NE UpdatesHappenings

দেবশর্মা এনআরসি রিভেরিফিকেশন চাওয়ায় উদ্বেগে ফোরাম ফর সিভিল রাইটস, করিমগঞ্জ

ওয়েটুবরাক, ১৭ মে: এনআরসি রি-ভেরিফিকেশন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা আবেদনের সাম্প্রতিক খবরে ‘ফোরাম ফর সিভিল রাইটস, করিমগঞ্জ’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সভাপতি বিনোদলাল চক্রবর্তী ও সম্পাদক সুব্রতকুমার পাল বলেন, আসামের আপামর জনগণ, বিশেষতঃ ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত প্রামাণ্য নথিপত্র দাখিল করে এবং বারবার দূরদূরান্তে ভেরিফিকেশনে উপস্থিত থেকে অনেক শ্রম, অর্থ ব্যয় করে এবং হেনস্থার স্বীকার হয়ে নিজেদের নাম চূড়ান্ত এনআরসিতে অর্ন্তভুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য সরকারেরও প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় ছাড়াও শিক্ষক সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তাদের শ্রমদিবস আনুমানিক ছয় বছর ধরে ব্যয় হচ্ছে। এতে স্কুলে শিক্ষা প্রদান সহ রাজ্যের উন্নয়নের কাজ ব্যহত হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের আদেশে চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয় ২০১৯ এর ৩১ আগষ্ট। সেই চূড়ান্ত এনআরসি থেকে ১৯ লক্ষাধিক মানুষ বাদ পড়েছেন, যার প্রায় সবাই ভারতীয় নাগরিক।

প্রক্রিয়াগত নানা কারণে, আমলাতান্ত্রিক গাফিলতির ফলে এবং কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতমূলক নিয়ম ও মানসিকতার জন্য অনেক স্থায়ী বাসিন্দা, প্রকৃত ভোটার তথা প্রকৃত নাগরিক চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। প্রকাশিত এনআরসিতে বিদেশিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ অবস্থায় বিশ মাস পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ও তত্বাবধানে চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের পর সেই গোটা প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে পারেন না বর্তমান রাজ্যসমন্বয়ক হিতেশ দেব শর্মা, এটা তার এক্তিয়ারের বাইরে। আরজিআই, বা কেন্দ্রীয় সরকার, এমনকি রাজ্য সরকারের বিনা অনুমতিতে সুপ্রিম কোর্টে এমন আবেদন তিনি করতেই পারেন না।

উল্লেখ্য, আগে রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলাকে নোডাল অফিসার হিসাবে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়ার পর তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও আর আগের মত ডে-টু-ডে তত্ত্বাবধান করছে না। অতি সামান্য কিছু উদাহরণ, কিছু অনুমান ভিত্তিক সন্দেহ, কিছু প্রক্রিয়াগত ত্রুটির (তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিগত ধারণায়) উল্লেখ করে হীতেশবাবু যে আবেদন করেছেন আদালত সেই আবেদন খারিজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মনে রাখা উচিত, আসাম রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার ড্রাফট এনআরসি পুনরায় ভেরিফিকেশন করার দাবি জানিয়েছিল, সেই দাবি খারিজ হওয়ার পর চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে।

হীতেশ দেবশর্মাও কিন্তু এমন কোনও প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিতে পারেননি যার মাধ্যমে তিনি নির্ভুল এনআরসি করতে চান। তাঁর নির্ভুল এনআরসির অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে মূলত আরও বেশি লোককে বাদ দেওয়া। সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য সরল প্রক্রিয়ার বিপরীতে আসামের জন্য কঠিন তথা বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়েছে এনআরসি প্রস্তুতকরণের কাজ। যে ফেমিলি ট্রি ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে অনেক আবেদনকারীর নাম বাদ পড়েছে, সেই ফ্যামিলি ট্রির বিষয়টি রুলেই নেই।

যারা ড্রাফট এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন কিন্তু অন্তর্ভুক্তির দাবিপত্র জমা দেননি তাদেরকেও ড্রাফট থেকে নাম বাদ পড়ার কারণ উল্লেখ করে, দাবিপত্র দাখিল না করার কারণে চূড়ান্ত এনআরসিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য পুনর্বিবেচনা করা যায়নি লিখে রিজেকশন অর্ডার দেওয়া উচিত যাতে তারাও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিলের সুযোগ পান। এমনকি যারা ২০১৫ থেকে আসামে স্থায়ীভাবে থাকেন কিন্তু এনআরসিতে আবেদন করেননি বা করতে পারেননি, তাদের আবেদনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার ব‍্যবস্থা করা দরকার। নাহলে এই এনআরসি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।

১৯ লক্ষাধিক নাম বাদপড়াদের দ্রুত নাম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা না করে, তাদের ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে৷ তাঁরা আধার কার্ড বানাতে পারছেন না, পাসপোর্টের জন্য বা অন্য কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশনে তাদের হেনস্তা ভোগ করতে হচ্ছে। ডি-ভোটারদেরও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, দীর্ঘদিন যাবত তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ডি-ভোটার, এনআরসি ইত্যাদির মাধ্যমে বারবার ভাষিক সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ অধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা হচ্ছে। তদুপরি, আসামের ভাষিক সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন ভাবে যেমন স্কুলের পাঠ্যবিষয় সূচিতে পরিবর্তন এনে ভাষিক অধিকারের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। ফোরাম ফর সিভিল রাইটস, করিমগঞ্জ এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker