Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News
কাঁদতে কাঁদতেই দিলীপ-জ্যোৎস্না বললেন, শাহজাহান বাড়ি যাচ্ছে বলে আনন্দ হচ্ছে
ওয়েটুবরাক, ১৮ নভেম্বর: মৃতপ্রায় শাহজাহানকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়ার পাশ থেকে উদ্ধার করেছিলেন ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস-এর জওয়ান দিলীপ দাস। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে তাঁর শুশ্রূষা ও চিকিৎসা করান তিনি ও তাঁর স্ত্রী জোৎস্না দেব। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই বৃহস্পতিবার শাহজাহান সুস্থ হয়ে বাবার কাছে ফিরে গেল। শাহজাহান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তাঁর বাড়ি৷ সেখানেই সাড়ে তিন বছর আগে একদিন তাঁর মামা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। এতে তার বা কান ও ডান হাত কেটে যায়। তারপরে তাকে মৃত ভেবে কাঁটাতারের উপর দিয়ে ছুঁড়ে দেয়। তিনি এসে পড়েন ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কৈলাশহরের শ্রীরামপুরে, কাঁটাতারের বেড়ার কাছে। দীর্ঘ সময় সেখানে পড়ে ছিলেন৷ তখনই সীমান্ত সড়ক দিয়ে যাবার সময় ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস-এর হাবিলদার দিলীপ দাসের নজরে পড়েন৷ তিনি তাঁকে উদ্ধার করেন।
দিলীপ দাস বলেন, “আমি যখন দেখি, আক্ষরিক অর্থেই শাহজাহান মৃতপ্রায়। তড়িঘড়ি করে তাকে কৈলাশহরের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই।” পরে পাঠানো হয় আগরতলার গোবিন্দ পন্থ হাসপাতালে। সেখানে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু তার সঙ্গে কোনও পরিচয়পত্র না থাকার দরুন হাসপাতাল থেকে ছাড়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে কথা বলে তাকে হাসপাতালেই সাময়িক সময়ের জন্যে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। দিলীপ দাস জানান, তার খাবারের জন্যে জিবি বাজার কমিটির সঙ্গেও কথা বলে ওর জন্য প্রয়োজনে সাহায্য সহযোগিতা করতে আহ্বান জানান। তারাও রাজি হয় সাহায্য করার জন্যে। তার স্ত্রীও বাড়ী থেকে খাবার এবং কিছু টাকা পয়সা দিতেন। এর মধ্যে শাহজাহানকে আগরতলা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর স্ত্রী ও তিনি শাহজাহান-এর জন্যে প্রতি শুক্রবার ও রবিবার হাসপাতালে ভালো খাবার নিয়ে যেতেন। এমনকি মাঝে মধ্যে তাকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতেন, গায়ে তেল লাগিয়ে স্নান করিয়ে দিতেন।
দিলীপ দাস জানান, তাঁর এক আত্মীয় বাংলাদেশের পুলিশে সিলেট জেলায় কর্মরত রয়েছেন। তিনি তাঁর ওই আত্মীয়ের সঙ্গে শাহজাহানের বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর ওই আত্মীয় শাহজাহানের বাড়ীর ঠিকানা বের করেন। তারপর দিলীপ এবং তাঁর স্ত্রী জোৎস্না তাঁদের ফোন দিয়ে ভিডিও কল করে শাহজাহানকে তার বাবা মানিক মিঞার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতেন। সেই থেকে দুই বছর ধরে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে৷ ভিডিও কলে মা-ছেলেরও কথা হয়। তাকে ফেরত নিতে কোথায়, কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে, এর পরামর্শ দেন। কিন্তু এর মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে যায়। সে জন্য তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠাতে দেরি হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন জোৎস্না দেব। তিনি বলেন, “এর পরে আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে যোগাযোগ করি। ফেরত যাবার দিন দুই দেশের কর্তৃপক্ষই ঠিক করে দেন। শাহজাহান-এর বাবা মানিক মিঞা আমাদের কে বললেন যে, আজ যেন আমরা সবাই থাকি তাকে ফেরত দেবার সময়। তাই ছেলের স্কুল বন্ধ করে সে বৃহস্পতিবার আগরতলা সীমান্তে আসি৷”
রুমালে চোখ মুছতে মুছতে জোৎস্না দেব বললেন, “কষ্ট হচ্ছে ছেলেটা চলে যাবে বলে, আবার আনন্দও হচ্ছে, শাহজাহান তো তার বাড়ি যাবে, মা-বাবাকে ফিরে পাবে।
বৃহস্পতিবার শাহজাহানের সঙ্গে দেশে ফিরে গেলেন ত্রিপুরায় আশ্রিত মোট ৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক৷ তাঁরা সবাই বিভিন্ন সময়ে এ পারে ধরা পড়েন। সবাই ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হুসেন বলেন, আগরতলার মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন ছয় বাংলাদেশি নাগরিক৷ তাঁদেরই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।