Barak UpdatesHappeningsBreaking News
কাগজ কল: বিএমএস সদস্যরাই মোদি-সর্বার বিচার চেয়ে ঘরে ঘরে যাবেন
১৬ জানুয়ারি: এতদিন তাঁরা বিএমএস অনুমোদিত কাছাড় কাগজ কল মজদুর সংঘের সদস্য হিসাবে মোদি সরকারের পাশে ছিলেন৷ বিশ্বাস করতেন, সর্বানন্দ সোনোয়াল-চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিরা মিল খোলার জন্যই চেষ্টা করে চলেছেন৷ পাঁচ বছরেও মিল না খোলায় এখন বুঝে গিয়েছেন, সবই লোকদেখানো৷ কেউ চান না মিল চালাতে৷ তাই মজদুর সংঘের কর্মকর্তারা পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানিয়ে দিয়েছেন, এ বার মোদি ও সোনোয়াল সরকারের বিরুদ্ধে জনতার কাছে বিচার চাইবেন৷ মোদি জনসভায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, পেপার মিল পুনরায় চালু করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীও বলেছিলেন, এটা চালু করতেই হবে৷ এ আমার প্রেস্টিজ ইস্যু৷ কিন্তু কেউ সে ব্যাপারে ন্যূনতম উদ্যোগ নেননি৷ তাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য নরেন্দ্র মোদি ও সর্বানন্দ সোনোয়ালের শাস্তি চাইবেন তাঁরা৷ পথসভা করবেন, প্রচারপত্র বিলি করবেন৷
পেছনে গেরুয়া ব্যানার৷ স্পষ্ট করে লেখা, কাছাড় পেপার মিল মজদুর সংঘ৷ কর্মচারী মহাসংঘ ও বিএমএস অনুমোদিত৷ এর তলায় বসেই শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন সভাপতি উৎপল দত্তচৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ কৃষ্ণ দেবনাথ, কার্যবাহী সদস্য অজিত রায়৷ সঙ্গে এইচপিসি ফ্যামিলি অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন ফোরামের সন্তোষ ভট্টাচার্য৷ ছিলেন নবেন্দু দে, সঞ্জীব দাস, সাধন ঘোষ প্রমুখ৷ তাঁরা জানান, ২০১৬-র ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন মিলেছে৷ এর পর আর বেতন নেই৷ ছেলেমেয়েরা বাধ্য হয়ে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিয়েছেন৷ গৃহনির্মাণের ঋণ নিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা কিস্তি দিতে পারছেন না৷ অসুস্থ হলেও চিকিৎসা হচ্ছে না৷ অবসরপ্রাপ্তদেরও মিলছে না বকেয়া৷ পেপার মিলে উৎপাদন বন্ধের পর বিনা চিকিৎসায় এ পর্যন্ত ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে তিনজন আত্মহত্যা করেছেন৷
সভাপতি উৎপলবাবু বলেন, নেতামন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করলেই মন্তব্য করেন, চুরি করে মিল লাটে তোলা হয়েছে৷ কিন্তু চুরির বিরুদ্ধে আজও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ সিবিআই একবার এসে আর নড়াচড়া নেই৷ তাঁরা চান, দোষীদের শাস্তি হোক৷
শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আংশিক মিটিয়ে দেওয়ার জন্য ২০১৮-র আগস্টে ৯০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছিল৷ তাও রিলিজ হয়নি৷ বলা হচ্ছে, এনসিএলটি-তে মামলা চলার দরুন এখন তা রিলিজ করা যাবে না৷ উৎপলবাবুদের প্রশ্ন, মামলা তো এর একমাস আগেই অর্থাৎ ২০১৮-র জুলাইয়েই হয়েছে৷ তাহলে একমাস পরে ওই টাকা মঞ্জুর হল কী করে? এ ছাড়া, হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা৷ এর অধীনস্ত মিলগুলির মালিক হলেন রাষ্ট্রপতি৷ তবে কি দেশের রাষ্ট্রপতি দেউলিয়া হয়ে গেলেন?
সন্তোষ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, দুই বছরের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পর্যন্ত জমা পড়েনি৷ ২০১৬-র ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের বেতন হয়েছে৷ যথারীতি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও কেটে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু ২০১৪-র পরে ওই টাকা জমা পড়েনি৷ সে জন্য গঠিত ট্রাস্টের ট্রাস্টিদের তাঁরা দায়ী করেন৷ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজেদের বেতনের কাটা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন তাঁরা৷
কৃষ্ণ দেবনাথ, নবেন্দু দে, অজিত রায়রা জানান, তাঁরা এই সব বিষয়ে এতটাই হতাশ যে, কার কাছে যাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না৷ হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছেন, সেখানেও একের পর এক বিচারপতির বদলিতে মামলার শুনানি এগোচ্ছে না৷ মানবাধিকার কমিশনে গিয়েছিলেন৷ সরকারকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে৷ কিন্তু কে শোনে কার কথা৷ তাই তাঁরা এখন জনতার দরবারে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷