Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিলচরের বন্যায় প্রশাসন চূড়ান্ত ব্যর্থ, বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
ওয়েটুবরাক, ৯ জুলাই : শিলচর শহর সহ গোটা কাছাড় জেলায় গত মে ও জুন মাসের প্রলয়ঙ্করী বন্যা সাধারণ মানুষের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে, জুন মাসের বন্যাকে ১৯২৯ সালের ( ১৩৩৬ বাংলা) ভয়াবহ বন্যার সাথে তুলনা করা হচ্ছে।
বন্যার এমন ভয়াবহতার কারণ অনুসন্ধানে শিলচর শহরের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, মে মাসের বন্যায় বরাক নদীর জল বেতুকান্দির মহিষাবিলের অৰ্ধসমাপ্ত স্লুইস গেটের বাঁধ ও সোনাবাড়িঘাটের অর্ধসমাপ্ত সেতু সংলগ্ন বাঁধ ভেঙে এবং ভাগাডহর, উত্তর কৃষ্ণপুর, অন্নপূর্ণাঘাট, শিববাড়ি রোড ইত্যাদি স্থানের বাঁধ উপচে শহরে প্রবেশ করে নীচু এলাকা প্লাবিত করে। মে মাসের বন্যার সময়ে বেতুকান্দির বাঁধ কেটে ফেলার অভিযোগ পুলিশের নিকট জলসেচ বিভাগের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছিল। মে মাসের বন্যার জল নেমে যাওয়ার পর বেতুকান্দির ভাঙা বাঁধের সারাই ও জলসেচ বিভাগের অভিযোগের তদন্ত কোনটিই জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়নি।
জুন মাসে পুনরায় বরাক নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইক বাজিয়ে জনগণকে উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার আবেদন জানানো ছাড়া কোন প্রস্তুতিই ছিল না। ফলে ১৯ জুন মধ্যরাত থেকে ২০ জুন সারা দিন বেতুকান্দি ও সোনাবাড়িঘাটের ভাঙা বাঁধ হয়ে এবং মোট ছয়টি স্থানে বরাকের জল বাঁধ উপচে প্রবল বেগে প্রবেশ করে ফাটক বাজার সহ শহরের আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেয়। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেও অসুস্থ, বৃদ্ধ, শিশুদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার মতো নৌকা মেলেনি। বরাকের প্রবল স্রোত শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার ফলে সাধারণ নাগরিকের পক্ষে ঘর থেকে বেরিয়ে খাদ্য, পানীয়জল, ঔষধ সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল৷
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. তপোধীর ভট্টাচার্য, সাধন পুরকায়স্থ, নির্মল কুমার দাস, সুব্রত চন্দ্র নাথ, দীপঙ্কর চন্দ, আব্দুল হাই লস্কর, বিশ্বজিত দাস, জয়দীপ ভট্টাচার্য, কল্পার্ণব গুপ্ত, হিল্লোল ভট্টাচার্য, তমোজিৎ সাহা, অলিউল্লাহ লস্কর, নিরঞ্জন দত্ত, মিহির নন্দী, সুকল্পা দত্ত, কমল চক্রবর্তী, শ্যামদেও কুর্মী, মানস দাস, ডা. এম শান্তি কুমার সিংহ, ভবতোষ চক্রবর্তী, নাজির হোসেন মজুমদার, নেহারুল আহমেদ মজুমদার, ঋষিকেশ দে, পরিতোষ চন্দ্র দত্ত, আদিমা মজুমদার, কৃষাণু ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর চন্দ, দেবজিত গুপ্ত, তপোজ্যতি ভট্টাচার্য, পাভলব লস্কর, মাধব ঘোষ প্রমুখ এক প্রচারপত্রে অভিযোগ করেন, তখন শহরের নাগরিকদের মধ্যে পানীয় জল, শিশুখাদ্য, ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত প্রশাসন করতে পারেনি।
তাঁদের কথায়, প্রশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতা, সরকারের অবহেলা ও উদাসীনতা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সীমাহীন দুর্নীতিকে আড়াল করতে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার পরিবর্তে কতিপয় বিশেষ সম্প্রদায়ের জনগণের ঘাড়ে বন্যার দোষ চাপিয়ে ‘মানব সৃষ্ট’ বন্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়। ফলে উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এতে আস্কারা পেয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্যাকে ‘জেহাদ’ বানিয়ে প্রচারে লেগে যায়। বন্যা পরবর্তী সময়ে যখন জাতি – ধর্ম – ভাষা- বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে কাজ করার সময় তখনই এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কার্যকলাপ পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রচারপত্রে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনেরা বাঁধ ভাঙা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান৷ তাঁরা বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ দফতরকে মানবতাবিরোধী উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর জঘন্য কার্যকলাপ কড়া হাতে দমন করা ও দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্ৰদান করতে হবে৷
পাশাপাশি জেলার শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে চরম সংকটের মুহুর্তে ঐক্যবদ্ধ থেকে পুনঃনির্মাণের স্বার্থে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।