঙের শাড়িতে বাঙালি সংস্কৃতির রূপটাকে ফুটিয়ে তোলে। ছেলেরাও পায়জামা-পাঞ্জাবীতে ঠিক যেন বাঙালি পরিবারের এক প্রতিরূপ।

কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান পুজোকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। পুজোর প্রসাদ গ্রহণের পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে গিয়ে নানা ধরনের খাবারের সঙ্গে আড্ডার রেওয়াজ আজকাল বাড়তি হিসেবে পুজোয় যোগ হয়েছে। কিছু কিছু পরিবারে এই দিনটিকে পরিবারের নতুন সদস্যের বিদ্যারম্ভ বা হাতেখড়ির সূচনা হিসেবে উদযাপন করা হয়।

 

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যেমন, অভ্রআবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিস। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার আগেও কুল খায় না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষিদ্ধ। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, দোয়াত-কলম, পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে। পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের দল বেঁধে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়। পূজার পর দিন পুনরায় পূজার পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। এরপর পূজা শেষ হয়।

সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিক কালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার পুথি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল।

শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। ইংরেজি ‘ম্লেচ্ছ’ ভাষা হওয়ায় সরস্বতী পূজার দিন ইংরেজি বইয়ের পূজা নিষিদ্ধ ছিল। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা তৈরি করে পূজা করতেন। বর্ধমান মহারাজার পূজায় বিশেষ সমারোহ হত। দূরদুরান্ত থেকে মানুষ এই পূজার বিসর্জন দেখতে আসত। পূজা উপলক্ষে দু’ ঘণ্টা আতসবাজিও পোড়ানো হত। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker