Barak UpdatesHappeningsBreaking News

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অফলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিলচরে এআইডিএসও-র বিক্ষোভ

১২ সেপ্টেম্বর: অতিমারীর ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতার পরিস্থিতিতে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত সেমিস্টারের পরীক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বিরুদ্ধে শনিবার এআইডিএসও শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শহরের বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই বিক্ষোভে অংশ নেয়৷ তারা বলে, সারা দেশে, বিশেষ করে আসামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যখন বেহাল, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার যখন ভয়াবহ, এমন সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সহ সামগ্রিক জনজীবনের পক্ষেই অত্যন্ত বিপজ্জনক।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, রাজ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নব্বই হাজারেরও বেশি হবে৷ বিশাল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক আইসিইউ ও বেড হাসপাতালে নেই, এমনকি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতিও রয়েছে । তাঁর মতে, রাজ্যে আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও, প্রায় এক হাজার রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মারা গেছে । এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের সংক্রমিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার নির্দেশ কোনও অবস্থায় সঠিক হতে পারে না‌৷ এআইডিএসও নেতৃবৃন্দ বলেন, তাদের সর্বভারতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজ্যের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের নিকট পাঠানো হয়েছিল। তাতে উল্লেখ করা হয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষার কোনও বিকল্প নেই, কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসে পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয় ।

তাছাড়া, বহু ছাত্র-ছাত্রী এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহু দূরে নিজেদের ঘরে রয়েছে । তাদের ফিরে আসার পথে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। এদিকে লকডাউনের পূর্বে পাঠ্যক্রমের সামান্য কিছু অংশই পড়ানো সম্ভব হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাবর্ষ রক্ষা করা ও পরবর্তী পর্যায়ের পড়াশোনা,চাকরির সুযোগ ইত্যাদির প্রয়োজনে বিজ্ঞানভিত্তিক বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুধাবন করা প্রয়োজন। সংগঠনের প্রস্তাব ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের বিগত সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ও বর্তমান সেমিস্টারের লকডাউন ঘোষণার পূর্বে যতটুকু ক্লাস হয়েছিল তাকে ভিত্তি করে ‘এসাইনমেন্ট’ অনলাইনে বা ডাকযোগে সংগ্রহ করে চূড়ান্ত বর্ষের ফলাফল ঘোষণা করুক । একই ভাবে ব্যাক পেপারের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করুক এবং এই পদ্ধতিতে কোন ছাত্রছাত্রী সন্তুষ্ট না হলে তার জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা আয়োজনের বিশেষ ব্যবস্থা করুক । এতে ছাত্রছাত্রীদের সংক্রমণের সম্ভাবনা যেমন কম হবে এবং চাকরি বা অন্য প্রয়োজনে যাদের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন, তারাও লাভবান হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের জীবন ও কর্মজীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে ।

বর্তমানে বহু ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোভিড কেয়ার সেন্টার হিসেবে করোনা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে । এই অবস্থায় আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, পরিস্থিতির গুরুত্ব কেন্দ্র সরকার ও ইউজিসি’র কাছে তুলে ধরা।

এ দিন বিক্ষোভ চলাকালে ছাত্রছাত্রীরা জোরালো দাবি উত্থাপন করে যে, সংক্রমণের উর্দ্ধগতি থাকার এই মুহূর্তে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি উদ্ভাবন না করে ছাত্রছাত্রীদের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার যে অযৌক্তিক নির্দেশ আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জারি করেছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের জীবনকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে গ্রহণ করা হলে ছাত্র-ছাত্রীরা মেনে নেবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker